19/04/2024 : 4:50 AM
আমার বাংলাদক্ষিণ বঙ্গপূর্ব বর্ধমানমেমারি

নকল সারের পর, নকল বীজআলুঃ মেমারির হিমঘরে স্থানীয় চাষীদের উত্তেজনা

জিরো পয়েন্ট নিউজ ডেস্ক, এম.কে হিমু, মেমারি, ৭ নভেম্বর ২০২২:


এক সপ্তাহের মধ্যে মেমারিতে দু-দুবার নকল কারবার। লাভবান ব্যবসায়ীরা, ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ চাষীরা। সম্প্রতি মেমারি রসুলপুরে তিরুপতি হিমঘরের আলু নষ্টের ঘটনায় আলু চাষীদের ক্ষতির ঘা এখনও শুকোয়নি। এরই মাঝে গত শনিবার ২৯ অক্টোবর পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির দেউলিয়া আলিপুরে ইফকোর প্যাকেটে নকল সার পাচার করা হচ্ছিল বলে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তারা গাড়ি দুটিকে আটক করে মেমারি থানায় খবর দেয়। মেমারি থানার পুলিশ গাড়ি দুটিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পাশাপাশি দু’টি গাড়ির চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতরা সারের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বলে পুলিশসূত্রে জানা যায়। ঘটনার তদন্ত করছে মেমারি থানার পুলিশ।

আর এক সপ্তাহ পরে আর এক শনিবার ৫ নভেম্বর মেমারি পৌর শহরের শেষপ্রান্তে এক হিমঘরে শনিবার বৈকালে হিমঘরে (ক্যাট আলু) আলুকে প্যাকেটজাত করা হচ্ছিল। পঞ্জাবে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ আলুর বস্তায় ভরা হচ্ছিল বলে অভিযোগ করেন বেশ কিছু স্থানীয় আলুচাষীরা। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় আলুচাষীরা সন্দেহ করছে, পাঞ্জাবের বীজ আলু হিসেবে বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যেই এই কাজ করা হচ্ছিল।

শনিবরা সন্ধ্যায় অজস্র আলুচাষী এই ঘটনার খবর পেয়ে মেমারির ওই হিমঘরে জমায়েত হয়ে হিমঘর মালিকপক্ষকে বিক্ষোভ দেখায়। জানা যায় আলু প্যাকেটজাত করার সময়, এক ব্যক্তিকে পাকড়াও করা হয়। অন্যদিকে হিমঘর মালিক কর্তৃপক্ষ নাকি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান সংবাদমাধ্যমকে। তিনি এও বলে যদি এধরেনর কোন ঘটনা ঘটে থাকে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাষীদের উত্তেজনা ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মেমারি থানার পুলিশ। পুলিশ মালিক পক্ষ ও উপস্থিত চাষীদের সাথে কথা বলে আশ্বাস দেন ঘটনার তদন্ত হবে এবং মেমারি ১ ব্লক আধিকারিক ও এগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্টকে খবর দেওয়া হবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। যদিও এখনও পর্যন্ত স্থানীয় চাষীদের পক্ষ থেকে এব্যপারে মেমারি থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি বলে জানা যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক আলুচাষী জানান, গত মরশুমে এই রাজ্যে আলুর ফলন কম হয়। হিমঘরে মজুত ক্যাট আলুকেই বীজ আলু হিসাবে চাষীদের কাছে পৌঁছে দিয়ে মুনাফা লোটার কাজে নেমে পড়েছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। কেএফ, এস, জেবি সিম্বলযুক্ত পঞ্জাবের বস্তা,  পঞ্জাবের স্টিকার, এমনকী বস্তার মুখ সেলাই করার জন্য যে সুতুলি দড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও পঞ্জাবের। অর্থাৎ পঞ্জাবের প্যাকেটে, খাবার আলুকে বীজ আলু হিসাবে বাজারে বিক্রি করতে মাঠে নেমে পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মেমারির এই হিমঘরে এই কারবারের সাথে যুক্ত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে বলে দাবী জানাচ্ছে স্থানীয় আলু চাষীরা।

আলুবীজ কেনার সময় সাধারণত চাষীরা বস্তার গায়ে লেখা লোগো দেখেন। বাজারের ভাষায় যাকে বলে ‘মার্কা’। মূলত পঞ্জাবের পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত সংস্থার ব্র্যান্ড বা মার্কাগুলির দিকেই চাষীদের নজর থাকে। মার্কা ছাড়াও বস্তার গায়ে আঁকা ছবি বা পরিচিত লোগোর দেখেও তা কেনেন চাষিরা। তবে সে লোগো যে নকল, তা বহু ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না।

বিশেষসূত্রে জানা যায়, রাজ্যে আলুবীজের এই জালিয়াতরা বেশ আঁটঘাট বেঁধেই কাজ শুরু করেন। ভিনরাজ্যে পাঠানোর নাম করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আলু কেনা হয়। তা রাখা হয় রাজ্যের সীমানার জেলাগুলোর হিমঘরে। এর পর নামী কোনও বীজ সংস্থার বস্তা হাতিয়ে হিমঘরের আলু ভরা হয়। বস্তাবন্দি আলুবীজ পঞ্জাবের নম্বরের ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় আশপাশের বীজের বাজারগুলিতে। এর পর চড়া দাবে তা চাষীদের বিক্রী করা হয়।

নকল বীজআলু থেকে নকল সারের কারবার গোটা দেশ সহ রাজ্যে চলছে রমরমিয়ে। যদিও জালিয়াতি রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রশাসন উদ্যোগী হলেও তাদের বুড়ো আঁঙুল দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনফার লোভে নকল কারবার করে চলেছে। অন্যদিকে সাধারণ চাষীরা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চাষ করে চলেছে অন্নদাতা হিসাবে। কিন্তু এই নকল সার, নকল বীজ কিনে কম ফলনের ফলে চোখের জলে ভাসছে চাষীর পরিবার – এর দায় কে নেবে?


Related posts

বর্জ্য পদার্থ প্লাস্টিক দ্বারা রাস্তা নির্মাণ বোহারে

E Zero Point

রাস্তার দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক মেমারিতে

E Zero Point

মন্তেশ্বরে সরকারি কর্মচারী, মহিলারা দুঃস্থদের পাশে

E Zero Point

মতামত দিন