29/03/2024 : 12:35 AM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানমেমারি

ধর্ষকের শাস্তির অপেক্ষায় মেমারির নির্ভয়া

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, বিশেষ প্রতিবেদন, মেমারি,  ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০:


গত অক্টোবর মাসে মেমারির এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বর্ধমানের মহিলা থানা তদন্ত শুরু করার পরে মেমারির অভিযুক্ত যুবকের পলায়নের দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি দীর্ঘকাল যাবত। মেমারির ঐ মহিলা, থানা ও তদন্তকারী অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন যে তিনি প্রশাসনের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছেন। কিন্তু তার পরেও এতদিনেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করায় তিনি ভীত ও চিন্তিত। এই কিছুদিনে তাকে বেশ কিছু সামাজিক স্তরের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে। এছাড়া তার কাছে অনেক অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে বিরক্ত করা হয়েছে, বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে, এমনকি ভয়ও দেখানো হয়েছে। প্রশাসন ও ঘনিষ্ঠদের পরামর্শে তিনি বিষয়গুলি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তবে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ঐ মহিলা।

গোপন সূত্রের দ্বারা প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী অভিযুক্ত যুবকের অতীতেও নারীঘটিত বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে যার সম্পর্কে মানুষজন অবগত, এমনকি মেমারি শহরে প্রচারিত একটি আপত্তিকর এমএমএসের ঘটনাতেও এই অভিযুক্তের নাম সরাসরিভাবে উঠে আসে। অভিযুক্তের পরিচিতমহলের বক্তব্য অনুযায়ী অভিযুক্তের বিয়ের কথা প্রায় ঠিক হয়ে থাকা শোনা যাওয়ার পরেও অন্য একাধিক মহিলার সাথে স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের কথা জানা যায়। “অভিযোগের সত্য মিথ্যা কোর্টে প্রমাণিত হবে, কিন্তু অভিযুক্তের সম্পর্কে যতটা জানি, তাতে সে শাস্তি পাক বা না পাক, সে ছাড়া পাওয়ার পরে ঐ মহিলার সাথে অতীতের থেকেও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা”, এমনটাই বক্তব্য স্থানীয় এক বাসিন্দার।

সাধারণত এরকম একটি সংবেদনশীল কেসের ক্ষেত্রে প্রশাসনের যা ভূমিকা থাকে, তার পরেও কিভাবে ঐ যুবক বাড়িতে পুলিশ আসার সাথে সাথেই পালিয়ে গিয়ে এতদিন ধরে পলায়িত থাকতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ আসার পরের দিন অভিযুক্ত কিছুজনের সাথে শলা পরামর্শ করে তারপর শহর ছাড়েন বলে শোনা যায়। এছাড়া যেভাবে ঐ মহিলাকে ভুয়ো ফোন কলের দ্বারা এবং বাড়িতে লোক পাঠিয়ে বিরক্ত ও ভয় দেখানো হচ্ছে, তাতে তাঁর ও তাঁর পরিবারের সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। ঘটনাটির একজন সাক্ষীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “আমাদের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনোরকম রাজনৈতিক চাপ দেওয়া হয়নি।” এমনকি স্থানীয় নেতারা অপরাধী অপরাধ করে থাকলে শাস্তি পাক, এমনটাই চেয়েছেন সবাই বলে জানিয়েছেন তিনি। “তবে ভবিষ্যতেও যেন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না হয়, তার জন্যে জানিয়ে রাখি যে আমি বা ঐ নিগৃহীতা মহিলা কোনোরকম রাজনীতি করছি না, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্তও নই। আমরা ধর্মীয় ভেদাভেদও মানি না। অপরাধী যেইই হোক, যে ধর্মেরই হোক, সে শাস্তি পাক। ভিকটিম যেইই হোক, তার সুবিচার পাওয়া অধিকার।”

যেভাবে একটি মেয়ের বাইরে বেরোনো, রাত অবধি কাজকর্ম করে বাড়ি ফেরা বা পোশাকের উপর মেয়েটি “ধর্ষণের যোগ্য” কিনা বিচার করে আদতে ধর্ষণকেই জাস্টিফাই করা হয়, ডিভোর্সের জন্যে ছেলেটিকে নয় মেয়েটিকেই দায়ী করা হয় কিছু না জেনেশুনেই, মেয়েটির ছেলেবেলার বন্ধুদের মধ্যে কতজন ছেলে এবং এখনো তাদের সাথে মেয়েটি রাস্তায় একা বেরোয় কিনা তার উপর মেয়েটির চরিত্র বিচার করা হয়, তাতে করে ঐ মহিলাকে এক্ষেত্রেও অনেক লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে অভিযুক্তের অতীতের ঘটনাগুলি মেমারির মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার স্বার্থে, এই আশঙ্কাও থেকেই যায়।  ভারতে প্রতিদিন প্রায় একশোর কাছাকাছি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও মেয়েরা সামনে এসে বিচার চাইতে ভয় পায় বা চাইলেও বিচার পায়না হয়তো এ কারণেই।

তবে অভিযুক্ত মেমারির একটি পরিচিত এনজিও-র সাথে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও ঐ এনজিও-র থেকে অভিযুক্তের প্রতি সম্ভবত কোনো সমর্থন দেওয়া হয়নি, এবং সুবিচারের প্রতি কঠোর থাকায় ঐ এনজিও এবং মেমারির সাধারণ মানুষের সুবিচার চাওয়ার মানসিকতাকে ঐ নিগৃহীতা মহিলা ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অভিযুক্তের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবী করলেও, মহিলার দিক থেকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের কোনো কারণ দেখতে পাওয়া যায়না। পাশাপাশি অভিযুক্তের বাড়ির লোকের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ঐ মহিলা বলেছেন, “অভিযুক্তের শাস্তির দাবী এবং আমার ও আমার বাড়ির লোকের পাশে থাকার সাথে সাথে আমি অভিযুক্তের নিরীহ বাড়ির লোকের পাশে থাকার জন্যেও অনুরোধ করবো, যারা কোনো দোষ করেননি। তবে শোষিতাদের মৃত্যুর পরে মোমবাতি মিছিল না করে বরং প্রতিবাদের আগুন তার আগেই জ্বলুক, কারণ মোমবাতি মিছিলে ধর্ষককেও হাঁটতে দেখেছি আমি।”


বিঃ দ্রঃ – সেক্সুয়াল হ্যারাসমেনটের শিকার কোনো মহিলার নাম, ঠিকানা, পরিচয় প্রকাশ্যে আনা আইনত অপরাধ এবং আদর্শগতভাবেও অন্যায়। জিরো পয়েন্ট ইহাকে সমর্থন করে। জিরো পয়েন্ট প্রথম খবরে নয়, বরং খবরের শেষ অবধি থাকতে চায়।


 

Related posts

স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাঙ্গ মূর্তি স্থাপন মেমারিতে

E Zero Point

সরকারী প্রকল্পের প্রচারাভিযান পূর্বস্থলীতে

E Zero Point

গুড়াপে বিদ্যুৎপিষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ২৩ বছরের যুবকের

E Zero Point

মতামত দিন