তন্ময় কবিরাজ
এবারের ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে তেমন কোনো প্ল্যান নেই আবিরের। মেহুল আবদার করেছে, বাড়ির সামনে একটা নতুন পার্ক করেছে ওখানেই সে যাবে।মেহুলের ফুল খুব ভালো লাগে।বসন্তের শুরুতে ঝরা পাতার মধ্যে উঁকি দেওয়া পলাশফুল মেহুলের খুব প্রিয়।আবিরকে সে পলাশ ফুল দেবে বলে ঠিক করেছে। তাছাড়া,চারদিকে অন্য পার্কগুলোতে এতো ভিড় হয় যে,নিরিবিলিতে সময় কাটান যায় না।এই পার্কটা নতুন হয়েছে,লোকজনের আনাগোনাও কম। আবির পুলিশে চাকরি করে। ছুটি নেই। মেহুলের অনুরোধে একদিন যাহোক করে ছুটি বার করেছে।শান্তিতে একটু মনের কথা বলতে চায় মেহুল।
পার্কে গিয়ে মেহুল দেখলো আবিরের হাতে কলা, পাউরুটি,আর সেদ্ধ ডিম।অবাক হল মেহুল। প্রশ্ন করলো,”কি ব্যাপার আবির?”
“আজ ব্রেকফাস্ট , লাঞ্চ এখানেই হবে।তবে ঘরোয়া স্টাইলে।” উত্তর দিল আবির।
“কলা আমি খাবো না। ডিমটা খেবো।”সাফ বলে দিল মেহুল।
“খাবো বলে আনলাম,আর তুই খাবি না।”একটু হতাশ হলো আবির।তবে প্রসঙ্গ পাল্টে দিল সে কারন মেহুলকে সে চেনে।”তাহলে চল চা খেয়ে আসি।”
“চল। দ্যাটস গুড আইডিয়া।”বললো মেহুল।
অনেকদিন পরে মেহুলের সঙ্গে দেখা হলো।”আর কত দিন এভাবে দেখা করব?”এই প্রশ্নটার মুখে আবিরকে বারবার পড়তে হয়।
মেহুল কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই আবির বলল,”সামনের বছর।আমার এখানেই ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে।”
কথাটা শুনে খুশি হলো মেহুল।আবিরকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো।কিন্তু সবাই আছে।তাই আর সাহস হলো না।আবিরের জন্য একটা ঘড়ি কিনেছিল।ওটা দিয়ে দিল মেহুল।
সারাটা দিন কেমন করে যেন কেটে গেল, বুঝতেই পারলো না মেহুল।আবির বলল,”এবার ফিরতে হবে।আমার আবার একটা কাজ আছে।”
পার্কের বাইরে বেরিয়ে এলো মেহুল।আবির বলল,”সাবধানে রাস্তা ক্রস কর।”সামনেই জি টি রোড।পার্কের দেওয়ালে হনুমান বসেছিল। মেহুল রাস্তা পেরিয়ে আবিরকে হাঁক দিল,”কলাগুলো দে তো। ফালতু নষ্ট হওয়ার থেকে ওদের পেটেই যাক।”
আবির কলার ডজনটা বার করতেই একটা হনুমান লাফিয়ে আসতে গেল।হটাৎ একটা লরি এসে পিষে দিল হনুমানটাকে। রক্তে লাল হয়ে গেল রাস্তা।লোক জমছে।কেউ বলছে,”এভাবে ডাকা ঠিক হয়নি।”চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল আবির আর মেহুল।ভালাসার দিনে রক্ত। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলে বলল,”আজ তো ব্ল্যাক ডে।”♦