জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০:
টানা ১৫ দিন লড়াইয়ের পর মৃত্যুর কাছে হার মানতে বাধ্য হলেন উত্তরপ্রদেশের হাথরাস এলাকার ১৯ বছরের দলিত তরুণী মনীষা বাল্মিকী। গণ ধর্ষণের পর উনিশ বছরের এক তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় দেশ জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১৪ই সেপ্টেম্বর মায়ের সাথে বাজরা ক্ষেতে কাজ করছিলেন মনীষা। জমির দুই প্রান্তে ছিলেন মা ও মেয়ে। চারজন উচ্চবর্ণের ধর্ষক এসে মনীষার গলায় ওড়নার ফাঁস জড়িয়ে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। ধর্ষণের পর মনীষাকে ধর্ষকরা খুন করার চেষ্টা করে। তার হাত ও পা ভেঙ্গে ফেলা হয়, জীভ অর্ধেক কেটে নেওয়া হয়, সারা শরীর রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়ে মনীষাকে। ডাক্তারদের কথায় মনীষার শরীরের নিম্নভাগ প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিল।
১৪ সেপ্টেম্বর ধর্ষিত হওয়া ওই তরুণী হাসপাতালে ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আজ সকালে মারা যান।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার ধর্ষককে। যদিও তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
ধর্ষণের পর গুরুতর অবস্থায় তরুণীকে দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধর্ষকদের নির্যাতনে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। দুই সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও তাকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে এ মৃত্যুর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। দলিতরা দেশটি জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
ধর্ষিতার ভাই জানান, ঘটনার প্রথম ১০ দিন পুলিশ দোষীদের গ্রেপ্তার করেনি। তাকে মৃত ভেবে রেখে গিয়েছিল তারা। প্রাণ ফিরে পেতে ১৪ দিন লড়াই করেছে সে।
মৃত তরুণীর মা জানান, ‘ঘাস কাটতে গিয়েছিলাম। ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যেই ছিলাম আমি। তবে, ওর চিৎকারের আওয়াজ পায়নি। না হলে ওকে বাঁচিয়ে নিতে পারতাম।’
পুলিশ জানায়, নিজের গ্রামেই পরিত্যক্ত জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে তরুণীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ওই তরুণী নিম্নবর্ণের তফশিলী সম্প্রদায়ের।
বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উত্তরপ্রদেশে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা বরাবরই নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে দলিতরা।
ধর্ষণের তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপির রাজ্য সরকার। উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও দলিত রাজনীতিবিদ মায়াবতী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের উচিত দ্রুত ভুক্তভোগীর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং দোষীদের শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করা।’
আরেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবও রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নারীর ওপর অপরাধের বিষয়ে সরকার অনুভূতিশূন্য।’
এদিকে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন দলিত রাজনীতিবিদ ও সংগঠক চন্দ্রশেখর আজাদ। এ মৃত্যুর ঘটনায় তার দল পুরো দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।