জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩:
অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়াই বিশ্বের অন্যতম দুরূহ এবং উচ্চতম শৃঙ্গ জয় করে অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করলেন কলকাতার শ্যামবাজারের বাসিন্দা অরিজিৎ দে । বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম-শহর থেকে পর্বতারোহন করে শৃঙ্গজয় তো এখন প্রতিনিয়ত দেখা যায়। তবে তা বলে অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া? অনেক সফল পর্বতারোহীই দু-বার ভাববেন। অবশ্য শ্যামবাজারের অরিজিৎ ভাবেননি। বেশ কয়েক বছর ধরেই লেগেছিলেন স্বপ্ন সফল করবেন। ২০২১ ও ২০২২ দু-বার ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়াই বিশ্বের অন্যতম দুরূহ এবং উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলু (৮১৬৩ মিটার) আরোহণ করতে সক্ষম হলেন অরিজিৎ দে। কোনও সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ও শেরপা ছাড়া প্ৰথম এশীয় হিসাবে আপাতত পর্বতারোহনের বিশ্বজয়ের কীর্তি বঙ্গসন্তানের, রেকর্ডবুকে নাম উঠে গেল স্বর্ণাক্ষরে ।
জানা যায় এর আগে দু-জন ইউরোপীয় স্যার রেনহোল্ড মেসইনার ও স্যার হারমান বুল। অক্সিজেন ছাড়া এমন নজির গড়েছেন। শ্যামবাজারের বাসিন্দা অরিজিৎ দের এই পর্বতারোহণ অবশ্য অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কঠিন ছিল। তার কারণ যাত্রাপথে তিনি সঙ্গে কোনও শেরপাকে গাইড হিসেবে নেননি। এছাড়া শৃঙ্গ জয়ের জন্য যেটুকু না হলে নয়, শুধু সেইটুকু জিনিসপত্রই নিজের ব্যাকপ্যাকে রেখেছিলেন। একা ছিলেন, তাই নিজেকেই ২৮ কেজির ওই ব্যাগ বইতে হয়েছিল। সেই ভাবে এগিয়েই প্রথমে ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫:৩০টা নাগাদ সামিট করেন।
এর আগে কাঠমান্ডু থেকে গাড়িতে করে ধারাপানিতে পৌঁছেছিলেন। তারপর লারকে পাস, সামগাঁও হয়ে বেসক্যাম্পে পৌঁছেছিলেন। তারপর কয়েকদিন সারতে হয়েছিল অ্যাক্লাইমেটাজেশন। বা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার যুদ্ধ। তারপরেই রওনা দিয়েছিলেন চূড়ান্ত শৃঙ্গ জয়ের জন্য। শেষমেশ ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে সফল অভিযান সম্পন্ন করেন।
৩১ বছর বয়সী অরিজিৎ দে পেশায় ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। কেন্দ্রীয় সরকারের ভাল বেতনের চাকরি ছেড়েছুড়ে তিনি আপাতত বেছে নিয়েছেন পর্বতারোহণের এই অস্থির জীবন। অল্প বয়সেই এই পর্বতারোহণের নেশা পেয়ে বসেছিল ওঁকে। এবার সেই নেশাতেই জীবন পার করার জন্য অনিশ্চিত আগামীকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন কলকাতার অরিজিৎ। ভারত এবং নেপাল অধ্যুষিত হিমালয়ের ৬ হাজার মিটারের অধিকাংশ চূড়াই গত কয়েক বছরে আরোহণ করেছেন অরিজিত। বহু বছরই ওঁর পাখির চোখ ছিল নেপালের সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট মানসলু অভিযান করার।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির বিশিষ্ট পর্বতারোহী ও অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ট্রেনার শেখ ওমর ফারুক জানান, মাউন্টেনিয়ারিং দুনিয়ায় ৮০০০ মিটার উচ্চতার বেশি পর্বতারোহণে রয়েছে অসম্ভব মৃত্যুর ঝুঁকি। ৮০০০ মিটার উচ্চতাকে তাই মাউন্টেনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় “ডেথ জোন” ধরা হয়। এত উঁচুতে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ভয়ঙ্কর কষ্ট হয় সেখানে কম অক্সিজেনের জন্য। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের ক্ষেত্রে সাধারণত আইসফল ডক্টর, ওয়েদার রিপোর্টার, শেরপা, গাইড, কুক, হেল্পার, পোর্টার থাকেন। আর আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কথা ভেবে অতিরিক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন করতেই হয় সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়া ও শেরপা ছাড়া ঝুঁকিবহুল এই অভিযানকে পর্বতারোহণ-এর ভাষায় বলা হয় “আল্পাইন স্টাইল”।
২৫ তারিখ রাত ১১টায় ফিরে আসেন বেসক্যাম্পে। একাকী বা সোলো মাউন্টেনিয়ার হিসেবে এগোলেও রাস্তায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় রুশ পর্বতারোহী আর্টনের। মানসলুর চূড়ায় দাঁড়িয়ে একে অপরের ছবি তুলে দেন তাঁরা। বেসক্যাম্প থেকে অরিজিৎ টেলিফোনে জিরো পয়েন্টকে জানান, ‘অনেকেই ১২-১৩ লক্ষ বা তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ৮ হাজার মিটারের চেয়ে উঁচু শৃঙ্গ জয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু অ্যালপাইন ক্লাইম্বিং করলে এর চেয়ে অনেক কম টাকাতেই হয়ে যায়। নতুন প্রজন্মের পর্বতারোহীদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম।’