30/10/2024 : 5:05 AM
অন্যান্য

বাঙালি কি ভুলতে বসেছে ” বড়োলোকের বিটিলো লম্বা লম্বা চুল ” গানের স্রষ্টা বীরভূমের রতন কাহারকে

কেউ স্বীকৃতি না দিক মানুষ আমায় স্বীকৃতি দিয়েছেঃ রতন কাহার


রাজেশ দে, আসাম

গত কিছুদিন ধরে ” বড়োলোকের বিটিলো লম্বা লম্বা চুল ” গানটা তো শুনেছেন ?

ইনিই সেই বিখ্যাত গানের স্রষ্টা “রতন কাহার”, ১৯৭২ সালের দিকে রতন কাহার এই গানটি লিখেন এবং সুর করেন। অথচ বাদশাহ-এর গানটাতে কোথাও এই মানুষটার নাম উল্লেখ নেই। এই মানুষটাকে তাই কেউ চেনেও না । আধুনিক গান হোক কিন্তু লোক সংগীতকে বিকৃত করে নয়।

এই মানুষটা এখনো বেঁচে আছে, আর্থিক সাহায্য না হোক , অন্তত নামটা উল্লেখ করে সম্মানটা দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আরো দুঃখজনক বিষয় হলো শুধু বাদশাহ নয় শিল্পীর সৃষ্টির মর্যাদা না দেওয়া লোকের তালিকায় আছেন আরো অনেকেই, বাদশাহ শুধু তাদের দলের নবতম সংযোজন।

বাংলা পক্ষ-র ফেসবুক পোাষ্ট থেকে জানা যায়, ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটির সৃষ্টিকর্তা রতন কাহারের সাথে কথা হয়েছে বাংলা পক্ষর৷ উনি আইনি লড়াইয়ে রাজি। বাংলা পক্ষ আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে যেটা বললেন অভিমানী রতন কাহার বাবু…

প্রশ্ন: ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটি কী প্রকৃতই আপনার লেখা?

রতন কাহার: হ্যাঁ, এই গানটি আমার লেখা, সুরও আমার। এবার যদি মানুষ এভাবে বেইমানি করে আমি কী করবো বলুনতো? আমি অত্যন্ত গরিব মানুষ। অনেকেই আমাকে ব্যবহার করেছে। অথচ আমার নাম দেয়নি। অনেকেই আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছে, নিজের নামে চালিয়েছে। তাঁদের লেখার ক্ষমতা নেই। আমার গান নিজের নামে চালিয়েছে। আমি অসহায়। আমি মাটির ঘরে থাকা, মাটির গান লেখা মানুষ। কিছু বুদ্ধিজীবি মানুষ তাঁরা অনেক কথাই বলে, আশ্বাস দেয়। কিন্তু আমাদের মতো শিল্পীকে মূল্য দেয় না। আমার এটা নিয়ে প্রতিবাদ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই।

প্রশ্ন: আপনি কবে প্রথম এই গানটি লিখেছিলেন ও গেয়েছিলেন?

রতন কাহার: একদম ঠিকঠাক মনে নেই। যতদূর মনে পড়ে ১৯৭২ সালে লিখেছিলাম। গানটা আমি প্রসারভারতীতে প্রথম গেয়েছিলাম। পরে আমি গানটি ‘আনন’ গোষ্ঠীর রাজকুমার সাহাকে দিয়েছিলাম। ওনারা কোরাস গাইতেন। সেখান থেকেই গানটা ছড়িয়ে পড়ে। স্বপ্না চক্রবর্তী গানটি লিখে নিয়ে গিয়েছিল আমার খাতা থেকে। পরে ১৯৭৬ সালে স্বপ্না চক্রবর্তী গানটা রেকর্ড করেন। কিন্তু সেখানেও গানটি আমার (রতন কাহার) লেখা ও সুর বলে কোনওভাবে স্বীকার করা হয়নি। তবে গানটি রেকর্ড হওয়ার বহু আগেই আমি আকাশবাণীতে গানটি গেয়েছিলাম। তখন ওই অনুষ্ঠানের পরিচালক যতদূর মনে পড়ছে মলয় পাহাড়ি, আর্য চৌধুরীও ছিলেন। পাহাড়ি সান্যালই আকাশবাণীতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় স্বপ্না চক্রবর্তীও আকাশবাণীতে অনুষ্ঠান করতেন।

প্রশ্ন: ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটি যে আপনার, অথচ আপনার নাম না দিয়েই রেকর্ড হয়ে গেল বলছেন। আপনি প্রতিবাদ করেননি কেন?

রতন কাহার: বহুবার বলেছি। কিন্তু আইনি লড়াই লড়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার নেই। কেউই মূল্য দেয়নি। কলকাতায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা আমার থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। শিলাজিৎ-ও আমার কাছ থেকে গান নিয়ে গিয়েছেন। পূর্ণচন্দ্রদাস বাউলও আমার গান গেয়েছেন। তবে অনেকেই ঠকিয়েছেন। তবে আমার লড়ার ক্ষমতা নেই। তবে কেউ স্বীকৃতি না দিক মানুষ আমায় স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রশ্ন: স্বপ্না চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?

রতন কাহার: ওনার সঙ্গে আমার খুব যে ভাব ছিল তা তো নয়। ও আমাকে বঞ্চিত করেছে। তবে এখন মাঝে মধ্যে কথা হয়। ওই যোগাযোগ করে।

প্রশ্ন: আপনি এখন থাকেন কোথায়? সংসার চলে কীভাবে?

রতন কাহার: আমি সিঁউড়ি (বীরভূম) তে থাকি। বিড়ি বেঁধে সংসার চলতো। গান গেয়ে বিশেষ কিছুই করতে পারিনি। তবে এখন আর কিছু করি না। আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনাকে প্রকৃত সম্মান ও মূল্য দেওয়া হয়নি দাবি করে কিছু মানুষ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন, প্রতিবাদ করছেন। তাঁদেরকে কী বলবেন?

রতন কাহার: তাঁরা আমায় ভালোবাসেন। তাই কথা বলছেন। কিন্তু ঠিক বুঝি না (আবেগঘন গলায়) আমাকে এত মানুষ ঠকিয়েছে যে এখন আর ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। তবে গান গেয়েই আমি বেঁচে আছি। গান গেয়ে অর্থ রোজগার করতে পারিনি। ছেলেমেয়েদের জন্যও কিছু সেভাবে করতে পারিনি।


••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
#তথ্যসূত্র © Folk Studio Bangla © Zee ২৪ ঘণ্টা

Related posts

দধীচি ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ালেন

E Zero Point

শুধু কি করোনাতেই মানুষ মারা যাবে ম্যালেরিয়া ডেঙ্গুতেও তো মরতে হবে

E Zero Point

রাজ‍্যে ফের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস হাওয়া দফতরের!

E Zero Point