বিশেষ সংবাদদাতা দিল্লী ও কলকাতাঃ দিল্লির একটি মসজিদে হওয়া ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ, যা ঠেকাতে একরম প্রায় ব্যর্থ অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। ওই সমাবেশে যোগ দিয়ে বহু মানুষ করোনা আক্রান্ত এবং ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে আপ সরকার। ওই মসজিদটি সিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাঁরা। পাশাপাশি দিল্লির পশ্চিম নিজামুদ্দিনে তবলিগ-ই-জামাতের মসজিদ থেকে কমপক্ষে ৮৫০ জনকে অন্য একটি জায়গায় কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে বলে খবর। ইতিমধ্যেই কম করে ২০০ জনের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা সংক্রমণ হয়েছে কিনা তার জন্যে পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৪ জনের শরীরে ওই সংক্রমণ হয়েছে বলে প্রমাণও মিলেছে। সংক্রমিতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করছে দিল্লি সরকার। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় দিল্লির ওই মসজিদের মওলানার বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার।
দিল্লির নিজামউদ্দিনের ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছিলেন ক’জন? তাঁরা সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে আছেন কি না? এই প্রশ্নই এখন ভাবচ্ছে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে জানালেন, নিজামউদ্দিন ফেরত সকলের খোঁজ চালাচ্ছে প্রশাসন। দ্রুত চিহ্নিত করে তাঁদের সকলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। আজ রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে জানালেন, নিজামউদ্দিন ফেরত সকলের খোঁজ চালাচ্ছে প্রশাসন। দ্রুত চিহ্নিত করে তাঁদের সকলের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হবে। শুধু তাই নয়, তাঁদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।
All those from WB who have participated in this event (Tablighi Jamaat in Delhi) are being identified and will be immediately tested for COVID and put under mandatory 14 days quarantine.
— Alapan Bandyopadhyay (@alapan1961) March 31, 2020
উল্লেখ্য ১৩ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত দিল্লির নিজামউদ্দিনে আলামি মাশোয়ারা নামে একটি ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বছরভর আগে থেকে ওই ধর্মীয় সভাদিন ক্ষণ নির্দিষ্ট ছিল। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন ওই তবলিগে। শুধু বিদেশ থেকেই ধর্মপ্রচারের ওই সভায় এসেছিলেন প্রায় ২৫০ জন। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা থেকে ওই প্রচারকরা এসেছিলেন বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
নিজামউদ্দিনের ওই তবলিগের মুখপত্র মহম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘‘মার্কেজের সাত তলা বাড়িতে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ ছিলেন।” তাঁর দাবি, ওই সভা সরকারি সমস্ত আইন মেনেই হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ২২ মার্চ, রবিবার ‘জনতা কার্ফু’ও তাঁরা পালন করেছেন। কিন্তু ২৪ মার্চ, মঙ্গলবার রাতেই দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। ইউসুফের দাবি, এই এর আটকে পড়েন সভায় যোগ দেওয়া অনেকেই। কিন্তু ওই ধর্মীয় সভায় যোগ দেওয়া ফিলিপিন্সের নাগরিক এক ধর্মপ্রচারকের মৃত্যু হয়েছে মুম্বইতে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে সভায় অংশ নেওয়া ৯ জন ও তাদের একজনের স্ত্রী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। তবলিঘ-ই-জামাতের সভার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তেলেঙ্গানার ৬ জন। করোনাভাইরাসের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাঁদের। আইসোলেশনে চিকিত্সাধীন থাকাকালীনই তাঁদের মৃত্যু হয়। ধর্ম সভায় অংশ নেওয়ার পর তেলেঙ্গানায় যান কয়েকজন ইন্দোনেশীয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। তবলিঘ-ই-জামাতের সভা থেকে শ্রীনগর ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ১ ধর্মগুরু। তাঁরও দেহে করোনাভাইরাসের হদিশ মেলে। গত সপ্তাহে আইসোলেশনে থাকাকালীন তাঁর মৃত্যু হয়।