27/04/2024 : 12:29 AM
আমার দেশই-জিরো পয়েন্ট

দুর্নীতি ও অসহায় মানুষঃ জমি, বালি, শিক্ষক নিয়োগ – নেতাদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই?

জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন১৫ জুন ২০২২:


জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী


কয়েকদিন আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক সভা করতে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তিনি নাকি সেখানে জমি মিউটেশন সংক্রান্ত বিষয়ে দু’জন দালালকে হাতেনাতে ধরেন। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দুর্নীতিও নাকি সামনে আনেন।

শুধু এই রাজ্যের নয় সমগ্র দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। মূলত এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন এক শ্রেণির জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিশেষ করে শাসকদলের পদাধিকারীদের একাংশ ও এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। এই দুর্নীতির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ।

বর্তমানে অধিকাংশ সরকারি কাজ অনলাইনে চালু করার জন্য কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা সাধারণ মানুষকে হ্যারাসমেন্টের বিষয়টা কিছুটা কমেছে। নাহলে সরকারি দপ্তরে গিয়ে পদে পদে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীর হাতে অর্থ গুঁজে না দিলে কাজ হতোনা। যে টাকা দিচ্ছে এবং যে নিচ্ছে তারা দু’জনেই সমান অপরাধী – এই বাক্য বন্ধনী পরীক্ষার ভাবসম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবে নয়। বিভিন্ন পঞ্চায়েত, পুরসভা বা ব্লকের এক শ্রেণির ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে ঠিকেদাররা যে কতটা অসহায় সেটা তাদের প্রশ্ন করলেই, যদিও ভবিষ্যতে কাজ না পাওয়ার আশঙ্কায় উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা কম, জানা যাবে। দিনের শেষে নিম্নমানের কাজের জন্য ঠিকেদারদের দিকে অভিযোগের আঙুল উঠলেও পেছনের গল্প থাকে অন্য। ইঞ্জিনিয়ারদের বায়না মেটাতে গিয়েই অর্থের টানাটানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকেদারের কাছে জানা গ্যালো কোনো একটি ব্লকের জনৈক ইঞ্জিনিয়ার কাজের ‘বিল’ এর জন্য তার কাছে নাকি মোট কাজের ২৫% টাকা দাবি করেছে। বিষয়টা যদি সত্যি হয় তাহলে চিন্তার ব্যাপার। এর পর আছে রাজনৈতিক দলের স্হানীয় নেতাদের চাহিদা। এখন প্রতিটি পঞ্চায়েত বা ব্লকে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। যত টাকা তত দুর্নীতি। ইডি যদি এদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে তাহলে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির হদিস পাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী সহ বেশ কিছু নদীর বালি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট ঘাট থেকে বালি তোলার জন্য সরকার টেণ্ডারের মাধ্যমে অনুমতি দিয়েছে। এর থেকে সরকার রাজস্ব পায়। এর বাইরে আছে অসংখ্য অননুমোদিত বালি ঘাট। শোনা যায় শাসক দলের স্হানীয় নেতৃত্ব ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের এক শ্রেণি অসৎ কর্মচারীর সৌজন্যে এইসব ঘাট থেকে নাকি প্রচুর বালি তোলা হয়। রাস্তার দু’ধারে দ্যাখা যায় বালির পাহাড়। সবটা নিশ্চয় বৈধ নয়! এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, দপ্তরের কর্মচারী ও বালি চলাচলকারী রাস্তায় বালির গাড়ি থেকে টাকা আদায়কারী ব্যক্তিদের লাভ হলেও সরকারের রাজস্বের ক্ষতি হয়। একইসঙ্গে যে নদী পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে সেই বোধটুকু এদের নাই।

এই মুহূর্তে এই রাজ্যের সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় হলো শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি। অভিযোগের তির এক শ্রেণির জনপ্রতিনিধি, দলীয় পদাধিকারী ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মীদের দিকে। শুরু থেকেই যদি তদন্ত হয় এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগে অনেক দুর্নীতি সামনে আসবে। শিক্ষক বদলি নিয়েও দুর্নীতির ইঙ্গিত সামনে আসছে। কয়লা ও গরু পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের তির সেই জনপ্রতিনিধি বা শাসকদলের পদাধিকারীদের দিকে। একটা সময় হাওলা কেলেঙ্কারি নিয়ে এল.কে.আদবানী বা প্রণব মুখার্জ্জীর দিকে আঙুল উঠেছিল। মানুষ বিশ্বাস করেনি, এখন কিন্তু করছে।

কোনো কাজ না করেই শাসকদলের এক শ্রেণির পদাধিকারীর বা দলের কোনো প্রভাবশালীর আত্মীয় হলেই হঠাৎ দ্যাখা যাচ্ছে তাদের সম্পত্তি বিপুল পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন তাদের বড় বড় বাড়ি। কোন যাদুবলে এসব হচ্ছে? ইডির কিন্তু এসব খোঁজ নেওয়া উচিত।

দুর্নীতি করে কি লাভ হয়? সাময়িক লাক্সারি করা যায় ঠিকই কিন্তু দিনের শেষে সিবিআই বা ইডির খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। পরবর্তী প্রজন্মকে শুনতে হয় চোর বা প্রতারক পরিবারের সদস্য। বাস্তবে মানসিক যন্ত্রণা বা দুশ্চিন্তা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করা যায় না।

বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করার অঙ্গীকার করেছিলেন ‘কিশোর কবি’। এই রাজ্য তথা দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার অঙ্গীকার কি আজকের রাজনীতিবিদ বা সরকারি কর্মচারীরা করতে পারেনা?

 

Related posts

মহারাষ্ট্রে বৃষ্টিতে ধসে পড়ল পাঁচ তলা বাড়ি, নিখোঁজ ৭০

E Zero Point

“ট্যাপিং দ্য পোটেনশিয়াল অফ কাশ্মীর : অ্যানাদার ডে ইন প্যারাডাইস”

E Zero Point

ফিরে দেখাঃ শব্দগুচ্ছ যা অনুপ্রেরণা দেয় চলার পথে

E Zero Point

মতামত দিন