29/03/2024 : 9:26 PM
আমার বাংলাউত্তর ২৪ পরগনাদক্ষিণ বঙ্গ

আমফান রিলিফ নেটওয়ার্কের চোখে উত্তর ২৪ পরগনায় আমফানের বিভীষিকা

বিশেষ প্রতিবেদনঃ উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দিকে আমফান রিলিফ নেটওয়ার্ক-এর যে টিমটি গেছিলো, গত রবিবার রাতে তারা কলকাতায় ফিরেছে। অন্য আরেকটি টিম দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার দিকে গেছিলো। তারাও ফিরেছে। রিলিফ-মেটিরিয়াল বাবদ দুটি টিম আজ মোট ১লক্ষ ৫হাজার টাকা খরচ করেছে।

উত্তর ২৪ পরগনার টিমটি হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ হয়ে প্রথমে যায় সুন্দরবনের অন্যতম প্রত্যন্ত দ্বীপ যোগেশগঞ্জ-হেমনগরে। এই দ্বীপের সরদারপাড়া ঘাটের কাছে মাধবকাঠি অঞ্চলটিতে রায়মঙ্গলের জল ঢুকেছে ব্যাপক ভাবে। বন্যা-পরিস্থিতিতে রয়েছেন প্রায় ২৫০টি পরিবার।

ফেরার পথে হিঙ্গলগঞ্জ-এর লাগোয়া রূপমারী এলাকা থেকেও সঙ্কটগ্রস্থ মানুষের খবর আসে। সময়ের অভাবে গ্রামের ভেতরে ঢোকা যায়নি, তবে আঞ্চলিক মানুষদের থেকে জেনে ৫০-৬০টি পরিবারের একটি লিস্ট বানানো হয়েছে, যাঁদের পাশে দ্রুত দাঁড়ানো প্রয়োজন।

সব থেকে খারাপ অবস্থা চোখে পড়েছে চকপাটলী, মহিষপুকুর, পাটলি খানপুর অঞ্চলটিতে। মাটির ঘর-বাড়ি ভেঙেছে। বিস্তীর্ন এলাকা জলের তলায়। বহু মানুষ উঁচু রাস্তার ওপর অথবা ফ্লাড-সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ৪০০-৫০০ পরিবারের পাশে এখুনি দাঁড়ানো প্রয়োজন।

আঞ্চলিক মানুষদের সাথে আলোচনা করেই চাল, ডাল, চিঁড়ে, চিনি, তেল, আলু, পিঁয়াজ, বাচ্চাদের জন্য গুঁড়ো দুধ ইত্যাদি একটি করে প্যাকেট পরিবারগুলির কাছে কাল-পরশুর মধ্যেই পৌঁছে দেওয়া হবে। এই টিমের কাছে ৪৫ হাজার টাকা মতো ছিলো। আজকে সেটা খরচ করা হয়েছে।  আগামীদিনে খুব শীঘ্রই আবার তারা যাবেন। প্রথম দফায় আনুমানিক খরচ হবে সব মিলিয়ে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা।

আমফান রিলিফ নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় টিমটা গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসবায়। গোসাব ব্লকটা বেশ কয়েকটা দ্বীপ নিয়ে তৈরি। এই ব্লকের অন্ততঃ চারটে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে … পুঁইজালি, জটিরামপুর, রানীপুর, মন্মথনগর। আমাদের টিম চুনোখালী হয়ে ভায়া সম্ভুনগর মন্মথনগর যেতে পেরেছিল। গোটা পথটা যাওয়ার জন্যে গাড়ির রাস্তা নেই। নদি পেরোতেই হয়। ফলে যাতায়াতে সময় লাগে বিস্তর। সেই কারণেই আর অন্য অঞ্চলে যেতে পারেনি এই টিমটা।

মন্মথনগরে বাঁধ ভেঙেছে এক কিলোমিটার জুড়ে। জোড়াতালি দিয়ে বানানো বাঁধ। ভাঙার পর তার কঙ্কালসার চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছিলো। প্রায় ৬ হাজার বিঘে জমি জলমগ্ন। মানে নোনাজলের তলায়। ফসল নষ্ট হয়েছে, আগামী কয়েকবছর ফসল হবে না। গরু বাছুর মারা গেছে। পুকুর খালের মাছ মরে ভেসে উঠছে ব্যাপকহারে। আনুমানিক ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। নদীর ঠিক পাড়েই যাদের বাস তাদের সর্বস্ব গেছে। সে সংখ্যাটাই ৫০-৬০ জনের আশপাশে হবে। যেহেতু ওই এলাকায় কোনো ফ্লাড সেন্টার নেই, তাই তাদের যাওয়ার কোনো জায়গাও নেই। ঝড়ের রাতে একটা সরকারী ফার্ম হাউসে তারা সাময়িক আশ্রয় নিয়েছিল। রাতে খিচুড়ি খাইয়েছিল পঞ্চায়েত। ব্যাস এটুকুই। এখনো ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়নি সরকারপক্ষ। এছাড়াও যাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়নি তাদের অন্যান্য ক্ষতিও কম নয়। গাছ পড়েছে, চাল উড়ে গেছে, নৌকো ডুবে গেছে, দোকানের জিনিস নষ্ট হয়েছে। কারো কারো ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার।

গোসবার স্থানীয় পরিচিত কিছু মানুষের হাতে আপাতত কাজ চালানোর জন্য সঙ্গে থাকা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছে আমফান রিলিফ নেটওয়ার্কের টিম। ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্ট বানিয়ে নিয়ে আবার  শুরু করা হবে রিলিফের কাজ। আশপাশের দ্বীপগুলোতেও যাওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।


(তথ্যসূত্রঃ Amphan Relief এর Samik এর টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।)

Related posts

মেমারিতে কৃষক বিরোধী অর্ডিন্যান্স বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

E Zero Point

আন্তর্জাতিক ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে মুখ উজ্জ্বল করলো মেমারির ক্ষুদেরা

E Zero Point

মেমারির ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষীদের ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাইকোর্টেরঃ জেনে নিন ক্ষতিপূরণ পেতে কি ভাবে আবেদন করবেন

E Zero Point

মতামত দিন