29/03/2024 : 6:33 PM
আমার বাংলাজীবন শৈলীদক্ষিণ বঙ্গধর্ম -আধ্যাত্মিকতাপূর্ব বর্ধমানমঙ্গলকোট

সন্ন্যাসী গোঁসাইজীর মহোৎসব মঙ্গলকোটে

জিরো পয়েন্ট নিউজ – পরাগ জ্যোতি ঘোষ, গুসকরা, ১৬ জানুয়ারি ২০২১:


শুক্রবার মহা সমারোহে মঙ্গলকোটের জয়পুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো সন্ন্যাসী গোসাই জির মহোৎসব। অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ হাজার ভক্ত প্রসাদ গ্রহণ করেন। জয়পুর, রশুনিয়া, নারায়ণপুর, বরুলিয়া, জালপাড়া প্রভৃতি গ্রাম থেকে এবং আরও দূর-দূরান্ত থেকে ভোর থেকেই মানুষের ঢল নামে গোঁসাইজী দর্শনে।

জয়পুর গ্রামের সীমান্তে মাঠের মাঝখানে সন্ন্যাসী গোসাই এর নিবাস স্থল । জিও পতি বৃক্ষরূপে তিনি অধিষ্ঠান করছেন সেখানে। আর সেই জিও পতি বেষ্টন করে আছে নিম এবং তেতুল বৃক্ষ । পাশে ফণীমনসার উপস্থিতি। গ্রামের রায় পরিবারের সন্তান শিক্ষক অনুপম রায় জানান, গোঁসাইজী নানা নাম কথা । প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই সন্ন্যাসীর গোসাইএর নিবাস স্থল ।নীল আকাশের নিচে তিনি বিরাজমান। কোন মন্দির নেই ।বর্তমান সেবায়েত ব্রজেশ্বর দাস বৈরাগ্য, রামকৃষ্ণ দাস বৈরাগ্য ,করুনাময় দাস বৈরাগ্য বংশ পরম্পরায় সেবা করে আসছেন সন্ন্যাসীর। ওই পবিত্র স্থানে সমাধি আছে এবং তিনি জীবন্ত রূপে বিরাজ মান।

গ্রামের আর একজন শিক্ষক জীবন কুমার পাল জানান বাবা ভীষণ জাগ্রত ।একবার রায় পরিবারের থেকে গোঁসাইজী পাশের জমিতে ইট কাটার ব্যবস্থা করা হয় ।সেখানে দূর থেকে আসা শ্রমিকরা ইট কাটার কাজ শুরু করে ।রাত্রিকালে তারা সেখানে রান্না করে নানা আমিষ খাবার কিন্তু সে খাবার তারা খেতে পারেনা। কোন এক অজানা আতঙ্কে তারা সেই রাত্রি রায় বাড়িতে ছুটে চলে জানায় তারা আর সেখানে কাজ করতে পারবে না। তাদের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্কের কালো ছায়া ।

আরও একটি ঘটনার কথা বলেন পাল বাবু ।পাশের গ্রাম সালন্দায়থাকতেন ডাক্তার দু কড়ি রায় ।তিনি জয়পুর পেরিয়েমাঠে মাঠে হাঁটা পথে বরুলিয়ায় যেতেন ডাক্তারি করতে। একদিন রাত্রিকালে ফেরার পথে তিনি যখন ফিরছেন ভুলে গেলেন গোঁসাইজী স্থানে জুতো খোলার কথা। আর বাবার তখন গাঁজা সেবনের সময় ।গাঁজার গন্ধ নাকে পেয়েছিলেন। কিন্তু জুতো খুলতে ভুলে গিয়ে জুতো পায়ে চলতে লাগলেন ।ব্যাস আর যায় কোথা ।হঠাৎ দেখলেন এক জটাধারী রুদ্র মূর্তি ত্রিশূল হাতে তাকে তাড়া করেছেন ।রায় বাবু ছুটতে ছুটতে রাই বাড়িতে এসে এক কলসি জল খেয়ে ধাতস্থ হন। পরবর্তীকালে সন্যাসিতলার পাশ দিয়ে যাবার সময় এই ভুল করেননি তিনি আর বাবাও তাকে কখনো ভয় দেখান নি।

সন্ন্যাসী বাবার পুজো কিন্তু কোনো ব্রাহ্মণ করেন না। এই পুজো সম্পন্ন হল বৈষ্ণবদের দ্বারা। এখানে কোন ঘন্টা বা শাঁখ বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ।তুলসী মঞ্জুরি ,দুধ আর গাঁজা বাবার প্রিয় উপাচার। ভক্তদের উপহার ঘোড়া ও খেলার ফুল। আর ভক্তদের জন্য হয় অন্নভোগ। সঙ্গে থাকে দু’ধরনের তরকারি, তেতুলের টক, পায়েস, বোঁদে।

একবার নাকি অন্ন ভোগ বাদ দিয়ে খিচুড়ি প্রসাদ করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় খিচুড়ির মধ্যে মাছের কাঁটা এবং কেউ সে ভোগ গ্রহণ করতে পারেননি ।আসলে বাবার বাইরে যাওয়া যাবে না । অন্নভোগ ই করতে হবে এবং সর্বপ্রথম বৈষ্ণব সেবা পাবে ।তারপর জনসাধারণের জন্য ভোগ নিবেদন করা হয় ।

সারা গ্রামের মানুষজন এবং পাশাপাশি গ্রামের মানুষজন দের দ্বারা সেই পরম কার্য সমাধা হয় ।তিন পাড়ায় সবজি নামিয়ে দেওয়া হয়। এবং গ্রামের মহিলারা সেই সবজি কেটে দেওয়ার পর গ্রামের ক্লাবের ছেলেরা সেগুলি বাবার স্থানে নিয়ে যান। সেখানেই রান্না হয় এবং ক্লাবের ছেলেরাই তা পরিবেশন করেন। অনুপম বাবু আরো জানান মূলত ব্রজেশ্বর দাস বৈরাগ্য বর্তমান বাবার সেবা ইত রূপে কার্য সমাধা করছেন। প্রত্যেক পূর্ণিমা এবং শনি মঙ্গলবার বাবার স্থানে পূজা হয়। অনেক ভক্তের মানসিক থাকে। তারা আসেন। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল ভক্তের আরাধ্য সন্ন্যাসী গোঁসাইজী তাই চিরদিন থেকে যাবে ধরণীর বুকে।

Related posts

আবাস যোজনা – ভাতারে পোস্টার পড়ল প্রধান ও আশাকর্মীর বিরুদ্ধে

E Zero Point

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী

E Zero Point

পথশ্রী অভিযানের রাস্তা উদ্বোধন মেমারি দলুইবাজারে

E Zero Point

মতামত দিন