12/02/2025 : 11:39 PM
অন্যান্য

পাঠকের কলম : লকডাউনে সামাজিক দূরত্ব থাকুক দুটি শরীরের মধ্যে, বুদ্ধিজীবি ও শ্রমজীবির মানসিকতার মধ্যে নয়

সম্পাদক সমীপেষু


চলতি ইংরেজী মাসের সতেরো তারিখে পাঠকের কলম : মেমারিতে পাড়ায় পাড়ায় রাস্তা বন্ধ না করে টহলদারির প্রয়োজন, রাস্তার মোড়ে পুলিশি বন্দোবস্ত করা হোক এই প্রিয় পত্রিকার পাঠকের কলমে আনন্দ দে নামে কেউ সুলতানপুর অঞ্চলে রাস্তা বন্ধ নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন এবং বেশ কিছু তথ্য গোপন ও বিকৃত করেছেন, হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবেই। দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার জন্মগতভাবে সমান, কিন্তু তা বিভিন্নভাবে ক্ষুণ্ণ হয়। গত বছরেও যে সংখ্যক “নীচু জাত”-এর মানুষ খুন হয়েছেন উঁচু জাতের দ্বারা, বা ২০২০ সালে এসেও মানুষ ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে এসব দেখলে সেই অধিকার ক্ষুণ্ণ হ‌ওয়ার প্রমাণ লাগেনা। একজন তার নিজের কাজ ঠিকভাবে করলে তা প্রশংসার, না করলে নিন্দার, সে মাসিক বেতনভুক্ত শিক্ষক, মন্ত্রী, ঝি চাকর হোক বা প্রতিদিনের মজুরি পাওয়া শ্রমিক, অভিনেতা বা রিক্সাওয়ালা। “মজুরি”কে “সাম্মানিক” বললে তার শ্রীবৃদ্ধি বা হ্রাস হয়না। অথচ দেশজুড়ে চলতে থাকা আনপ্ল্যানড লকডাউনের কারণে সামাজিক স্তরে যে গোলমালের সৃষ্টি হয়েছে, তার ফল ভোগ করছেন পরিযায়ী বা স্থায়ী শ্রমিক তথা খেটে খাওয়া মানুষেরা। যারা সাহায্য করতে চাইছেন, তারাও ঠিকভাবে লকডাউন মেনে উঠতে পারছেন না, এবং এটাই স্বাভাবিক। মেমারি সম্মীলনীতে প্রতিদিন ৪৫০ মানুষের খাবার তৈরির সময়ে, বা “আঁচল” নামক সংগঠন কর্তৃক যেখানে রান্না হচ্ছে সেখান থেকে বাইকে করে স্টেশনে গিয়ে রাস্তায় থাকা মানুষকে খাবার পৌঁছানোর সময়ে যে পর্যাপ্ত “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রাখা হচ্ছেই, তা জোর দিয়ে কেউই বলতে পারবেনা, এবং এই লকডাউন যেহেতু “Sudden” এবং “Unplanned” তাই কোথাও যে অনিচ্ছাকৃত খামতি থেকেই যাবে তা বলা বাহুল্য। যারা সাহায্য করতে চাইছেন, অনেকে প্রপার গাইডলাইন মানতে সক্ষম হচ্ছেন, অনেকে ইচ্ছা থাকলেও পারছেন না। তাদের সকলকে ধন্যবাদ। কিন্তু যেগুলি ইচ্ছাকৃত? পাড়ায় সব্জী বিক্রী করতে এলে সবাই মিলে জটলা করে সব্জী না কিনলেও হতো। তাহলে সুলতানপুরবাসীদের বাধ্য হতে হতো না রাস্তা বন্ধ করতে। যারা জটলা করছিলেন, সব্জীওয়ালা বা প্রতিবেশীর যথেষ্ট সান্নিধ্যে এসে সব্জী কিনছিলেন, তারা অনেকাংশেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবি। যারা এ হেন অপদার্থতা আটকাতে রাস্তা বন্ধ করেছেন, তারা প্রত্যেকেই শ্রমজীবি। কিছুদিন আগে ঝড়ে গাছ পড়ে যা‌ওয়াতে পাড়ার কিছু অংশে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল, তখন ঐ মানুষেরাই গাছ সড়াতে গিয়েছিলেন, এবং আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, অবশ্য‌ই তারা পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। বাইরের রাজ্য থেকে পাড়াতে আসা