20/05/2024 : 5:51 AM
ট্রেন্ডিং নিউজ

করোনাকাল ও বাংলার রাজনীতি

কমলেশ মন্ডল


চীনের উহান প্রদেশ থেকে ক্রমে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। বিশ্বজুড়ে আধুনিক সভ্যতার দাম্ভিকতাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।মানব সভ্যতার কঙ্কালসার চেহারাকে বে আব্রু‌ করে দিতে খুব বেশি সময় নেয়নি সে। আধুনিক সমাজ জীবন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনীতি, ধর্মাচরণ সবই আজ প্রশ্ন চিহ্নের সামনে।এই বাঙলাও তার ব্যতিক্রম নয়।একসময় বাংলার চিন্তা চেতনাকে সারা ভারত শ্রদ্ধার চোখে দেখতো । “বাংলা আজ যা ভাবছে ,ভারত আগামী দিনে তা ভাববে।”এমন বক্তব্যের সমর্থনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সম্মতি জানাতো। কিন্তু এই করোনা কাল বাঙলার সামগ্রিক দৈন্যদশা লোকচক্ষুর সামনে হাজির করলো।

বাংলার রাজনীতি কখনো আদর্শ গনতন্ত্র কেন্দ্রীক ছিল একথা অতিবড় বঙ্গপ্রেমিক মানুষ ও বলতে পারেন না। যারা বলেন তাঁরা মুখোশে আড়ালে থাকেন অথবা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। সত্যি কথা বলতে গেলে যেখানেই বাঙালি জাতি আছে সেখানেই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা প্রকট। সেটা বাংলাদেশ, ত্রিপুরা বা পশ্চিমবঙ্গ সবার বেলাতেই প্রযোজ্য। বাঙালি ব্যালট অপেক্ষা ছল ,কপট, পেশি শক্তিতে অধিক বিশ্বাসী। তাইতো ভোটে কারচুপি,ব্যালট বাক্স ভাঙচুর,মনোনয়নে বাঁধা,ভোটে রক্তপাত,গণনাকেন্দ্রে অশান্তি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সর্বপরি যখন যেখানে যে দল ক্ষমতা দখল করেছে তারা পূর্বসুরীদের এই ভ্রান্ত পথকে পরিত্যাগ না করে আরো নতুন নতুন দূরভিসন্ধি যুক্ত করে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে।

এতদসত্ত্বেও অনেকে আশা করেছিলেন করোনার করালগ্রাস হয়তো বাঙালিদের পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে। রাজনৈতিক দ্বন্ধ ভুলে হয়তো মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা। কিন্তু বাস্তব হল ভিন্ন।করোনা এবং করোনা কালে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের যে রূপ প্রস্ফুটিত করলো তা শুধু নিন্দাজনকই নয় ঘৃণ্য ও। আম্ফানের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর অনেকেই ত্রাণের অর্থ ফেরত দিলেন। দেখা গেছে ত্রাণ বন্টনের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসকদের আত্মীয়,পরিজন, বন্ধুরা ত্রাণের অর্থ ভুলবশত আত্মসাৎ করেছিলেন।

দেশজুড়ে লকডাউনের ফলে অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার রেশনের ব্যবস্থা করলেও রেশন বন্টনে দুর্নীতি এবং সেই দুর্নীতিতে রাজনৈতিক ইন্ধন প্রকাশ পেয়েছে বারংবার।মহামারি আইন সাধারণ জনগনের জন্য প্রযোজ্য হলেও রাজনীতির কারবারিদের জন্য তা অর্থহীন।

লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দি থাকবে,অতি প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় নথি থাকলে তবেই বাইরে বেরোতে পারবেন,তা না হলে পুলিশ প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করবে।তারা সামাজিক দূরত্ব না মেনে সভা সমাবেশ, জমায়েত করলেও পুলিশ নির্বিকার থাকবে। বিরোধী দল হলে পুলিশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করবে। যতদিন আপামর বাঙালি এই অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে গর্জে না উঠবে, ঐক্যবদ্ধ না হবে ততদিন এজাতি রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাবে না।

Related posts

গুসকরায় অভাবনীয় জীবনের করুণ ইতিহাস

E Zero Point

এক নজরে ৩৭ তম জাতীয় গেমস

E Zero Point

অফবিটঃ সাংবাদিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

E Zero Point

মতামত দিন