29/03/2024 : 1:50 PM
টলি-বলি-কলি-হলিবিনোদন

মহানায়ক উত্তম কুমার – আজও বাঙালীর শয়নে, স্বপনে, জাগরণে ও বিনোদনে

রজত মল্লিক

বড় আফসোস হয় মানুষটাকে একটিবার চোখে না দেখতে পাওয়ার দুর্ভাগ্যের জন্য। তবু মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি মহানায়কের মৃত্যুর ৩৯ বছর পরেও তিনি ভীষণভাবে জীবিত বাঙালীর শয়নে,স্বপনে,জাগরণে ও বিনোদনে।

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আজকের দিনটিতে কলকাতার আহিরীটোলায় জন্মগ্রহণ করেন অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়।পিতা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায়।মা চপলাদেবী।সহধর্মিনী গৌরী দেবী।তিন ভাই অরুণ বরুণ তরুণ এর মধ্যে বড়ভাই উত্তমকুমার।বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক,অভিনেতা, প্রযোজক, নির্দেশক, সুরকার নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী এবং মঞ্চাভিনেতা মহানায়ক উত্তম কুমারের জন্মদিন রোজই বাঙালির মননে।১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চলে গিয়েছিলেন তিনি।প্রথম জীবনে নাটকাভিনয়ের আগ্রহ ছিল।কৃষ্টি ও সৃষ্টি নামে নিজেদের ক্লাব ছিল ভবানীপুরে।সেখানে “আজকাল” নাটক করেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।বৈশাখী নাট্যসংস্থায় “শাজাহান” নাটকে দিলদার করেছেন।ভাই তরুণকুমার ছিলেন সহ অভিনেতা।

শৌখিন দলে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ও সত্য বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন দুই পুরুষ,উত্তরা ও কঙ্কাবতীর ঘাট নাটকে।ছবির জগতে সবে সাফল্য আসছে এমন সময় স্টার থিয়েটারে যোগ দেন ১৯৫৩ সালে।শ্যামলী নাটকে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে নায়ক অনিলের ভূমিকায় উত্তমকুমারের অভিনয় নাট্যজগতে সাড়া ফেলে দেয়।

টানা ২৬ মাস তিনি এই নাটকে অভিনয় করেছেন।পেশাদার রঙ্গমঞ্চে এটাই তাঁর প্রথম ও শেষ অভিনয়।তাঁর স্মৃতিতে কলকাতার অ্যালবার্ট রোর্ডের নতুন নামকরণ হয়েছে উত্তমকুমার সরণি।দক্ষিণ কলকাতার একটি মঞ্চের নাম উত্তম মঞ্চ এবং বর্তমানে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে মহানায়ক উত্তমকুমার।তাঁর আরও একটি বিশেষ গুণ কমেডি।কমেডি এক বিচিত্র হিসাবনিকাশের ব্যাপার,মানব মনের একাগ্র অধ্যয়ন।এই অধ্যয়নের ব্যাপারে উত্তমকুমার তাঁর রসিক চরিত্রটির নানারকম বিপদ আপদ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রটির প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিলেন।তাই কমেডিয়ান না হয়েও উত্তমকুমার ছিলেন কমেডির অ্যাকাউন্টেন্ট।

তাঁর কর্মজীবন ১৯৪৫ থেকে ১৯৮০ সাল।শুধুই পেশাদারিত্ব নয়,শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলা ও হিন্দি সিনেমা জগৎ তিনি সমানভাবে দাপিয়েছিলেন।রাজকাপুর বলেছিলেন “উত্তমকুমার ছিলেন ভারতের একজন আধুনিক এবং সপ্রতিভ অভিনেতা।”বৈজন্তীমালা বলেছিলেন “অন্য নায়কদের তুলনায় তাঁর বাচনভঙ্গী ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।”উত্তমকুমারের প্রাপ্ত পুরস্কার নিয়ে আলোচোনা করলাম না কারণ উনি নিজেই এমন একটি পুরস্কার যা গ্রহণ করেছি আমরা,বাঙালীরা।এ আমাদের দেশের ও জাতির গর্ব।বাংলা ছায়াছবিতে উত্তম-সুচিত্রা , উত্তম-সুপ্রিয়া, উত্তম-সাবিত্রী ছিল তিন ত্রয়ী জুটি।এছাড়াও উত্তম কুমার যে সমস্ত অভিনেত্রীর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম মাধবী মুখার্জি,মালা সিনহা,শর্মিলা ঠাকুর,অঞ্জনা ভৌমিক,তনুজা,অপর্ণা সেন,
সন্ধ্যারাণী,অরুন্ধুতি দেবী,কাবেরী বোস এবং সুমিত্রা মুখার্জি।যে গানগুলি স্মরণে এলেই চোখে ভাসে উত্তমকুমারের ঠোঁটের সঞ্চালন সেগুলির ভেতর অন্যতম ১৯৫৭ সালে হারানো সুর ছবিতে আজ দুজনার দুটি পথ,১৯৬৭ সালে এ্যান্টনী ফিরিঙ্গী ছবিতে আমি যে জলসাঘরে,১৯৬১ সালে সপ্তপদী ছবিতে এই পথ যদি না শেষ হয়, ১৯৫৫ সালে সবার উপরে ছবিতে ঘুম ঘুম চাঁদ,১৯৭৫ সালে অমানুষ ছবিতে দিল অ্যায়সা কিসিনে মেরা তোরা,১৯৭৯ সালে দরিয়ান ছবিতে জিন্দেগী মেরে ঘর আনা,পৃথিবী আমারে চায় ছবিতে নিলামওয়ালা ছ আনা এবং ১৯৮০ সালে ওগো বধূ সুন্দরী অর্থাৎ জীবনের শেষ ছবিতে এই তো জীবন,শিখতে তোমায় হবেই,আমি একজন শান্তশিষ্ট পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক,ইত্যাদি।

