জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১২ মার্চ ২০২২:
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি নারী দিবস উপলক্ষ্যে মেমারির কিছু মানুষের ইন্টার্ভিউ নেওয়া হয়েছিল “তিতাস” নামক সংস্থার পক্ষ থেকে। সেখান থেকে পাঁচজনের কথা এই প্রতিবেদনে পাবেন। সুলতানা (সাম্মানিক স্নাতক), অনন্যা কর্মকার (পশুসেবিকা, শিক্ষিকা), সন্ধান (নার্স), খুশবু শর্মা (সদ্য স্নাতক, কমার্স বিভাগ) ও অনুরাধা মণ্ডল (এল.এল.বি. ছাত্রী), এরা প্রত্যেকেই যুবসমাজের অংশ এবং মেমারির মেয়ে।
প্রথম পর্বঃ নারী দিবসে মেমারির নারীঃ পর্ব-১
পরবর্তী অংশ-
ষষ্ঠ প্রশ্ন, নারী বা পুরুষ নয়, একজন মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে আপনার লড়াই-এ আপনার আশেপাশের মানুষজন, বন্ধু ও পরিবারের ভূমিকা কী?
সুলতানাঃ পরিবারের সাথেই তো স্বাধীনতা নিয়ে বিবাদ। তবে চারপাশের মানুষজন সবাই ভালো না গোনাগুনতি কিছু মানুষ ছাড়া চারপাশের কেউই ভালোনা।
সন্ধানঃ আমার পরিবার স্বাধীনচেতা কিন্তু কখনও কখনও বাহ্যিক পরিস্থিতির চাপে পড়ে “সন্ধার পর মেয়েদের বাইরে যেতে নেই”- এই কথাটাও বলে থাকে।
অনন্যাঃ মানুষজন আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা করবে। পরিবারকে পাশে থাকতে হবে। বন্ধুদের একটা জোট দরকার হয়। কারণ পরিবারকে কিছু কথা বলা যায় না । উদ্যমী হওয়া এবং ভালো কারণে বেপরোয়া বন্ধুরা প্রশ্রয় দেয়, পাশে থাকে।
খুশবুঃ সব থেকে বড়ো ভূমিকা মা এর আর তা ছাড়া নিজেই বুঝেছি যে নিজের জন্য বাঁচতে হবে।
অনুরাধাঃ নিজের উপর dependent হওয়া জরুরি যেটা আমি মনে করি। ছোটোবেলা থেকে luxury তে বড়ো হওয়া সত্বেও একটা সময় পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য মাধ্যমিক এর পর থেকে নিজের উপর নির্ভর হয়ে এগিয়ে চলেছি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বাবা মা পাশে আছে। থাকবে। মনের জোর তারাই। এই মনের জোর নিয়ে Tution পড়িয়েও নিজের উপর depend করতে শিখেছি।
সপ্তম প্রশ্ন, আপনার লড়াই-এ পুরুষতান্ত্রিক পুরুষ ও মহিলাদের দ্বারা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?
অনন্যাঃ বিয়ে নিয়ে সমাজের মাথাব্যাথা। সেটা ছেলে কি মেয়ে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বাপ এর বাড়ির বোঝা আর শশুর বাড়ির চাকরানী ও বাচ্চা তৈরির যন্ত্র মনে করা হয়। যদিও এগুলো আমার আশে পাশে খুব একটা এই মনোভাব পাইনি।
অনুরাধাঃ কোনো মেয়ে কে যদি দেখে ১৮ বছর পেরিয়ে গেছে তারা বলতে থাকে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন না কেন? অনেক তো পড়ল। দুদিন বাদে কোনো বদনাম হলে কি করবেন? এইসব ঝামেলা অনেকবার পোহাতে হয়েছে। তবে দেবতার মতো বাবা মা আমার কারো তোয়াক্কা না করে Graduate করিয়েছে।
খুশবুঃ অনেকের কাছ থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ফ্যামিলি, বন্ধু, relatives, পাড়া প্রতিবেশী আরও অনেকে।
সুলতানাঃ মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে, সমস্ত দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত।
সন্ধানঃ পুরুষ তো আছেই একটা কথা বলতে পারি বহু প্রচলিত একটা শব্দ আছে,”মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু”- এটাও ঠিক। তবে কোনো মহিলার জন্য আমি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।
অষ্টম প্রশ্ন, আমরা জানি, স্বাধীনতা কেউ কাউকে দিতে পারেনা, তা জন্মগত। স্বাধীনতা না পেলে ছিনিয়ে নিতে হয়। আপনাকে স্বাধীনতা পেতে কী কী করতে হয়েছে বা করতে হয়?
