06/05/2025 : 7:08 PM
আমার বাংলাট্রেন্ডিং নিউজ

দুয়ারে পঞ্চায়েত নির্বাচনঃ ২১ শে জুলাই “শহীদ মঞ্চ” থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দল কি কঠোর হতে পারবে?

জিরো পয়েন্ট বিশেষ প্রতিবেদন১৩ জুলাই ২০২২:

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

মাঝে মাত্র কয়েকটি দিন। তারপরই ‘অমর’ ২১ শে জুলাই। এটা নিছকই একটা ক্যালেণ্ডারের তারিখ নয়, তৃণমূলের কাছে এই দিনটার গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যময়। দিনটি সফল করার জন্য তৃণমূলের সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীরা আক্ষরিক অর্থেই আদাজল খেয়ে প্রচারে নেমে পড়েছে। নিজ নিজ এলাকায় চলছে জোরদার প্রচার। দু’টো বছর পর লক্ষ লক্ষ দলীয় কর্মীদের উপস্থিতিতে বক্তব্য রাখবেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জ্জী। দলকে নতুন দিশা দেখাবেন।

সিপিএমের রিগিং রুখতে এবং নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে কংগ্রেসের তৎকালীন যুব সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর ডাকে ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই যুব কংগ্রেসের হাজার হাজার কর্মী মহাকরণ ঘেরাও করে। পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ সবার জানা। পুলিশের গুলিতে তেরো জন যুব কংগ্রেস কর্মী মারা যায়। এই ঘটনা মমতা ব্যানার্জ্জীর রাজনৈতিক জীবনের এক বড় ‘টার্নিং’ পয়েন্ট। তারপর থেকে তিনি প্রথমে যুব কংগ্রেসের ও পরে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে এই দিনটি ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে পালন করে আসছেন। করোনা পরবর্তীকালে তৃণমূল কর্মীদের কাছে এবারে দিনটির তাৎপর্য আলাদা।

তৃণমূলের একশ্রেণী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কাটমানি ও তোলাবাজীর অভিযোগ, মমতার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা নেতাদের দলত্যাগ, পুরনো দিনের কর্মীদের ক্ষোভ, কয়েকটি আসনের লোভে ধর্মীয় নেতার সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোট, বাংলা দখলের লক্ষ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সর্বাত্মক প্রচার সত্ত্বেও সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পর ২১ শে জুলাইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের এটাই প্রথম প্রকাশ্য সমাবেশ। যদিও সেটা বড় ব্যাপার নয়।

ইতিমধ্যে তৃণমূলের সংগঠনে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছে অভিষেক ব্যানার্জ্জী। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে দলের পর্যবেক্ষকের পদ তুলে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তৃণমূলের বহুল চর্চিত ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি বাস্তবে সবক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সহ একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক পদ ‘হোল্ড’ করছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়েও এখনো অনেককেই ব্লক বা অঞ্চল সভাপতি সহ একাধিক প্রশাসনিক পদ অলংকৃত করতে দেখা যাচ্ছে । ফলে দলে নিজেদের অপরিহার্য মনে করে অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় নিজেদের ‘বেতাজ বাদশাহ’ ভাবতে শুরু করে দেয়। তখন তিনি শোনা, দেখা ও বিচার করার বিষয়টা নিজের পরিবর্তে অপরের হাতে ছেড়ে দেন। এদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ক্ষমতার দালাল চক্র। এতে লাভের পরিবর্তে দলের যে ক্ষতি হচ্ছিল সেটা পিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে ২১ শে জুলাই হয়তো ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কার্যকর হতে পারে। এখন দেখার বিষয় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ভোগকারীরা স্বেচ্ছায় একটি বাদে নিজেদের অন্যান্য পদগুলো ছেড়ে দেন কিনা। অস্বীকার করার উপায় নেই দলের সংগঠন বৃদ্ধিতে এদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

