26/04/2024 : 9:33 AM
বিনোদন

আনন্দম – শুধু সিনেমা হল নয়, মেমারির একটি আবেগ, একটি ল্যান্ডমার্ক

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, এম.কে হিমু, মেমারি,  ১৫ জানুয়ারি ২০২২:


আনন্দম চিত্র মন্দির – শুধু একটা সিনেমা হল নয়। মেমারি শহরের একটি ল্যান্ডমার্ক। মেমারিবাসীর একটি আবেগ। মেমারি ও আসেপাশে গ্রামের অনেকেরই সিনামাদেখার হতে খড়ি হয়েছে এই আনন্দমেই। সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তি স্বর্গীয় শচীদুলাল হাজরা ১৯৬৮ সালে আনন্দম সিনেমা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৭০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বর্গীয় দুর্গাপদ চৌধুরী  আনন্দম চিত্র মন্দিরের ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন ডাকঘর সিনেমাটি দেখানো হয় এবং তারপর কৃষ্ণলীলার মাধ্যমে সিনেমা দেখানোর যাত্রা শুরু হয় আনন্দম চিত্র মন্দিরে। ২১ অক্টোবর ২০২১ শেষ সিনেমা প্রদর্শিত হয় অবুঝ ভালোবাসা।

মেমারি শহর তথা মেমারি থানা এলাকার প্রায় সমস্ত মানুষই -শুধু মাত্র সিনেমাই নয়, বিভিন্ন স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, বিচিত্রা অনুষ্ঠানও এই প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখেছেন। কিন্ত বিগত কয়েকদিন ধরে মেমারিবাসী লক্ষ্য করছেন সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেরকমই একটি ছবি জিরো পয়েন্ট এর ফেসবুক পেজে পোষ্ট করার পর কত মানুষ সিনেমা হলটির সাথে তাদের স্মৃতি কথা শেয়ার করেছেন কমেন্ট বক্সে। ৫১ বছরের যাত্রা পথে একটি প্রজন্মের স্মৃতি ছিল এই আনন্দম চিত্র মন্দিরে। সকলের মনে একটিই প্রশ্ন এরপর কি?

এ বিষয়ে জিরো পয়েন্ট এর প্রতিনিধি আনন্দম চিত্র মন্দিরের কর্ণধার রামকৃষ্ণ হাজরার সাথে এক আলাপচারিতায় জানতে পারেন যে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এক নতুন রুপে ফিরে আসবে আনন্দম। সঙ্গে থাকবে আরও কিছু বর্তমান প্রজন্মের জন্য বিনোদনের সুযোগসুবিধা। আবেগ বিহ্বল হয়ে তিনি জানান যে, জিরো পয়েন্ট এর এই ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম  কত মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে আনন্দমের সাথে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তিনি সেই সব স্মৃতিবিজড়িত কমেন্টগুলি পড়ছেন।

আনন্দম চিত্র মন্দিরের কর্ণধার রামকৃষ্ণ হাজরার কনিষ্ঠ ভাই অভিজিৎ হাজরা জানান, সিনেমা হলের প্রথমদিন থেকেই হলের নামকরণ থেকে শুরু করে, হলের ভিতরের বিভিন্ন সাইন বোর্ড, টিকিট ও সিট নাম্বার বাংলায় লেখা ছিলো এবং বহুবছর ধরে শুধুমাত্র বাংলা সিনেমায় চলতো আনন্দম চিত্র মন্দিরে। পরে দর্শকের আবেদনে হিন্দি সিনেমাও প্রর্দশন করা হয়। এছাড়াও মহিলা দর্শকদের জন্য এই হলে সব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা ছিলো।

আগেই বলেছি আনন্দম শুধু মাত্র একটি সিনেমা হল নয় মানুষের স্মৃতির একটি অধ্যায়। জিরো পয়েন্ট তার পাঠক-পাঠিকা, শ্রোতা, দর্শকবৃন্দের সেই আবেগকে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করবে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের কমেন্ট আজ প্রকাশ করা হলো।

