জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১২ মার্চ ২০২৪ :
মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে যে জীবন বিধান দিয়েছেন সেটাই হল ইসলাম। ইসলামকে পুনাঙ্গ ও প্রগতিশীল জীবন ব্যবস্থা এবং ইসলাম সর্বকালে সর্বাঙ্গ সুন্দর আধুনিক জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম যে পাঁচটি বুনিয়াদের উপর সংস্থাপিত তার অন্যতম হচ্ছে রমজান মাসের সিয়াম। আর এই সিয়াম বিধান দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোনআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন ‘‘ ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হল, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী গনের উপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে করে তোমরা মোক্তাকী হতে পার”।
এই আয়াতে কারিমায় এটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নবীর উম্মতের জন্য বিভিন্ন সময়ে ও মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছিল। যেমন হযরত আদম (আঃ) এর উম্মতের জন্য প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা ফরজ ছিল। বনি ইসরাইলের উম্মতের জন্য হযরত মুসা (আঃ) চল্লিশটি রোজা রেখেছিলেন। যার শেষ রোজাটি ছিল আশুরার দিন। হযরত ইশা (আঃ) পবিত্র ইঞ্জিল কিতাব পাবার চল্লিশ বছর পূর্ব থেকেই রোজা রেখেছিলেন। পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন। রমজান এমন একটি মহিমাময় ও গৌরবমন্ডিত মাস যে মাসে কোরআন মজিদ নাজিল হয়েছে। বিশ্বমানবতার সর্বশ্রেষ্ট মুক্তি সনদ সর্বযুগের সর্বদেশের সর্বজাতীর সর্বাঙ্গীন জীবন ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় বিধান গ্রন্থ আল কোরআন যে মাসে নাজিল হয় সে মাসের পবিত্রতা ও পূন্য মহাত্ম্য ও মহিমা নিঃসন্দেহে অতুলনীয় বিবেচিত হয়।
শুধু কোরআন শরীফই নয়। মুসলমানের বিশ্বাস করে যে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সহীফা সমূহ ও এই রমজান মাসেই নাজিল করা হয়। রমজান মাসের (১ কিংবা ৩ তারিখে) হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সহীফা লাভ করেন। রমজান মাসের ৩ তারিখে হযরত দাউদ (আঃ) নিকট যবুর নাজিল হয় এই মহান মাসের ১৮ তারিখে হযরত ইসা (আঃ) ইঞ্জিল লাভ করেন এই মহিমান্বিত মাসের ১২ তারিখে। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দ্ব্যার্থহীন ভাষা ঘোষনা করেছেন যে (এ পবিত্র মাসে) বেহেস্তের দরজা গুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ থাকে। এবং শয়তানকে (তার সহচরদের) শৃংখলা বদ্ধ করে রাখা হয় (বুখারী ও মুসলীম) এই থেকেই সহজেই অনুমিত হয় রমজান মাসের গুরুত্ব, পবিত্রতা মহাত্ম্য কত অপরিসীম ও অতুলনীয়।
রমজান শব্দটি এসেছে রমজ শব্দ থেকে রমজ শব্দের অর্থ হল জালিয়ে দেয়া, দগ্ধ করা রমজানের রোজা মানুষের মনের কলুষ কালিমা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়ে মনকে নির্মল ও পবিত্র করে তোলে। পাপ রাশিকে সম্পূর্ন রূপে দগ্ধ করে মানুষেকে করে তোলে পূন্যবান। রোজা একটি ফারসী শব্দ আরবী ভাষায় রোজাকে সিয়াম বলা হয়। সিয়াম শব্দের বহু বচন হল সাত্তম এখানে উল্লেখ্য যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ও সংযম পালন ইসলামে রোজা বা সিয়াম নামে অভিহিত হয়।
দুঃখ জনক হলেও সত্য যে একথা অনেকেই জানে না যে সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার মানেই রোজা নয়। এই গুলি সিয়াম সাধনার বাহ্যিক অনুষ্ঠান মাত্র। শুধু মাত্র খাদ্য ও পানীয় পরিহার করা এবাদত বলে ইসলামে বিবেচিত হতে পারে না। এই ইবাদতের জন্য প্রয়োজন তাকওয়া, যাতে করে মানুষ মোত্তাকী ও পরহেজগার হইতে পারে। এই তাকওয়াই হচ্ছে সিয়ামের সার বস্তু, রোজার আসল কথা। হযরত উমর (রাঃ) কাব আল আহবার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, তাকওয়া কি? উত্তরে কা’ব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি কখন ও কষ্টাকাকির্ন পথে চলেছেন? তখন কি পন্থা অবলম্বন করেন? হযরত উমর (রাঃ) বলেন, আমি সতর্ক হয়ে কাপড় গুটিয়ে চলেছি। কা’ব (রাঃ) বলেন ইহাই তাকওয়া। পৃথিবীতে চারিদিকে পাপ পংকিলতার কাটা ছড়ানো হয়েছে তা থেকে সর্তক ভাবে নিজেকে বাচিয়ে চলার নাম হল তাকওয়া, তাকওয়ার গুনে বিভূষিত ব্যক্তিকে বলা হয় মোক্তাকি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) দ্বার্থহীন ভাষায় উল্লেখ করেন যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বা অন্যায় কাজ কর্ম পরিত্যাগ করিবে না, তাহার শুধুমাত্র খানা-পিনা পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। এ ধরনের হতভাগ্য রোজাদারদের প্রসঙ্গে তিনি ঘোষনা করেছেন ‘‘ অনেক রোজাদার এমন আছো যাদের ভাগ্যে ক্ষুধাও পিপাসা ছাড়া অন্য কিছু জোটেনা। তেমনি রাত্রিতে এবাদত কারী এমন অনেক মানুষ আছে যারা রাত্রি জাগরন ব্যতিত আর কিছুই লাভকরতে পারে না। এই হাদিস দুটি থেকে সহজেই প্রতিয়মান হয় যে ক্ষুধা ও পিপাসা প্রকৃত এবাদতের অবলম্বন মাত্র। কিন্তু প্রকৃত এবাদত ‘তাকওয়া’ মাধ্যমে নিজের নফসকে দমন করার আন্তরিক প্রয়াসের মাধ্যমেই সাধিত হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি সর্বাস্ত করনে এ প্রয়াস গ্রহন করে না তার রোজা রাখার কোন স্বার্থকতা নেই।
(ক্রমশঃ) (সূত্র – ইমামবাতায়ন)
#ezeropoint #zeropoint #zeropointnews #memari #zeropointnewspaper #ramdan2024 #ramdanmubarak
পবিত্র রমজানের বিভিন্ন আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের পেজ ফলো করুন এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন। https://whatsapp.com/channel/0029VaAF8dFAzNc4TbgGfM3T