সুলতানাঃ প্রতিটা কাজ করার সময় লড়াই করতে হয় লড়াই করেই বেরোতে হয়।
অনন্যাঃ আমার চিন্তা ভাবনা গুলোর আর পাঁচ জন বা আমার পরিবারের লোকদের বোঝাতেই কেটে যায়। কিছুটা লাভ হয় কখনো হয়না।
খুশবুঃ সবার সাথে রীতিমত ঝামেলা করে তাদের চোখে আঙুল ঢুকিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়।
সন্ধানঃ বাড়ির ভিতরে থাকলে তেমন কিছুই করতে হয়না আলাদা করে স্বাধীনতা পাওয়ার আশায়, কিন্তু বাইরের জগৎ টা মনে হয় আমাদের জন্য না।
নবম প্রশ্ন, আপনার লড়াই-এ পুরুষদের “সহযোদ্ধা” হিসাবে পেয়েছেন কখনো? পেয়ে থাকলে একটু বিস্তারিত জানাবেন প্লীজ? সাথে এটাও বলুন যে পুরুষ হিসাবে আমাদের কী করণীয় বলে মনে করেন?
সুলতানাঃ না পাইনি।
অনন্যাঃ আমার দু রকম অভিজ্ঞতা আছে। 8 বছরের একটি সম্পর্কের একটি প্রেমজ সম্পর্ক যা বিয়ে অব্দি যাওয়ার কথা ছিল সেখানে সারা জীবন প্রমাণ দিতে হতো যে আমি তার প্রতি কতটা ডেডিকেটেড। প্রতি মুহূর্তে প্রমাণ চাই। খুব খারাপ অভিজ্ঞতা। আবার সেই পুরুষ সম্প্রদায়েরই একজন পুরুষ আমার প্রতি সমর্পিত। আমার ছোটো থেকেই কোনো মেয়ে বন্ধু ছিল না। কারণ আমি সব মেয়েদের মত সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে বড়ো হই নি। তাই মেয়েদের সাথে তাল মেলাতে পারি নি। ছেলেরাই আমার বন্ধু। ছেলে দের সাথেই আমার বড়ো হয়ে ওঠা।
সন্ধানঃ হ্যাঁ, তিনি আমার বাবা।
খুশবুঃ একদমই পেয়েছি। এটাই সব থেকে বেশি পেয়েছি।
অনুরাধাঃ আমার বাবা৷ আমি তার ছেলে মেয়ে সবই।
দশম প্রশ্ন, আপনার আর কিছু বলার থাকলে বলুন। আমরা কি পুনরায় আপনার বক্তব্য শুনতে পারি পরবর্তীকালে??
সন্ধানঃ অবশ্যই।
খুশবুঃ নিশ্চয়।
অনুরাধাঃ অবশ্যই।
অনন্যাঃ এটাই বলতে চাই নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শেখ।।প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু শিখতে হবে।।শিক্ষা কে বন্ধ করলে চলবে না।।কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা যাবে না।।মৃত্যু অব্দি নিজের টাকা বা অন্যের নামে লেখা যাবে না।।সংসারের জাতাকলে নিজেকে পিসলে হবে না।সবাই মাছের পেটি খেলে তুমিও খাবে।।বউ বলে লেজা নৈব নৈব চ।শরীর খারাপ হলে বর কে হুকুম করবে রান্না করার।।কষ্ট করে রান্না করতে হবে না।। বর ও বুঝুক সবার রক্তের শরীর।।।তাদেরও আদরের পরিচর্চার প্রয়োজন।।।সেই দিক থেকে ভাগ্যদেবী আমার সহায়।
সুলতানা এই প্রশ্নটির উত্তর দেয়নি।
(চলবে)