24/04/2024 : 5:47 AM
অন্যান্য

ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী ( পঞ্চম ও অন্তিম পর্ব ) ~ সুতপা দত্ত

সুতপা দত্ত

প্রথম পর্বঃ ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী (প্রথম পর্ব) ~ সুতপা দত্ত

দ্বিতীয় পর্বঃ ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী (দ্বিতীয় পর্ব) ~ সুতপা দত্ত

তৃতীয় পর্বঃ http://ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী (তৃতীয় পর্ব) ~ সুতপা দত্ত

চতুর্থ পর্বঃ http://ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী (চতুর্থ পর্ব) ~ সুতপা দত্ত


পঞ্চম ও অন্তিম পর্ব


হ্যাঁ, ওরা এখন পাঁচ জন । পিসির বাড়িটাকেই পরে ভেঙে চূড়ে তিন তলা বানিয়ে নিয়েছেন। নিচের তলা জুড়ে তাঁর পার্লার , মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আলাদা ক্লাস ঘর আর বাকি দুটো তলায় ওদের বাস। পিসি আজও সুস্থ শরীরে স্বমহিমায় , ঐ যে একটু আগে খেঁকিয়ে উঠলেন , ছেলেকে রওনা করিয়ে কেঁদেছেন বলে । মায়ের মতো বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন দীর্ঘ বাইশটা বছর , আজও  মা-ছেলের সব খোঁজ খুঁটিয়ে রাখেন , কিন্তু নরম মনটা লুকিয়ে রাখেন বরাবর। অর্পণের অফিস থেকে পাওয়া সামান্য পুঁজির একটা পয়সাও ধরতে দেন নি কখনও, শত অভাবেও । ছেলের পড়াশোনার অতিরিক্ত খরচ উনি দিয়েছেন তবু ঐ অর্থে হাত দিতে দেন নি । এমন মানুষদের স্বামী সুখ , সন্তান সুখ দেননা ভগবান , কি নিষ্ঠুর তার বিচার । কখনও আবার মনে হয় , হয়তো নীভাদের  মতো অভাগীদের আশ্রয় দিয়ে , জীবনযুদ্ধে জিতিয়ে দেওয়ার জন্যই তাঁদের জন্ম , সংসারের বৃহত্তর স্বার্থে।
ভাবছেন তো, নতুন বৌ-কে নিয়ে তো হয় চারজন , আর একজন কে ! অর্পণের মা , নীভার শাশুড়ি মা । শশুর মশাই মারা যাবার পর আর ঐ বাড়িতে টিকতে পারেন নি , লোক মারফত খবর পাঠিয়েছিলেন নীভার বাপের বাড়িতে , ওর ভাই সে খবর নীভাকে দেয়, বাপাই তখন বি.এস.সি পড়ছে , মামার সাথে আরও দুজন পাড়ার লোককে সঙ্গে নিয়ে বাপাই নিয়ে আসে তার ঠাম্মিকে মায়ের কাছে । ঝামেলা করেছে ছোটো ছেলে অনেক, তবে সবটাই লোক দেখানো , আসলে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। যেমন সাজানো নাটকের শেষ সিনে সমস্ত সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়েছিল নীভাকে দিয়ে , ঠিক তেমনি।
অর্পণ বলতো , আমার ছেলে শিক্ষক হবে , আমরা যে ভালো শিক্ষায় ওকে বড়ো করব , ঐ শিক্ষাই ও সমাজ ছড়িয়ে দেবে , সমাজটাকে পাল্টানো খুব প্রয়োজন।
-কতটুকু শিক্ষা আমি একা ওকে দিতে পেরেছি জানি না , তবে তোমার স্বপ্ন পূরণ করেছি আমরা , তোমার সৌরভ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক , সবথেকে কমবয়সী শিক্ষক , মেধাবী ছেলের এই বয়সেই কত সম্মান , ওর মা আস্তাকুঁড় থেকে উঠে এলেও , ওর বাবা তো আসে নি , তাই তোমার সু-চরিত্রের সৌরভে ও সুরভিত , ওর ছড়ানো সৌরভে আমিও সম্মানিত।
অর্পণের ফটো-টাকে বুকে জড়িয়ে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লেন নীভা দেবী।
