জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, রণবীর ভট্টাচার্য, ১৬ নভেম্বর ২০২৩:
প্রতি বছর ১৬ নভেম্বর ন্যাশনাল প্রেস ডে (National Press Day) পালিত হয় ভারতে। জাতীয় প্রেস দিবস (National Press Day) হল ভারতে জাতীয়স্তরের সাংবাদিকতা দিবস। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ হতে প্রতি বৎসর ১৬ নভেম্বর ভারতজুড়ে জাতীয় প্রেস দিবস পালিত হয়। দেশে প্রথম প্রেস কমিশনের সুপারিশে ভারতের সংসদ দ্বারা ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই এক স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে গঠিত হয় – ‘প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’। মূলত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদের মান রক্ষা ও উন্নতি সাধনের লক্ষ্যেই গঠিত হয় সংস্থাটি। ওই বছরই ১৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে সংস্থাটি। সেই দিনটিকে স্মরণে রেখে প্রতিবছর ১৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস দিবস উদযাপিত হয়। যেহেতু প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এক স্বাধীন ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান, এর ভূমিকা অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ বিশেষকরে ভারতের মত এক বিশাল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। এটি মূলত সংবাদ মাধ্যমের কাছে এক নৈতিক প্রহরী হিসাবে কাজ করে।
বর্তমানে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং ২৮ জন সদস্য, যার মধ্যে ২০ জন মিডিয়ার। ভারতে আজকের দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যে স্রেফ কথার কথা নয়, তা প্রমাণ করার তাগিদ রয়েছে ছোট বড় সব মিডিয়ার কাছেই।
বছর কুড়ি আগেও সাংবাদিকতা একটি আলাদা পেশা ছিল যখন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে সাংবাদিকতা পড়ার সুযোগ অনেকটাই অল্প ছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে, সাদা কালো কাগজের জমানা পেরিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার পাড়ায় জ্বলজ্বল করছে আধুনিক সাংবাদিক। কিন্তু গুরুত্ব বেড়েছে কি? দিনের শেষে যারা সারাদিন এয়ারপোর্টে নায়ক নায়িকাদের এক ঝলক ছবির জন্য ক্যামেরা হাতে অপেক্ষা করেন আর কোন দুরূহ ধূ ধূ প্রান্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিভৃতে লড়াই করতে চাওয়া কলমধারী সাংবাদিকের ভূমিকা কি একই? বাস্তবের জমিতে, আজ ভীষণ আকাল বিষয় বা content এর! তার ফলস্বরূপ আজকের এই স্বাভাবিক আবার মানতে না পারা বিবর্তন। কমবেশি সব সম্পাদকরা একই অভিযোগ করেন,যে চাইলেও অনেক কিছু কাগজে লেখা যাচ্ছে না বা টিভিতে দেখানো যাচ্ছে না। সরকারের বিষনজরে পড়ার ভয় যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে আর্থিক আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভ্রুকুটিও। সংবাদপত্র বা টিভি বা নিদেনপক্ষে পোর্টালকে যদি দিনের শেষে সরকারি টাকার মুখাপেক্ষী হতে হয়, তখন নিরপেক্ষতা অন্ধকারে হারিয়ে যায় বটে। তবে ভারতের সাংবাদিক মণ্ডলে সবটাই যে একপেশে এমন নয়! তরুণ তুর্কিরা আজ এমন বিষয় নিয়ে এগোচ্ছে যা নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি আগের কোন প্রজন্ম। এছাড়া রয়েছে ইন্টারনেটের আশীর্বাদ – তাই সত্যি কখনো চাপা থাকছে না। অনেকেই ব্লগে লিখছেন, নিজের ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে এগোচ্ছেন, তাই সাংবাদিকের লড়াই জারি আছে সর্বোচ্চ স্তরে।
অর্থনীতির পৃথিবীতে আজ সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন হল মিডিয়া হাউসকে বাঁচিয়ে রাখার নিদান। শুধু ভারত কেন, সর্বত্র এই ফর্মুলা খোঁজার লড়াই চলছে। এর সাথে রয়েছে Paid news এর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, যা অনেকটাই নবজাতককে জোর করে ওষুধ খাওয়ানোর মতো! এছাড়া অতিরিক্ত তথ্যের দাপাদাপি তথ্য বিস্ফোরণ নেহাত অমূলক চিন্তা নয়। ব্যাক্তি আক্রমণ থেকে দেশ বিরোধী উস্কানি, সমস্যা রয়েছেই আনাচে কানাচে। এছাড়া বৈচিত্রের অভাবও ভীষণ ভাবে প্রকট। খবরের সিংহভাগ জুড়েই শহরের মানুষের ভাবনা, গ্রামের বা প্রান্তের জেলার মানুষের কথা বা আশা আখাঙ্খার কথা অনেক সময়েই বলার কেউ থাকছেন না। কোভিড পরবর্তী সময়ে অনেক মিডিয়া তাদের জেলার সাংবাদিককে অস্থায়ী ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার তেতো কথা বলছেন। আর সাংবাদিকের উপর আক্রমণের নজির কম নেই। শুধু শারীরিক নিগ্রহ কেন, ডিজিটাল দুনিয়ায় সাংগঠনিক troll করার প্রবণতা প্রায়ই দেখা যায়।
আজকের দিনটা তাই তোলা থাক একটি ভাবনার জন্য। আর যাই হোক, ভারতের মতো উন্নতিশীল বিশ্বের শক্তপোক্ত সংবাদমাধ্যম ভীষণ জরুরি!
(লেখক -রণবীর ভট্টাচার্য , সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)