জিরো পয়েন্ট নিউজ – বিশেষ প্রতিবেদন, ৮ মার্চ ২০২৫ :
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম। আর সংবাদমাধ্যমে যে খবর আমরা দেখতে পায় তা সংগ্রহ করে দেশের ঝঁ চকচকে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকরা। শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নারীর কাহিনী সাংবাদিকের কুনাল চট্টোপাধ্যায়ের ক্যামেরা বন্দী হলো পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে।
জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ এক নারীর কাহিনী। স্বামী স্ত্রীর বেশ সুখেরই সংসার ছিল, গর্ভবতী হলেন স্ত্রী নমিতা, পেটে যখন ৯ মাসের সন্তান তখনই শুরু হলো অশান্তি, ৯ মাসের গর্ভবতী অবস্থায় স্বামী তাড়িয়ে দেয় স্ত্রী নমিতাকে,বাপের বাড়ির অবস্থাও শোচনীয় দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবার, তাই বাপের বাড়িও বেশি দিন আশ্রয় পেল না নমিতা দেবী। তারপর থেকে শুরু হলো বেচে থাকার লড়াই, তখন এক মেয়ের মা তিনি। মেয়েকে মানুষ করতে ও দুবেলা দুমুঠো খেতে ট্রেনের কামরায় হকারি শুরু করেন নমিতা ধারা।
হকারি করে দিন কেটে যেত এক বেলা খেয়ে না খেয়ে, কিন্তু সেটিও বন্ধ হয়ে গেল! হঠাৎ একদিনের ট্রেন দুর্ঘটনায় তার বাঁ হাত কাটা যায়। অভাগার ভাগ্যের আকাশে যেন অনিশ্চয়তার কালো ছায়ায় ঢেকে যায়। তবে থেমে থাকেননি নমিতা দেবী, এক হাত নেইতো কি হয়েছে? অন্য হাত দিয়ে শুরু হয় জীবন সংরাম।
এক হাতেই ট্রেনে ট্রেনে হকারি করা তার থেকে উপার্জিত অর্থে মেয়ের পড়াশোনা, নিজেদের আহারের ব্যবস্থা সবকিছুই করে চলেছেন জীবন যুদ্ধে হার না মানা পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার অন্তর্গত জৌগ্রাম এলাকার নমিতা ধারা।নেই থাকার মত কোন নিজস্ব আশ্রয়ও, যেখানে থাকেন সকাল হলে সেই ঘরের ভাঙ্গা জায়গা দিয়ে উঁকি মেরে যেনে ডেকে দেয় তাকে। আর সূর্যের আলো ফোটার সাথে সাথেই প্রতিদিনের মতো শুরু হয় জীবনে চলার এক নতুন সংগ্রাম।
বাড়ির সমস্ত কাজ রান্না করা, সবজি কাটা,ঘর মোছা, মেয়ের দেখভাল করা, ট্রেনে কি বিক্রি করবেন সেই জিনিস সাইকেলে করে নিয়ে আসা,তারপর ট্রেনে হকারি করতে যাওয়া সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক হাত দিয়ে সব কাজ করেন এক হাত না থাকা পূর্ব বর্ধমানের দশভূজা। নমিতা দেবী বলেন লোকের কাছে হাত পেতে নয় নিজে কষ্ট করে কিছু উপার্জন করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চান তিনি। তাকে দেখে যেন তারই মত অসহায় মেয়েরা বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পায়।
তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নমিতা দেবীকে রইল জিরো পয়েন্টের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা ও আগামী দিন যেন তার ভালো হয় তার জন্য শুভকামনা। তাঁর সাথে সাথে সাংবাদিক কুলান চট্টোপাধ্যায়ের সাংবাদিকতাকে কুর্ণিশ জানাই জিরো পয়েন্ট।
এ বিষয়ে ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আজকের দিনে নারীরা পিছিয়ে নেই আমার তরফ থেকে হার না মানা জীবন সংগ্রামে এগিয়ে চলা দুর্গা কে শুভেচ্ছা রইল। তিনি ওই অঞ্চলের প্রধান ও উপ প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে দুর্গার বাড়িতে গিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসে । আজকের এই দিনটিতে এহেন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী রাও।