মমতা ব্যানার্জ্জী, এখন অভিষেকও, গত কয়েক বছর ধরেই দলের দুর্দিনের অর্থাৎ জন্মলগ্ন থেকে জড়িত এবং বর্তমানে নিষ্ক্রিয় কর্মীদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় সব জায়গাতেই তার নির্দেশকে কার্যত উপেক্ষা করা হয়েছে। পরিবর্তে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যারা অন্য দলের দালালি করেছে এবং পরে তৃণমূলে যোগদান করেছে তাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্হানীয় স্তরের এক শ্রেণির নেতার প্রশ্রয়ে এদের জন্যই তৃণমূলের যত দুর্নাম। তৃণমূল নেতৃত্ব কি এদের পরিবর্তে পুরনো দিনের কর্মীদের মর্যাদা দিতে পারবে? দলের সত্যিকারের শ্রীবৃদ্ধি চাইলে পুরনোদের সঙ্গে সঙ্গে নিজের দলের নতুনদের গুরুত্ব দিতেই হবে। দেখার বিষয় দলের সুদিনে অন্য দল থেকে নিজের স্বার্থে আসা ব্যক্তিরা না দলের দুর্দিনের কর্মীরা এই গুরুত্ব পায়। আশার বাণী শুনিয়ে ‘শহীদ দিবস’-এ আবার তাদের শহীদ অর্থাৎ গুরুত্বহীন করে দেওয়া হবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

গত লোকসভা নির্বাচন তো বটেই এমনকি সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনেও অনেক বিধানসভা এলাকায় অধিকাংশ বুথে তৃণমূল কংগ্রেস হেরে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে জনগণের মধ্যে ব্লক সভাপতির সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েত বা বুথ সভাপতির অস্বচ্ছ ভাবমূর্তি ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাদের জন্য কোনো সদর্থক বার্তা থাকে কিনা সেটা অবশ্যই দেখার। শুধু বুথ বা অঞ্চল সভাপতিদের ‘স্কেপ গোট’ করা হবে না ব্লক সভাপতিদেরও পরিবর্তন করা হবে – ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ? দেরী করলেই সমস্যা। দুয়ারে কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন।

দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই দলের বেশ কয়েকজন জেলা ও ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চল সভাপতিদের পরিবর্তন করা হবে। অথচ এখনো স্হিতাবস্হা বজায় আছে। জনগণের কাছে যাদের ভাবমূর্তি খুবই খারাপ তারাই আছে সামনের সারিতে।

তেইশ জন জেলা সভাপতি, প্রায় সাড়ে ছ’হাজার অঞ্চল সভাপতি, শতাধিক শহর সভাপতি, প্রায় বাহাত্তর হাজার বুথ সভাপতি সহ হাজার খানেক অন্যান্য পদাধিকারী এবং সাংসদ ও বিধায়ক। এদের মধ্যে সামান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে বারবার ক্ষমতার অপব্যবহার ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সমাজ মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে রাজকীয় বাড়ি। হয়তো এদের সামনে রেখে পেছনে আরও অনেকেই আছে। মূলত এদের জন্যই দলকে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। দলনেত্রীর দিকে কুৎসিত আঙুল উঠছে। লক্ষ লক্ষ কর্মী-সমর্থকদের ভাবাবেগে আঘাত লাগছে। কার্যত বিরোধী শূন্য রাজ্যে এইসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দল কতটা কঠোর হতে পারে সেটা অবশ্যই দেখার। মানুষ কিন্তু এটাই চায়। দলকে নুন্যতম নিয়ম-শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

গত কয়েক বছর ধরে একটা প্রশ্ন বারবার উঠেছে – শহীদ দিবসে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরা নাকি মঞ্চে অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। পরিবর্তে হচ্ছে নাচ-গান। এটা ঠিকই শহীদ দিবস হলেও এটা আসলে তৃণমূলের রাজনৈতিক সভা।দূর থেকে আগত কর্মীদের জন্য কিছুটা মনোরঞ্জনের ব্যবস্হা রাখতেই হবে। এখন দেখার সবদিক সামলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কতটা গুরুত্ব পায়।

‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কার্যকর করা, পুরনোদের মর্যাদা দেওয়া, গদ্দারদের সরিয়ে দেওয়া, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে দলের সমর্থকদের আবেগকে গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হয়তো ২১ শে জুলাই পাওয়া যেতে পারে। এখন শুধু ভাল-মন্দের অপেক্ষা।

Related posts

পৌরনির্বাচনকে পাখির চোখ করে কর্মী সম্মেলন মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের

E Zero Point

পশুপাখি দত্তকঃ বর্ধমানের যুবক যুবতির অভিনব উদ্যোগ

E Zero Point

লড়াইটা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির কিন্তু বাঙালি মজেছে মিডিয়ার টিআরপি-তে

E Zero Point

মতামত দিন