পরাগজ্যোতি ঘোষ
প্রথম কিস্তি আশাকরি পাঠকদের মনে রেখাপাত করেছে। ZERO POINT আপনাদের প্রানের পত্রিকা – তাই প্রতিবেদক ও সাহস রাখে আপনাদের প্রানে খুশির আলো জাগানোর মতো ইচ্ছা প্রকাশ করতে এই পত্রিকার মাধ্যমে। একটা কথা না – বললেই নয় পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার আলি মিলন এক অন্য জগতের মানুষ। ভ্রাতৃপ্রতিম এই মানুষটাকে যত দেখি অবাক হই। আপনাদের অবগতির জন্য জানাই এই মানুষটার মেয়ে ও বৌ এখন গুজরাটে লকডাউন। একাকী মানুষটা কিন্তু সব ভুলে পত্রিকার জন্য নিবেদিত প্রাণ। শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথা লিখতে গিয়ে কেন সম্পাদক মহাশয়ের কথা লিখছি, ভেবে হয়তো অনেকে অবাক হচ্ছেন। আসলে কথা গুলো এই কারণেই লিখলাম যে পত্রিকার সম্পাদক এতটা দায়বদ্ধ – সেখানে যা কিছুই পরিবেশিত হয় জানবেন একদম – খাঁটি – কলম এখানে বিক্রি হয় না।
এবার ফিরে আসি শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথায়। ঠাকুর বললেন –
“সব বৈশিষ্ট্যের স্বতঃ গতি
এক আদর্শে হ’লে
পারস্পরিক সুহৃৎ চলায়
সমাজ তাকেই বলে।”
আমরা সমাজকে কেমন দেখছি। সত্যিই কি আমরা একে অপরের কথা ভাবি। আর ভাবিনা বলেই এত দুর্গতি। সমাজের সৃষ্টি হয় ব্যক্তি থেকে। তাই সবার প্রথমে নিজেকে তৈরি করা লাগে। নিজে তৈরি হলে পরিবার তৈরি হবে, পরিবার থেকে সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্র। আর রাষ্ট্র থেকে পৃথিবী।
তাহলে নিজেকে কি করে তৈরি করব। পাঁচ বছরে ‘নাম’ এবং বারো বছরে ‘দীক্ষা’ নেওয়া লাগবে। অনেক আধুনিকতাবাদী হয়তো মুচকি হাসছেন আমার কথা শুনে। কিন্তু আমি বলছি যদি আমার জীবনে এটা আমি পেতাম হতে পারতো এ জীবন কিছুটা অন্য রকম। লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একবার পাবনায় হিমাইতপুর আশ্রমে শ্রী শ্রী ঠাকুরের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি ঠাকুরকে বলেছিলেন যে তিনি ‘নাস্তিক’ এসব ধর্ম – কর্ম তিনি মানেন না। তা ঠাকুর কি তাঁকে ঈশ্বরকে দেখাতে পারেন, পরম দয়াল উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর নিজের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন – তাই তিনি ঈশ্বরকেও দেখাতে পারেন। গভীরতার ও অনেক গভীরে দয়ালের বিচরণ। খুব সহজ কথায় তাঁর সমাধান। তিনি পঞ্চনীতি র – প্রচলন করে সমাজ গঠন করতে চাইলেন। সেগুলি হলো ‘যজন’, ‘যাজন’, ‘ইষ্টভৃতি’ , ‘স্বস্ত্যয়িনী’ ও ‘সদাচার’ । তিনি বলতেন কোনো মানুষ যদি এই পঞ্চবিধান নিখুঁতভাবে প্রতিপালন করতে পারেন – তিনি দেবতায় পরিনত হন। ঠাকুর বলতেন যে, তিনি সেই কথাগুলি বলেন যা তিনি নিজে পালন করেন। তিনি যা করেন না – তা তিনি কখনো ভক্তদের বলেননি। তিনি বলেন –
“যজন যাজন ইষ্টভৃতি
করলে কাটে মহাভীতি।।”
তাহলে প্রথমেই বলা দরকার, যজন কাকে বলে। যজন শব্দের অর্থ হলো যুক্ত হওয়া। শ্রী শ্রী ঠাকুরের দীক্ষা প্রাপ্ত হয়ে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁর হয়ে ওঠাকে বলে যজন। যাজন হলো আমি নিজে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে আনন্দ অনুভব করছি সেই কথা মানুষকে বলা। এটি হলো সবথেকে বড় কাজ। ধরুন আপনার গাড়ি চালানোর সরকারী লাইসেন্স আছে। আপনি গাড়ি নিয়ম মেনে চালান। কিন্তু অন্য একজন লাইসেন্সহীন মানুষ আপনাকে মত্ত অবস্থায় ধাক্কা মারবেনা এমন গ্যারান্টি আপনি দিতে পারবেন না। তাই আপনার পাশাপাশি মানুষদের তাঁর পথে না নিয়ে এলে আপনার সার্বিক মঙ্গল কখনই সম্ভব নয়। আর ইষ্টভৃতি হলো ইষ্টের উদ্দেশ্যে কোন কিছু নিবেদন না করে – কোন কিছু গ্রহণ না করা। এটি সব ধর্মেরই প্রাচীননীতি এবং মাসের শেষ দিন তার ইষ্ট সকাশে পাঠানো হলো একটি পুন্য কাজ। এই তিনটি কাজ করলে মানুষ *”মহাভীতি”* অর্থাৎ মৃত্যু ভয় থেকে রক্ষা পায়।
( ক্রমশঃ)
প্রথম কিস্তিটি পড়ুনঃ যেমন দেখি তাঁকে : পরাগজ্যোতি ঘোষ (প্রথম কিস্তি)