উত্তমকুমার অভিনীত অগণিত ছবির ভেতর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি সন্ন্যাসী রাজা,নায়ক,অমানুষ,আনন্দ আশ্রম,চাওয়া পাওয়া,হারানো সুর,বিপাশা, ভ্রান্তিবিলাস,জীবনতৃষ্ণা,চিড়িয়াখানা, কমললতা,সাড়ে চুয়াত্তর,সপ্তপদী,ঝিন্দের বন্দী,এ্যান্টনী ফিরিঙ্গী,শিউলি বাড়ি,নায়িকা সংবাদ,বনপলাশির পদাবলী,চৌরঙ্গী, দৃষ্টিদান,ছদ্মবেশী,কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, জতুগৃহ,যদি জানতেম,উত্তর ফাল্গুনী, দেবদাস,নিশিপদ্ম,স্ত্রী,মরুতীর্থ হিংলাজ, প্রতিশোধ,শুধু একটি বছর,রাজকন্যা, রাতভোর,গলি থেকে রাজপথ,দুই পুরুষ,দুই পৃথিবী,মোমের আলো,রাজা সাজার খেলা, শঙ্খবেলা,বড়দিদি,উত্তরায়ণ,বিলম্বিত লয়, অগ্নীশ্বর,ওরা থাকে ওধারে,ছিন্নপত্র,এখানে পিঞ্জর,ছোটিসি মুলাকাত,অভয়ের বিয়ে,সব্যসাচী,বসু পরিবার,দ্বীপ জ্বেলে যাই,কলঙ্কিত নায়ক,শিল্পী,রাইকমল, ইন্দ্রাণী,রাজাদ্রোহী,লাল পাথর,গৃহদাহ,
সোনার হরিণ,মায়ামৃগ,ধন্যি মেয়ে,মন নিয়ে,শেষ অঙ্ক,শাপমোচন,সাগরিকা,
ইন্দ্রানী,সবার উপরে,খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন,থানা থেকে আসছি,
অপরিচিত,বিচারক,শ্রীকান্ত,রাতের রজনীগন্ধা, চৌরঙ্গী,স্ত্রী,জীবন মৃত্যু,দুই পৃথিবী,হাত বাড়ালেই বন্ধু,সেই চোখ,কাল তুমি আলেয়া,সদানন্দের মেলা, সাথীহারা,তাসের ঘর, অন্নপূর্ণার মন্দির,হারানো সুর,দেয়া নেয়া,ওগো বড় মানুষের মেয়ে,পথে হলো দেরি, সূর্যতোরণ,সাহেব বিবি গোলাম,শুকসারি এবং ১৯৮০ সালে মৃত্যুর মুহুর্তে তাঁর শেষ ছবি “ওগো বধূ সুন্দরী।”

শিল্পীসত্তার বাইরে তিনি ছিলেন ফুটবলপ্রেমী এবং মোহন বাগানের অন্ধ সাপোর্টার।বাঙালীর মনে বাংলা ছবির আইকন হয়ে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন মহানায়ক উত্তমকুমার চিরদিন চিরকাল।

Related posts

পাওলি দাম এবার হিন্দি সিনেমায়

E Zero Point

সম্প্রীতির শর্ট ফিল্ম “চিন্তাধারা”

E Zero Point

উত্তরবঙ্গের প্রথম ভৌতিক ও রোমাঞ্চকর স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির কাজ চলছে, মুক্তির অপেক্ষায় সকলে

E Zero Point

মতামত দিন