06/10/2024 : 10:23 AM
অন্যান্য

মোটু আর পাতলুর সাথে লক্ষীর জন্মদিন পালন করল বীরভূম জেলা পুলিশের “মাতৃ স্নেহ” দল

বিশেষ প্রতিবেদনঃ করোনার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লকডাউন জরুরী একথা এক মাস ধরে মানুষ বুঝে গেছে। আর সেই লকডাউনে মানুষের জীবন যাতে সুরক্ষিত থাকে তা যেমন দেখছে পুলিশ-প্রশাসন-স্বাস্থ্য কর্মীরা ঠিক ছোট বাচ্চারা যাতে কোন মানসিক অবসাদে না ভোগে সেদিকেও খেয়াল রাখছেন তারা।

পূর্বে বীরভূম জেলা পুলিশের উদ্যোগে করোনা সচেতনতার অভিনব অভিযান দেখেছিলাম আমরা, বীরভূমে বহুরূপী সম্প্রদায়ের করোনা সচেতনতা অভিযান । গত ২৫ ও ২৬ এপ্রিল সেরকমই এক অভিনব উদ্দ্যোগ দেখা গেল বীরভূম পুলিশের।

গত ২৫শে এপ্রিল, বীরভূমের ময়ূরেশ্বর গ্রামে একটি বাড়িতে একলা বসে রয়েছে ছোট্ট লক্ষী, পুরো নাম লক্ষীশ্বর সরেন। বাবা মাঠে গেছে চাষ করতে। মা ও ঘরের কাজে ব্যস্ত। মা-বাবা বলেছে বাইরে এক ভয়ংকর ভাইরাস আছে। সেই জন্য তার বাইরে বেরিয়ে খেলাও মানা। এমন সময় কিছু পুলিশ দিদিমনি এসে ডাকলো, এনারা, বীরভূম জেলা পুলিশের “মাতৃ স্নেহ” দল। লক্ষীর ব্যাপারে জানার সাথে সাথে বাড়ির প্রত্যেক সদস্য মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান ব্যবহার করছে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। লক্ষী সামনে আসতেই তার কাছে জানতে চাওয়া হলো তার বয়স? লক্ষীর মায়ের তখন মনে পড়ল কালকেই তো লক্ষীর জন্মদিন। কালকেই ৩ বছরে পা দেবে লক্ষী। কিন্তু তার মা বলল লক্ষীর জন্মদিন পালন করার উপায় কই? এই নিরাপত্তাজনিত বিধিনিষেধের কারণে ছোট্ট লক্ষ্মীর জন্মদিন পালন করতে অক্ষম তার মা-বাবা। লক্ষ্মী তার মায়ের দিকে মন খারাপ করে তাকালো, বুঝলো কাল তার জন্মদিন হবে না। মাতৃস্নেহের পুলিশ দিদিরা আবার সব্বাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে এবং ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

তার পরদিনই গত ২৬শে এপ্রিল, বীরভূম জেলা পুলিশের “মাতৃ স্নেহ” দল হাজির হল লক্ষীর বাড়িতে। তার মা রান্না করছিল। লক্ষীর বাবা তখন টুকিটাকি কাজে ব্যস্ত। ঠিক তখনই আবার কেউ এল দরজায়। কালকের সেই পুলিশ দিদিরাই। লক্ষী পুলিশ দিদিদের দেখে ছুট্টে এল। ওমা পুলিশ দিদির হাতে একটা বাক্স, ওপরে একটা ছুরিও সাঁটানো,”এটা কি গো? “আন্টি বললো, “এটা হলো কেক, তুমি কাটবে। আরো সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। লক্ষী বাইরে এসে দেখল মুখে মাস্ক পড়া প্রিয় কার্টুনের দুটি চরিত্র মোটু আর পাতলু দাঁড়িয়ে আছে। লক্ষী তখন আনন্দে আত্মহারা। মোটু দা আর পাতলু দা দূরে দাঁড়িয়েই হাত নাড়ছে। লক্ষী গলা উঁচু করে বললো, “এসো এসো এদিকে”, তারা ইশারায় বুঝিয়ে দিল যে ঘরে ঢুকবে না। তাই ভাই বোন কে বাইরে নিয়ে এসে কেক কাটা হলো লক্ষীর। সে কতরকম নিয়ম, মুখে মাস্ক, মাথায় টুপি, স্যানিটাইজার না কি যেন ওটা দিয়ে হাত নাকি একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। ওটা হাতে মেখে কেক কাটা হল। তারপর পুলিশ দিদিরা নিজের হাতে খাইয়ে দিল মিষ্টি আর পায়েস। সব শেষে বিদায় বেলায় মোটু দা আর পাতলু দা’র দিকে তাকিয়ে মায়া মেশানো গলায় লক্ষী বললো, “ভাইরাস চলে গেলে, তোমরা আবার এসো। আমরা তখন একসাথে বাইরে ঘুরতে যাব!” ছোট হলেও সব বোঝে লক্ষী।

বীরভূম জেলা পুলিশের এহেন অভিনব উদ্দ্যোগ মানুষের মনে গেঁথে থাকবে। করোনার ভয় চলে যাবে, জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, পুলিশ ব্যস্ত হবে অপরাধের কূল কিনারা করতে কিন্তু পুলিশের এই মানবিক মুখ লক্ষীর মত মেয়ের মানসপটে স্মৃতি হয়ে থাকবে। (সূত্রঃ বীরভূম জেলা পুলিশ)

Related posts

পূর্ব বর্ধমান জেলাতে প্রথম করোনার পজিটিভ কেস, জানালেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী

E Zero Point

আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

E Zero Point

যেমন দেখি তাঁকে : পরাগজ্যোতি ঘোষ (প্রথম কিস্তি)

E Zero Point

মতামত দিন