বাইশ বছর আগের নীভা’র আজকের নীভা দেবী হয়ে ওঠার নেপথ্যেও আর এক নারী । ছেলে বড়ো হচ্ছে , স্কুলের বাচ্চাদের বাবা-মা অনেকেই পরিচিত , নীভা খুব লজ্জা পেত এই ভেবে যে – অর্পণের স্ত্রী, সৌরভের মা – দাসী বৃত্তি করে বেঁচে থাকবে! কিন্তু কে ওকে রাস্তা দেখাবে , আর কি’ই ও করতে পারবে ! সেই সময় নতুন বাড়ির বৌদি ওকে জিজ্ঞাসা করেছিল , নীভা কেন অন্য কিছু করার কথা ভাবছে না ! এরকম একজন সুন্দর, নম্র ভদ্র , ব্যক্তিত্বময়ী মেয়ে কেন নিজেকে এই গন্ডির মধ্যে আটকে রাখবে ! শিক্ষাগত যোগ্যতাই শেষ কথা নয় , এর বাইরেও অনেক কিছু আছে। সেই দিনের পর থেকে একটু একটু করে নীভাকে গুছিয়ে নিয়েছিল সায়ন্তনী বৌদি , একটা বড়ো এন.জি.ও -র দায়িত্বে ছিলেন উনি। সেদিনের সেই দিনগুলো ছিল বড়ই কঠিন , ছেলেকে ছেড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন , রোজগার নেই , শুধু ক্লাস আর শিখে যাওয়া। ছোট্ট ছেলেটাও কষ্ট সইতে শিখে গেল , মনখারাপের জল চোখেই শুকিয়ে নিত , ভিজতে দিত না নিজের গাল দু’টোও। শুধু রাত্রে শোওয়ার পর মায়ের বুকের ভিতর গুঁজে দিত মুখটা , সারা রাতে সরতো না একটুও । মনে ভাবতো ,পরের দিন সকালে মা আবার বেরিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যতটা আদর , মায়ের গায়ের গন্ধ মেখে নেওয়া যায় । এই সঅঅব ও বলেছে মা’কে, বড়ো হয়ে । প্রতিটি দিনের অক্লান্ত লড়াই সাফল্য এনে দিয়েছে , আজ সে অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ একজন মেকআপ আর্টিস্ট কাম বিউটিশিয়ান, স্কুল কলেজের ফাংশান-এ সাজানো থেকে শুরু করে, অনেক সেলিব্রিটিই আজ ওঁর কাস্টমারের তালিকায় । নিজে প্রশিক্ষণও দেন , তবে বিনা বেতনে , ওঁরই মতো যারা জীবনযুদ্ধে লড়াই করছে , তাদেরকে । উনি চান আর একজন বিমলা পিসি হয়ে উঠতে ।
ঘরের দরজায় প্রবল ধাক্কায় চমকে উঠে , দরজা খুলে দিলেন নীভা দেবী , চিৎকারে বাড়ি মাথায় করছেন পিসি – বাপাই ফোন করে পাচ্ছে না আমায় , কারণ ফোন সুইচড্ অফ হয়ে গেছে , ওনারাও পাচ্ছেন না বাপাইয়ের খবর , সত্যি তো, নীভা দেবী তো জানান নি ওঁদের , দুই সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা চরম দুশ্চিন্তায় প্রহর কাটাচ্ছেন । নিচের থেকে কেয়ার টেকার উঠে এসে ফোন দিয়েছেন পিসি কে , যাহ্ এত কান্ড ঘটে গেল , কিছুই টের পেলেন না , অতীত ওঁকে সেই বাইশ বছর আগে ঠেলে দিয়েছিল যে।
ফোনটা নিয়ে আশীর্বাদ করলেন ছেলে – বৌ- কে । তারপর অর্পণের ফটোর সামনে এসে বসলেন তিন নারী – নীভা দেবী ছেলের বিবাহ সমাপনের খবর জানিয়ে করজোড়ে সন্তানকে আশীর্বাদ দিতে বললেন। বৃদ্ধা মা ছেলের ফটোতে হাত বোলাতে লাগলেন। নীভা দেবী তখন ঈশ্বরকে স্মরণ করে কড়জোরে সন্তানের সুখ সমৃদ্ধি দীর্ঘ জীবন কামনা করছেন , আর মনে মনে বলে চলেছেন ওঁর কান্নায় যেন ছেলের কোনো ক্ষতি না হয় – এ কান্না তো জীবনযুদ্ধে জিতে যাওয়ার কান্না , ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখার আনন্দাশ্রু , আর এমন সুখের দিনে অর্পণ কে না পাওয়ার শোকাশ্রু – এতে ছেলের যেন কোনো অমঙ্গল না হয়।
 —– সমাপ্ত—–
চিত্রঋণঃ গুগল

Related posts

মেমারি শহরে পুলিশের নজরদারী অভিযান

E Zero Point

করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যঃ -ডাঃ মহম্মদ মেহবুব এলাহী, গুয়ান্ঝাও সিটি, চীন

E Zero Point

৩০ জুন পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল স্থগিতঃ রেলমন্ত্রক

E Zero Point

মতামত দিন