“এই মাস্ক পরুন”
বাজখাঁই গলায় হুঙ্কার টা শোনা গেলো হলোধর বাবুর পিছন থেকে। থরথর করে কাঁপতে থাকলেন হলধর বাবু।
হয়েছে কি সাত সকালে খবর এলো গুড়াপে থাকা শালিপতিভাই এর দোকানে পূজো এবং সেই উপলক্ষে একটু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার প্রবল ইচ্ছা কোনোকিছু দিয়েই দমিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। মেয়েটা যদিও বারবার বারন করছিল এই অজুহাত দিয়ে যে তাঁর নাকি ৬৫ হলো, এই বয়সে বেশি বাইরে ঘুরতে নেই আর রিচ খাবার খেতেও নেই। এক ধমকি কে তুরি মেরে উড়িয়ে দিলেন তিনি।
“হুস, গাঁয়ে কোদাল চালিয়েছি রে। এককালে কিলো দেড়েক খাসি একা সাঁটিয়ে দিয়েছি। ওসব কিছুই হবে না আমার”
মেয়েটা ফের ঘ্যান ঘ্যান করতে লাগলো “অন্তত একটা মাস্ক তো কিনে নিয়ে যাও ওই তো মাত্র ১০/১৫ টাকা নেবে”
“মাস্ক, ওই কাপড় ছেঁড়া টা ১৫ টাকা দিয়ে কিনবো?”
সাইকেল নিয়ে মসাগ্রাম স্টেশনে চলে এলেন তিনি। তিনটে মাত্র স্টেশনের জন্য ১০ টাকার টিকিট কে সম্পূর্ন বাজে খরচ ভেবে বিনা টিকিটেই চেপে বসলেন ট্রেনে। আর সঙ্গে সঙ্গেই এই হুঙ্কার।
ঘামতে থাকলেন চিন্তায়। মাথায় এসে গেলো কদিন আগের সার্কুলার “মাস্ক ছাড়া ট্রেনে চাপলে ৫০০ টাকা জরিমানা” । ইশ, সামান্য কটা টাকার জন্য অতগুলো টাকা চলে যাবে। তার ওপরে টিকিটের ফাইন। বুক ফেটে কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইলো।
“নাক মুখ ঢাকুন সুস্থ থাকুন”
আবার সেই ডাক,একেবারে ঘাড়ের কাছেই। তবে এবার গলাটা একটু নরম।
কপালের ঘাম টা মুছে নাকে হাত চাপা দিয়ে পিছন ফিরে ক্ষমা চাইতে গিয়ে দেখলেন এক হকার ভাই মাস্ক বিক্রি করছেন।
“২০ টাকায় নিজেও সুস্থ থাকুন দেশকেও সুস্থ রাখুন”
আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে একটু হাসতে গিয়ে ঝরাম করে কেঁদেই ফেললেন তিনি। দরদাম করে ২০ টাকার মাস্ক ১৫ টাকায় কিনে নাক মুখ আর সন্মান বাঁচিয়ে নেমে পড়লেন ট্রেন থেকে। গুড়াপ স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেও আরো একবার শুনতে পেলেন সেই হাঁক “এই মাস্ক পরুন” ।
জিরো পয়েন্ট সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠাতে হলে ইমেইল করুন zeropointpublication@gmail.com অথবা ওয়াটসঅ্যাপ করুন 9375434824