23/04/2024 : 7:59 PM
আমার বাংলা

ডবল ইঞ্জিনের গল্প


জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

একদিকে ভারতের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিজেপির প্রায় অধিকাংশ প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতা সহ বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে এক শ্রেণির মিডিয়া হাউস ও ব্যর্থ বিরোধী নেতাদের তথ্যহীন নির্লজ্জ অন্ধ বিরোধিতা – সব মিলিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এক অসাধারণ দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। একটা রাজ্য দখলের লক্ষ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘নিত্যযাত্রী’ হয়ে উঠেছেন- এই দৃশ্য স্বাধীন ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে আগে কখনোই ঘটেনি।


যেকোনো রাজনৈতিক দল ভোটযুদ্ধে জয়লাভের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে, দলীয় কর্মীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যে প্রচারে যাবে এটা স্বাভাবিক। যতই তারা দলের মুখ হোক না কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সব কাজ ফেলে রাজধানী ছেড়ে দিনের পর দিন একটা রাজ্যে প্রচারে ব্যস্ত থাকছেন নৈতিক দিক দিয়ে এটা কতটা ঠিক? এটা ঠিকই বর্তমান ‘হাইটেক’ যুগে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়। তাছাড়া এটা কি ধরে নিতে হবে মমতার জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত একক ক্ষমতা দেশের প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাই এবং রাজ্যে বিজেপির কোনো যোগ্য নেতা নাই?


এবার বাংলা দখলের লক্ষ্যে বিজেপির স্লোগান ‘ডবল ইঞ্জিন’ এর হাত ধরে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার সংকল্প। অথচ সাত বছর ক্ষমতায় থেকেও সোনার ভারত কিন্তু গড়তে পারেনি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে উন্নয়নের রথের চাকা সক্রিয় থাকে। এতো তৃণমূলের বিরোধী শূন্য পঞ্চায়েত গড়ার স্বপ্নের মত। এই ভাবনা ভারতের ফেডারেল সরকারের ভাবনার পুরোপুরি বিরোধী। তাছাড়া দেশের প্রধানমন্ত্রী (বা কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী) তো প্রতিটি মানুষের। সুতরাং উন্নয়নের প্রশ্নে সেখানে দলীয় সংকীর্ণতা প্রাধান্য পাওয়া ঠিক নয়।

যাইহোক বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের হাত ধরে সোনার বাংলা গড়ার সংকল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই ফিসফিসানি শুরু হয়েছে। অনেকের বক্তব্য বিজেপি তো ডজনখানেক রাজ্যে একক ক্ষমতায় আছে। সেগুলো কি আদৌ ‘সোনার’ হয়েছে? দলীয় ইস্তেহারে মহিলাদের জন্য একাধিক সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা ও পরিবহনের জন্য মেয়েদের কোনো খরচ লাগবেনা। রেল তো পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। তাহলে সেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে করে দিলে ইস্তেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য হতো। এর জন্য বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি বারবার স্বপ্নের গুজরাট মডেলের কথা বলা হলেও শিল্প ছাড়া গুজরাটের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু মৃত্যুর হার ইত্যাদির ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা নীরব। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কেন ট্রাম্পের গুজরাট আগমনে দেওয়াল দিয়ে বস্তি এলাকা আড়াল করতে হলো? শুধু গুজরাট নয় অন্যান্য ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যের উন্নতির ব্যাপারেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নীরব। আরও মজার ব্যাপার হলো ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির একটাও বিজেপি শাসিত রাজ্যে কার্যকর নয়।


বাংলায় বিজেপির আঠারো জন সাংসদ। এদের অন্যতম হলেন আসানসোলের সাংসদ। অথচ আসানসোল শিল্পাঞ্চলের রুগ্ন কেন্দ্রীয় সরকারের কারখানাগুলো নিয়ে শ্রমিককল্যাণে বা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে সাত বছরেও তিনি কোনো অর্থবহ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেননি। একই কথা প্রযোজ্য উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলো সম্পর্কে। সুযোগ পেয়েও যদি সাংসদরা কেন্দ্রীয় সম্পত্তি সামলাতে না পারে তাহলে রাজ্য সামলাবে কি করে? প্রশ্ন উঠবেই।


সাত বছর ধরে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে। অথচ আজও বাংলায় নির্ভরযোগ্য নেতা গড়ে তুলতে পারলনা। নেতার জন্য দল ভাঙানোর খেলায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বিভিন্ন এজেন্সির ভয় দেখিয়ে অথবা অর্থের লোভ দেখিয়ে অন্য দল থেকে হয়তো নেতা আনা যেতে পারে কিন্তু তাতে আদৌ কি কোনো দীর্ঘ মেয়াদি লাভ হবে? বর্তমানে যারা বিজেপির হয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাদের একটা বড় অংশ তৃণমূল আগত। কেউ দীর্ঘদিন রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন, কেউ বা বিধায়ক। কারও বিরুদ্ধে আছে টেট, চিটফাণ্ড সহ বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগ। এক সময় এইসব নেতাদের দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপি গলা ফাটিয়েছে। আজ এদের নিয়ে কি করে দূর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়বে? তাছাড়া ভোটে জয়লাভের পর তাদের কেউ কেউ আবার নিজেদের পুরনো দলে ফিরবেনা তারই নিশ্চয়তা কোথায়?


গত সাত বছর ধরে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে। অধিকাংশ রাজ্য হয় একক ক্ষমতায় বিজেপির দখলে অথবা শরিকদের সঙ্গে যৌথ দখলে। ইস্তেহারে গত সাত বছরে কেন্দ্র সহ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বেকারত্ব দূরীকরণে কি ভূমিকা নিয়েছে অথবা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির উন্নয়ন সম্পর্কে বিজেপি কোনো সুস্পষ্ট তথ্য দিচ্ছেনা। অথচ যেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এই রাজ্যের সমালোচনা করছে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট রাজ্যের পক্ষে যাচ্ছে।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে নিজ নিজ শাসিত রাজ্যে ব্যর্থ বিজেপি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন ফেরি করে পশ্চিমবঙ্গ দখলের স্বপ্ন দেখছে। কি হবে সেটা ২ রা মে পরিষ্কার হবে।


তবে ভোটের ফল যাইহোক না কেন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার কাছে দেশের তাবড় তাবড় নেতাদের জনপ্রিয়তা যে তুচ্ছ সেটা পশ্চিমবঙ্গের ভোট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ইতিহাসের পাতায় কিন্তু এটা লেখা থাকবে।

Related posts

মেমারিতে নকআউট ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল

E Zero Point

মঙ্গলকোটে উত্তেজনাঃ তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতিকে গুলি করে খুন দুষ্কৃতীদের

E Zero Point

কার্তিক পুজো নিয়ে সমন্বয় বৈঠক কাটোয়ায়

E Zero Point

মতামত দিন