19/04/2024 : 6:59 AM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানবর্ধমান

রাইস মিলের জলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ধান চাষি

জিরো পয়েন্ট নিউজ – কল্যাণ দত্ত, বর্ধমান, ৩ ডিসেম্বর ২০২১:


রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ এলাকার শংকরপুর মৌজা বলাবাটি মৌজা এবং আরিন মৌজা মিলিয়ে মোট তিনটি মৌজার প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা ধান জমি জলে ডুবে গেছে। চাষিদের মাথায় হাত জমির ধান জলে ডুবে থাকার কারণে।বুধবার সকাল ১০ টা নাগাদ ওই তিন মৌজার চাষিরা বেশ কিছু রাইস মিলের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে বলতে থাকেন অবিলম্বে ধানের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিক্ষোভের খবর শুনে শঙ্করপুরের বাসিন্দা তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব সভাপতি তথা জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি ছুটে আসেন এবং বিক্ষোভকারীদের সামাল দেন। অলোক কুমার মাঝি বলেন রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে প্রায় বছরই অল্পবিস্তর চাষীদের জমির ধান ক্ষতি হয়। কিন্তু এই বৎসর অকাল বর্ষণ এর মত ক্ষতি হয়েছে এলাকার ধান জমির। চাষিরা কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েতে বিষয়টি লিখিত জানান এবং সেই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েত।

এলাকায় ১৫ থেকে ২০ টি রাইস মিল আছে। তাদের পরিত্যক্ত জলেই এই অকাল বর্ষণ রূপে রূপায়িত হয়েছে এবং ফলস্বরূপ এলাকার চাষীদের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। রাইস মিলের পরিত্যক্ত জল নয়নজুলি র ওপর দিয়ে বয়ে যায়। কিন্তু নয়ানজুলি ভর্তি হয়ে থাকে রাইস মিলের আগরা, কচুরিপানা ও পাঁশ এর জন্য। রাইস মিলের মালিক বা অধিকাংশ সময়ই নয়নজুলি সংস্কার বা পরিষ্কার করে না। ফলস্বরূপ রাইস মিলের পরিত্যক্ত জল ধান জমির ওপর দিতে আরম্ভ করে। যদিও বুধবার রাইস মিলের পক্ষ থেকে জেসিপি দিয়ে নয়নজুলি পরিষ্কার করা হচ্ছে। বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা গোবিন্দভোগ ধান চাষ করেছিল। চাষিরা আবেদন করেছেন ক্ষতিপূরণের জন্য। বিষয়টি রাইস মিলের সঙ্গে আলোচনা করে চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করব। বিক্ষোভকারী চাষীদের নিয়ে আলোক কুমার মাঝি ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন কৈয়ড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শাজাহান মন্ডল কৈয়ড় সহ অন্যান্যরা। শংকরপুর গ্রামের চাষি জনার্দন চৌধুরী বলেন প্রত্যেক বৎসর রাইস মিলের মালিকদের বলা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি রাইস মিল কর্তৃপক্ষ। এই বৎসর আমি ৮ বিঘা গোবিন্দভোগ ধান চাষ করেছি । সমস্ত জমি গুলি রাইস মিলের পরিতক্ত জলে ডুবে আছে। কৃষি লোন নিয়ে চাষ করেছিলাম। এমনিতেই অতিবৃষ্টি ও নিম্নচাপ এর ফলে বিভিন্ন রকম পোকার আক্রমণে অনেক বেশি টাকা খরচা হয়েছে বিঘা প্রতি। তার ওপর সরকারি লোন নিয়ে চাষ। কিভাবে সরকারি লোন শোধ করব এবং আগামী দিনে বোরো চাষ করব বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের চাষীদের একটাই দাবি অবিলম্বে রাইস মিলাররা আমাদের ধান চাষের ক্ষতিপূরণ দিক। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন এই বিষয়টি নিয়ে জেলায় আলোচনা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন অনেক আগেই। চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে উনি বলেন তদন্ত করে দেখার পর যদি রাইস মিলের পরিত্যক্ত জলে চাষীদের ক্ষতি হলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারিভাবে কৃষি দপ্তর থেকেও প্রতি বছরই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের আর্থিক সাহায্য করা হয়। খণ্ডঘোষ ব্লকের বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন রাইস মিলের মাধ্যমে এলাকা দূষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেখানে সেখানে রাইস মিলের মালিকরা রাইস মিলের পাঁস ফেলে দিয়ে আসছেন রাস্তার ধারে। এ ব্যাপারে চাষীদের লিখিত আবেদনের ভিত্তিতেই বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে রাইস মিলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খণ্ডঘোষ ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার ডক্টর অসীম কুমার ঘোষ বলেন উক্ত বিষয়ে এখনো পর্যন্ত চাষিরা কোনো আবেদন করেননি। গত বৎসর এরকমই একটু ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছিল। ব্লকের আই ডি ও অফিসের সঙ্গে আলোচনা করবো। রাইস মিলারদের নিয়ে আলোচনা করে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের ক্ষতিপূরণের যাতে ব্যবস্থা করা যায় সেই চেষ্টা করবো। খণ্ডঘোষ ব্লকের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবশ্যই ক্ষতিপূরণের দাবি থাকতে পারে চাষীদের। অন্যদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থাৎ রাইস মিল এর প্রয়োজন আছে এলাকার চাষীদের জন্য। চাষীদের উৎপাদিত ফসল ওই রাইস মিলেই বিক্রি হয়। উভয়পক্ষকেই দরকার আমাদের। কিন্তু রাইস মিলের পরিতক্ত জলে জমির ধান নষ্ট হবে এটাও ঠিক নয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব সভাপতি তথা জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলক কুমার মাঝি যখন পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন চাষীদের কথা নিশ্চয়ই ভাববেন উনি।


Related posts

উত্তরবঙ্গে রবীন্দ্র নজরুল মুখী উৎসব

E Zero Point

ক্যানেলের বাঁধ কেটে জল বের করার ব্যবস্থা করা হবে, এলাকা পরিদর্শনে এসে আশ্বাস প্রশাসনিক অধিকারিকদের

E Zero Point

আমাদপুরের বিজড়া গ্রামে করোনা আক্রান্ত কিশোর ও যুবক চেন্নাই থেকে ফিরেছিলেন

E Zero Point

মতামত দিন