25/04/2024 : 2:54 AM
অন্যান্য

যেমন দেখি তাঁকে : পরাগজ্যোতি ঘোষ (প্রথম কিস্তি)

পরাগজ্যোতি ঘোষ

 অনেক দিন ধরে ভাবছি এবার লিখব তাঁকে নিয়ে যাঁর কথা এই কঠিন সময়ে মানুষের ভালোভাবে জানা দরকার।তাঁকে নিয়ে কত মানুষের কত না- অজানা রয়েছে তাঁর ইয়ত্তা নেই। হয়তো অনেক পাঠকের মনে হতে পারে যে প্রতিবেদক তাঁর অনুসরণকারী বলেই এমন ভাবে তুলে ধরছেন তাঁর “গুরু” কে –  তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা আমাদের পত্রিকার আসল মূলধন। তাই আপনাদের মতামত আমাদের কাছে বিশেষ ভাবে গ্রহনযোগ্য। তবে একথা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি যাঁর কথা আমি লিখব আপনারা দয়া করে প্রত্যেকটা কিস্তি পড়বেন – আপনাদের যুক্তি দিয়ে সেগুলি বিচার করবেন – দেখবেন আপনাদের ব্যবহারিক জীবনে চরম কাজে দেবে এবং সমাজটাও বেশ সুন্দর হবে। যাঁর কথা লিখতে শুরু করলাম তিনি আর কেউ নন – তিনি হলেন প্রেমের ঠাকুর সবার ঠাকুর *”শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র”*।
বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ ও সারা বিশ্ব জুড়ে আজ তাঁর প্রতিষ্ঠিত *”সৎসঙ্গ”* কাজ করে চলেছেন। তিনি বললেন
       “মানুষ আপন, টাকা পর/
         যত পারিস মানুষ ধর।”
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মূল উপাস্যই ছিল মানুষ। ধর্মমত নির্বিশেষে সকল মানুষকে তিনি প্রানের থেকেও বেশি ভালো বাসতেন। তিনি বলতেন একটি সাম্রাজ্য তিনি হাসতে হাসতে ত্যাগ করতে পারেন, কিন্তু একজন মানুষকে তিনি ত্যাগ করবেন না। যে মানুষ যেমন ই – হোক না কেন। তাই তো তাঁর দয়ার পরশ – কত মাতাল, কত অসাধু, কত চরিত্রহীন এসে সৎ পথের সন্ধান পেয়ে জীবনকে আদর্শ জীবনে পরিনত করেছে। তিনি নিজেকে কখনও *”ভগবান”* বলেন নি। মানুষ তাঁকে ভগবানে পরিনত করেছে।
তিনি “রাজভিখারী” তিনি কেবল মানুষ ভিক্ষা চান। জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া, সমাজের চোখে অবহেলিত রুগ্ন অসহায় মানুষদের তাঁর চলনায় চালিত করে প্রকৃত মানুষে পরিনত করার কারখানা হলো তাঁর *”সৎসঙ্গ”*। তিনি বলতেন, ধর্ম হলো কল্যানের নিয়ম পালন, যাতে প্রত্যেক মানুষ জীবন বৃদ্ধির পথে চলতে পারে। এর ভেতর কোন সম্প্রদায় নেই, কোন ইজম নেই। ধর্ম হলো চির শাশ্বত নিয়ম, যা মেনে চললে মানুষের কল্যাণ অপরিহার্য, ধর্ম – গেরুয়া, তিলক, টিকি, মাথায় টুপি, দাঁড়ি রাখা, মস্তক মুন্ডন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে না। ধর্মের আসল জিনিস হলো মনভিত্তিক। মনের মূলে যা থাকে – কর্মের মাধ্যমে তা বাইরে প্রকাশ পায়। তার মন হলো খেয়ালী। তাকে ধর্মের শৃঙ্খলে বাঁধতে হয়। খেয়ালের অনুচর না হয়ে, বিবেকের অনুসরণ করে মানুষের কল্যাণ করাই হলো ধর্ম। তিনি বলেন –
  “অন্যের বাঁসায় নিজে থাকে/
   ধর্ম বলে জানিস তাঁকে”।
সমাজের ভিত আজ বড়ই নড়বড়ে। আমাদের অধিকাংশেরই – পিতা-মাতার আবাস স্থল আজ বৃদ্ধাশ্রম। এর কারণ কিন্তু অনেক গভীরে। ঠাকুর বলতেন –
   “আধো কথার সময় হতে
    করে করিয়ে যা শেখাবি
     সেটি ই হবে মোক্ষম শিক্ষা
     হিসেবে চল নয় পস্তাবি।”
অত্যন্ত বাস্তব কথা। একটা বাঁশকে যদি ছোটো বেলায় নোয়ানো না হয় বড় বেলায় কিন্তু কোনভাবেই নোয়াতে পারি না। আমরা যদি ছেলে বেলা থেকে আমাদের সন্তানদের শ্রদ্ধা- ভক্তির শিক্ষা না দিতে পারি কখনোই তারা বড় হয়ে আমাদের সম্মান দেবে না। কিন্তু বাস্তবে তা আমরা করি না। আমরা বাজার থেকে একটি আপেল নিয়ে এসে তাকে ধরিয়ে দিই – বলি যা খা। বলে  সে একা খেতে শেখে। কিন্তু আমরা যদি ঐ আপেলটা তার হাতে দিয়ে বলি ওটাকে টুকরো করে আগে ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাবা, মা ও অন্যান্য বড়দের দিয়ে নিজে খা – তাহলে তারা শিখবে শেয়ারিং করতে। কিন্তু ভোগবাদী দুনিয়ায় তো নিজের পাতে ঝোল পড়লেই ভোজ হয়ে যায়। তাই নিজেরাও হয়ে গেছি স্বার্থান্দ আর আমাদের দেখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শিখছে সেই এক পথ।       (ক্রমশঃ)

Related posts

আসুন সকলে মিলে, সকলের জন্য কিছু করি | পিয়ালী মালাকার

E Zero Point

রমজানঃ মুক্তির মাস

E Zero Point

ক্যামেরায় আর চোখ রাখবেন না বিশিষ্ট চিত্রসাংবাদিক রণজয় রায়

E Zero Point

মতামত দিন