জিরো পয়েন্ট এর এক ফলোয়ার নবেন্দু গুহ ফেসবুক পোষ্টে মন্তব্য করেন, ” ছোটবেলার ব্ল্যাকার দের দাপাদাপি আর তার সাথে রামকৃষ্ণদার বেল্ট হাতে দাদাগিরি বেশ মনে পড়ে। সেসময় জয়ন্তীতে হিন্দি সিনেমা আর আনন্দমে বাংলা চলতো। হলে সিনেমা দেখতে ভাল লাগতো, বলে নিয়মিতই যেতাম। কর্মীদের অধিকাংশই পরিচিত, কাউন্টারে এককরিদা থেকে রবিকাকা, হলে বসানো দিদিরা থেকে কলকাতা থেকে রিল নিয়ে আসা হারু । শেষ দিকে নতুন সাউন্ড সিস্টেম পছন্দ না হওয়ায় আর যেতাম না। শেষ দেখেছি বছর তিনেক আগে সঞ্জয় দত্ত, মাধুরী, আলিয়া, বরুণ অভিনীত ‘কলঙ্ক’। অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেখেছি। তবে সেরা স্মৃতি পৌরসভার অনুষ্ঠানে দোতলার ম্যানেজার ঘরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে একান্তে আধ ঘন্টা।”

মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তণ সহসভাপতি আশিষ ঘোষ দোস্তিদার মন্তব্য করেন, “আনন্দম সিনেমা হল আমার কাছে এক আবেগের মৃত্যু। আমার সিনেমা দেখার হাতেখড়ি এই প্রেক্ষাগৃহে।আমার দেখা প্রথম সিনেমা কেয়ামত সে কেয়ামত তক্।সে এক অন্য অনুভূতি। আমরা যখন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ি দলবেঁধে সিনেমা দেখতে আসার আনন্দই আলাদা।বন্ধু -বান্ধবী নিয়ে সিনেমা দেখা।শেষ সিনেমা এই হলে দেখি বাহুবলী-২.যদিও সেটি রামকৃষ্ণদার আমন্ত্রণে। অনেক সিনেমা আমি দেখেছি। একটা সময় ছিল রবিবার আনন্দম হলে গিয়ে সিনেমা দেখব। এখানেই ভালো ভালো বাংলা সিনেমা দেখেছি। তবে অনেকদিন চললেও বেদের মেয়ে জ্যোন্সা দেখা হয়নি। উত্তম কুমার,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অনেক বাংলা সিনেমা দেখেছি। তাপস পাল -শতাব্দী. -মহুয়া জটির দাদার কীর্তি ও গুরুদক্ষিণা এই হলেই দেখা। বেশকিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও এই হলে দেখিছি।শেষ দেখেছি নচিকেতার অনুষ্ঠান। পাশাপাশি তৃনমুল কংগ্রেসের সম্মেলনও হয়েছে এই হলে,উপস্থিত ছিলাম।বলা যায়,অনেক আবেগ,স্মৃতি নিয়ে মাটির সাথে মিশে গেল আনন্দম চিত্র মন্দির।”

কলেজ ছাত্রী তনুশ্রী মালিক জিরো পয়েন্ট-এর পোষ্টে মন্তব্য করেছেন যে, “ক্লাস ফাইভে কাকু -কাকিমার সাথে প্রথম সিনেমা দেখেছিলাম আনন্দমে ‘মায়ের আঁচল’😌😌,,, তখন তেমন কিছু না বুঝলেও জীবনে প্রথম অত বড় পর্দায় ছবি দেখে খুব আনন্দ উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে গিয়েছিলাম।। পরবর্তীতে মেমারী ইউনিট-২ এ 11 এ পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ দেখতে গিয়েছিলাম।। আজ এত বছর পর ভগ্নস্তূপেই চাপা পড়ে গেল সেইসব স্মৃতি 😞😞তবে আজীবন হৃদয়ে💜রয়ে যাবে❤️

আগামীদিনে এরকম অনেক স্মৃতিবিজড়িত মন্তব্য প্রকাশিত করা হবে জিরো পয়েন্ট-এ। আনন্দম শুধু সিনেমা হল নয়, মেমারিবাসীর একটি আবেগ, একটি ল্যান্ডমার্ক। (ক্রমশঃ)

 

 

 

 

 

Related posts

করোনা আক্রান্ত হয়ে, ওয়াজিদের মৃত্যুতে ভাঙলো সাজিদ-ওয়াজিদ হিট জুটি

E Zero Point

অঙ্কুশ ও ঐন্দ্রিলা জুটি নিয়ে “ম্যাজিক”-ছবির মহরৎ হয়ে গেল

E Zero Point

শেষের পথে প্রাচীন লোকশিক্ষার মাধ্যম যাত্রা ?

E Zero Point

মতামত দিন