জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ :
দিওয়ালি বা দীপাবলী ভারতের জাতীয় মহোৎসব। এই উৎসবের একটা বিশেষ মাহাত্ম্য এই যে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই মহোৎসব বিভিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু “দীপাবলী” আখ্যার ক্ষুন্নতা কোথাও দৃষ্ট হয় না। দিওয়ালি মহোৎসবের প্রধান অঙ্গ সবর্ত্রই দীপমান। বিভিন্ন দেবতার মধ্যে দেখা যায় বাংলা দেশে শ্যামা বা কালীপূজারই রয়েছে প্রবর্তন। বাংলা দেশের ন্যায় অসমের সমতল অঞ্চলেও কালীপূজা প্রচলিত। মিথিলার কোনও কোনও অংশে কালীপূজা এবং অপর অংশে লক্ষ্মীপূজা ঐ দিনে হয়ে থাকে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে লক্ষ্মী এবং গণেশ পূজা বিহিত। গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সৌরাষ্ট্রেও শক্তিপূজাই বিহিত। সেখানে কালভৈরবী ও কালী পূজাই প্রচলিত। মধ্যভারতে দেখা যায় লক্ষ্মী ও গণেশ পূজার রয়েছে প্রাধান্য।
উত্তর ভারতীয় প্রথায় দিওয়ালি আসলে পাঁচদিনের উৎসব। এই পাঁচদিনের উৎসব বাংলার অঙ্গীভূত হয়েছে বটে, তবে তার কিছুটা পরিবর্তন ও পরিমার্জন ঘটেছে এই বাংলায় এসে। দেখে নেওয়া যাক এই পাঁচ দিন গোটা ভারতে বিশেষত উত্তর ভারতে কিভাবে পালিত হচ্ছে আর বাংলাতেই বা কিভাবে পালিত হচ্ছে। ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে উৎসব শুরু হয় ধনতেরাস দিয়ে। উত্তর ভারতের ধনতেরাসই বাংলার ধনত্রয়োদশী। এই তিথিতে ধন্বন্তরী, লক্ষ্মী, কুবের ও যমের পুজো করা হয়। কথিত আছে সত্যযুগে দেবাসুর যখন অমৃতের জন্য সমুদ্রমন্থনে রত তখন ক্ষীর সাগর থেকে উঠে এলেন দেব চিকিৎসক ধন্বন্তরী। তাঁকে বিষ্ণুর এক রূপ বলেই ধরা হয়। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবনের জন্য সবাই তাঁর পুজো করে। এর সঙ্গে উঠে এলেন লক্ষ্মীদেবী। তাই এই দিন ধন-সম্পদের জন্য লোকেরা লক্ষ্মীপুজোও করে থাকে। একই ভাবে কুবেরের কাছে থাকে দেবতাদের সম্পদ। তাই ধন-সম্পদের জন্য ঐদিন কুবেরের পুজোও প্রচলিত।
একইসঙ্গে প্রতিটি বাড়ির মূল প্রবেশ পথে ঐদিন মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় যা যমরাজের উদ্দেশ্যে। মানুষের বিশ্বাস এই দিন কোন ধাতব দ্রব্য কিনলে তা পরিমাণে তেরো গুণ বৃদ্ধি পায়। এই ধারণা থেকেই ধনতেরাসে সোনা কেনার প্রচলন হয়েছে। নরক চতুর্দশী বা ভূত চতুর্দশী দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি হল ভূত চতুর্দশী। সেদিন চোদ্দ ভুবনের অধীশ্বরী দেবীর উদ্দেশ্যে ১৪ দীপ দান করা হয় এবং চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে। এই চোদ্দ শাক হল- ১) ওল, ২) কেঁউ, ৩) বেতো, ৪) সর্ষে, ৫) কালকাসুন্দে, ৬) নিম, ৭) জয়ন্তী, ৮) শাঞ্চে, ৯) হেলেঞ্চা, ১০) পলতা, ১১) শুলফা, ১২) গুলঞ্চ, ১৩) ভাঁট পাতা, ১৪) শুষনি শাক।
কালীপুজো, দিওয়ালি ও লক্ষ্মী-গণেশের পুজো কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথি কে বলা হয় দীপান্বিতা অমাবস্যা। বাংলায় ঐদিন কালী পুজো করা হয়। কালী পুজো নিশীথকালীন পুজো। তাই অমাবস্যা যুক্ত রাতে কালী পুজো করা হয়। উত্তর ভারত জুড়ে সেদিন দিওয়ালি। রাবণ বধের পর রামচন্দ্রের অযোধ্যায় ফেরার দিন। রামচন্দ্রের ঘরে ফেরার আনন্দে মেতে উঠে দেশবাসী সেদিন আলোর মালায় সাজিয়ে তোলেন নিজের ঘর। সমগ্র উত্তর ভারতে ঐদিন লক্ষ্মী- গণেশের পুজো করা হয়। ব্যবসায়ীরা নতুন হিসাবের খাতা করেন। উত্তর ভারত থেকে (প্রধানত: কনৌজ থেকে) যারা বঙ্গদেশে এসেছিলেন তারা ঐদিন লক্ষ্মী পুজোর ধারাটিও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। তাই পশ্চিমবঙ্গীয় রীতিতে ঐদিন সন্ধ্যায় অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মী আরাধনা করা হয়। এই লক্ষ্মী পুজো প্রদোষকালীন পুজো। গোবর্ধন পুজো বা অন্নকূট ভাগবত পুরাণ অনুসারে মহাপ্রলয়ের রাতে গোবর্ধন পর্বত কে তুলে ধরে সমগ্র বৃন্দাবন বাসীকে রক্ষা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে বৃন্দাবনবাসী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে নানা ধরনের ভোগ নিবেদন করেন। প্রধানত ভাতের পাহাড় করে নিবেদন করা হয়। ভাত অর্থাৎ অন্ন। পাহাড় হল কূট। তাই এই উৎসবের নাম অন্নকূট। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে এই পুজো হয়ে থাকে।