জিরো পয়েন্ট নিউজ – জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, ৭ ডিসেম্বর ২০২১:
ক্ষেত জমির দিকে হঠাৎ তাকালে বুঝতে কষ্ট হয় এটা কোন ঋতু – শীত না বর্ষা। শুধু ক্ষেত জমিই বা কেন পথচলতি মানুষের হাতে ছাতা বা পরণে রেনকোট দেখে একই ভুল হবে। প্রকৃতির কাছে মানুষ যে কত অসহায় সেই প্রমাণ আবার পাওয়া গেল। শীতকালে নিম্নচাপ বিরল হলেও বঙ্গোপসাগরের বুকে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে গত দু’দিন ধরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কখনো একটানা ঝিরিঝিরি কখনো বা প্রবল বৃষ্টির জন্য বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষেতের জমিতে জল জমে গেছে। এরফলে পাকা আমন ধানের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি আলু বসানোর ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
মাঠ থেকে পাকা আমন ধান খেটে খামারে তোলার সময় হয়েছে। অন্যান্য বছর এই সময় ধান কেটে খামারে নিয়ে আসা হয়।সেই উদ্দেশ্যে বহু এলাকায় ধান কেটে মাঠের মধ্যেই জড়ো করে রাখা আছে। কয়েক দিন আগে প্রবল বৃষ্টিপাত জনিত কারণে মাঠ ভিজে থাকায় সেই ধান খামারে আনা যায়নি। চাষীদের আশঙ্কা মাটিতে স্যাঁতস্যাঁতেভাব থাকায় মাঠের মধ্যে জড়ো করে রাখা ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাটি শুকনো হতে না হতেই গত ৪ ঠা ডিসেম্বর থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে চাষীদের মাথায় কার্যত হাত পড়ে গেছে। একে ফসলের দাম নাই, তার উপর সারের চড়া দাম। প্রবল ক্ষতির আশঙ্কায় তারা আতঙ্কিত।
এদিকে আলু চাষের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ মাঠ এখনো কর্দমাক্ত। কিছু কিছু জমিতে আলু বসানোর কাজ শুরু হলেও গত দু’দিনের বৃষ্টিতে সেইসব জমি আজ জলের নীচে। এই রকম করুণ দৃশ্য দেখা গেল হুগলির আরামবাগের মলয়পুর অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে। সেখানকার চাষীরা বেশ কিছু জমিতে আলু বপন করে। এদিকে গত ৫ ই ডিসেম্বর প্রায় সারারাত ধরে প্রবল বৃষ্টির জন্য সেইসব জমি পুরোপুরি জলের তলায়। চাষীদের আশঙ্কা এরফলে তাদের প্রচুর ক্ষতি হবে।
কেশবপুরের বড় ঘোষপাড়ার চাষী স্বাধীন ঘোষ বললেন – চড়া দাম দিয়ে সার ও বীজ কিনে সবে আলু বসাতে পেরেছিলাম। কিন্তু যেভাবে মাঠে জল জমে গেছে তাতে সমস্ত আলু পচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মাঠ শুকনো হওয়ার পর নতুন করে বীজ ও সার কিনে চাষ করার মত আর্থিক সামর্থ্য নাই। এদিকে সমস্ত ধানও খামারে তুলতে পারিনি। অর্থাৎ ধান ও আলু দুটোতেই ক্ষতির আশঙ্কা। এখন সরকার যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে খুব সুবিধা হয়। তবে যেভাবে ঘনঘন নিম্নচাপ হচ্ছে সেক্ষেত্রেও একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। অন্যান্য চাষীদের বক্তব্যও তাই।
এই অকাল নিম্নচাপ জনিত বৃষ্টিপাত দেখে মা-দিদির কাছে স্হানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সার্থকের প্রশ্ন- তাহলে কি জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে গেল? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর তার মা-দিদির কাছে নাই। আরামবাগ কলেজে পাঠরতা বিএ পঞ্চম সেমেষ্টারের ছাত্রী দিদি মনীষার অসহায় উত্তর – অতিরিক্ত দূষণের জন্য ঋতু পরিবর্তন হতেও পারে। শুধু সার্থক নয়, এই প্রশ্ন এখন অনেকের মুখেই ঘুরছে।