মানুষেরা কোয়ারান্টাইনড থাকছেন কিনা সেই খবর নেওয়া, না থাকলে তাদের খবর স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে পৌঁছানোর মতো সচেতন নাগরিক দায়িত্ব‌ও তারা ভালোই পালন করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে পাড়াতে যারা খেতে না পাওয়ার মতো অবস্থাতে রয়েছেন, তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করে চলেছেন ঐ মানুষগুলি, যেমনটা তারা বরাবর করে থাকেন। বর্ষায় পাড়ায় জল জমলে, বা পাড়ার শিক্ষকের পাঁচিল ঘেরা জমিতে জঙ্গল তৈরি হলে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তারাই নিয়ে থাকেন। তারা যেরকম রাস্তা বন্ধ করেছেন, তেমন‌ই পাড়াতে বাজারের ব্যবস্থাও করেছেন। মিস্ত্রীপাড়া থেকে ডাকবাংলো যাওয়ার রাস্তায় একটি টেম্পোরারি বাজার প্রতিদিন সকালে বসছে তাদের‌ই উদ্যোগে, এবং সেখানেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাতে জোর দেওয়া হয়েছে এবং যদি কেউ তা লঙ্ঘন করে সেই খবর তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক, এমন দাবীও তারা করছেন। এমনকী, আমাদের পাড়ার এক বন্ধু মহম্মদ বসির, যে ইছাপুর থেকে নিয়মিত খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের পাড়ার অনেক মানুষকে, “প্রয়াস” নামক এন‌জি‌ও-র মাধ্যমে, তিনিও কাজ করছেন প্রপার গাইডলাইন মেনেই। আমরা জানি, আমাদের পাড়ার তথাকথিত ভদ্র বুদ্ধিজীবিদের অনেকেই উপরে উদ্ধৃত ঐ শ্রমজীবি মানুষদের পছন্দ করেন না। এমনটা আমাদের ধারণা নয়, প্রমাণ করতে পারি সম্মুখে। কিন্তু আপনাদের অপদার্থতা বা ফ্রাস্ট্রেশনের বোঝা ব‌ইতে আমরা নারাজ। আর তাতে পাড়ার ক্ষতি হলে তো বটেই। যিনি ঐ প্রতিবেদনে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন যে যারা পাড়ায রাস্তা বন্ধ করেছেন তারাই সন্ধ্যেয় আড্ডা মারছেন নাকি! আজ্ঞে না! পাড়ার বাইরের দিকে মাঠে যারা আড্ডা মারছে বা খেলছে, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনকে বলা হয়েছে। যেরকমভাবে মেমারির অন্য মাঠগুলিতে আড্ডা, খেলা চললে প্রশাসন দায়িত্ব নেয়নি, এক্ষেত্রেও নেয়নি। কিন্তু আমরা সে চেষ্টাও করেছি। সুতরাং, অহেতুক ঘৃণা ছড়ানো বা ভুল খবর মেনে নেওয়া হবেনা, অন্তত দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে কখনোই না। সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন, শারীরিক ও মানসিকভাবে।


বসুষেণ, সুলতানপুর, মেমারি।


আপনার এলাকার বিভিন্ন সমস্যা অথবা প্রশাসনিক কাজকর্মের ভালো-মন্দ, কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়ের উপর আপনার নিজস্ব মতামত বাংলায় টাইপ করে পাঠকের কলম বিভাগে ই-মেল newszerpoint@gmail.com করুন।

 

Related posts

দেশের মধ্যে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গেঃ কেন্দ্রীয় রিপোর্ট

E Zero Point

জামুরিয়ার হিজলগড়া গ্রামের মানুষের পাশে দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন

E Zero Point

আউশগ্রামে বিধায়কের বৃক্ষরোপন

E Zero Point

মতামত দিন