মইদুল ইসলাম
কাল থেকে ফেসবুকে নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি উপলক্ষে স্ক্রল করা দায়, প্রত্যেক পাতায় একাধিক নজরুল গান, কবিতা , আবৃত্তি। একই ঘটনা অবশ্য ঘটে বহু বছর আগে গত হওয়া বাঙালির আরো দুইজন “ঠাকুর” কে নিয়ে নেতাজি এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নজরুলকে ঘিরে অবশ্য প্রীতি চাগাড় দিয়ে উঠেছে সম্প্রতি। যত বিজেপি-আরএস এস বঙ্গকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, তত বেশি শ্রধাঞ্জলির বহর বাড়ছে। বাঙালি লিবেরালের এর থেকে বেশি দৌড় ইদানিং আর দেখা যায় না। ইতিহাস কপচানো আর ইতিহাসের পাতায় আটকে থেকে আবেগ মথিত শ্রদ্ধাঞ্জলি। বাঙালির জীবনযাপনের ধরণ অবশ্য মহানজনেদের দর্শনের একদম উল্টো। সেখানে সম্প্রীতি এবং একতার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। বাড়ির পাশে নর্দমা নিয়ে পড়শীর সঙ্গে বা ইলেকট্রিক পোল নিয়ে পাড়াপড়শির সঙ্গে কিংবা ওপাড়ার অমুকের শ্রীবৃদ্ধি হলে সম্প্রীতি-একতার ছিটেফোঁটাও উবে যায়। তখন দর্শন হয় পরশ্রীকাতরতা। ইতিহাসে আটকে থাকলে যা হয় আর কি !
তাহলে মধ্যবিত্ত বাঙালির একতা বলতে কি কিছুই নেই? আছে বৈকি। যেমন দেখা যাচ্ছে আমপান পরবর্তী কলকাতায়। বাড়িতে কারেন্ট নেই, তাই চাঁদা তুলে ঘুষ দিয়ে লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে এসে পোল সারাই চলছে। পাশের পাড়া ওৎ পেতে তাকিয়ে আছে কখন লাইনম্যান পোল থেকে নামবে। খপ করে ধরে নিজের পাড়ায় হাইজ্যাক! তারজন্য দশ-বিশ হাজার ঘুষ লাগে কুছ পরোয়া নেহি ! পাড়াপ্রতিবেশী এককাট্টা! দুদিন পরে অবশ্য চেঁচামেচি হবে শালা ঘুষ ছাড়া কিছু হয় না।
সন্দেশখালিতে আবার অন্যদৃশ্য। ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করতে সরকারের অপেক্ষা না করে কয়েকশো মানুষ নিজেরাই বাঁধ মেরামতের কাজে হাত লাগিয়েছে। নাহলে প্রায় ১০০ গ্রাম ভেসে যাবে।
শহরের প্রগতিশীলদের চিন্তার দৈন্যতা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। ইতিহাস বলছে প্রগতিশীলদের যখন চিন্তার দৈন্যতা দেখা দেয় তখন সেই জাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। নজরুল, রবিঠাকুর এবং সুভাষ বোসের জন্ম দিনে ইতিহাসে আটকে থাকা বাঙালির দৈন্যতা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।