জিরো পয়েন্ট সাহিত্য আড্ডা
রবিবারের আড্ডা
————–৯ মার্চ ২০২৫ রবিবার—————
|| ফিরে দেখা ||
“কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারি;
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।”
– কাজী নজরুল ইসলাম
ধর্মজ্ঞান
পুণ্যময় রমজান মাস
সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়
সমগ্র পৃথিবীর মুসলিমদের মধ্যে মুক্তি ,ত্যাগ ,বরকতের বার্তা নিয়ে আসে রমজান মাস । এ মাস টি মুসলিমদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহর তরফ থেকে এক বিশেষ দয়া ,মায়া ,মমতা ,ত্যাগ ,তিতীক্ষা আত্ম সংযম, আত্ম শুদ্ধিকরণ ,ভালোবাসা ও পুণ্য লাভের মাস । রমজান মানেই আত্ম ত্যাগ ও কৃচ্ছ সাধনের মাস । রমজান মানেই পাপ মুক্তির মাস । আমিত্ব কে পরিহার করার এ এক মোক্ষম সময় । এক মাস ব্যাপী রোজা রাখার ( আত্ম সংযম) মধ্যে দিয়ে আমাদের মনের সকল মলিনতা, ঘৃণা ,হিংসা লোভ ,লালসা , ক্রোধ বিদ্বেষ জিঘাংসা এবং সর্বোপরি হীনমন্যতা কাটিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে সফৎ নেবার এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করেন খোদ আল্লাহ। ” সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই ” এই মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার এক উপযুক্ত সময় যেন এই রমজান মাস ।
ফার্সি শব্দ রোজার আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচে সিয়াম ।যার বাংলা অর্থ বিরত থাকা । আর সিয়াম সাধনার অর্থ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নির্জলা উপবাস । সকল ধরণের পানাহার , পাপাচার , ও খারাপ কর্ম থেকে নিজেকে সংযত রাখা । এই পবিত্র মাসে মানুষ কে সকল রকম অনৈতিক ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা ।
আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরানের প্রথম শ্লোক মহানবী হজরত মোহাম্মদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছিল । এই মাস আরম্ভ ও সমাপ্তি মূল বিষয় টি নির্ভর করে মূলত চাঁদ দেখতে পাওয়ার উপর । সেই কারণে রমজান মাস কখনও ২৯ দিন আবার কখনও ৩০ দিনে শেষ হয় । সেই মতো ২৯বা ৩০দিন রোজা রাখা হয় । ফজর নামাজ ও রোজা ,এশার নামাজের পর তারাবিহ পড়া ,সেহরির আগে তাহাজ্জুদ পড়া যথাসম্ভব জিকির ও কুরআন মাজীদ তেল ওয়াত করে সময় কাটানো উচিত ।
সেই সঙ্গে দান সাদকা করা ,আশপাশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের হক আদায় করা বাঞ্ছনীয়। অশ্লীলতা , ধোঁকাবাজী, প্রতারণা, অন্যের হক খাওয়া সুদ ও জয়া সহ সকলের জন্য হারাম কাজ থেকে সারা বছর বেঁচে থাকার ফরজ ,রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরও বেড়ে যায় । এ যেন চৈত্র মাসে হিন্দু গাজন সন্ন্যাসী দের কৃচ্ছ সাধনের কথা মনে করিয়ে দেয় । হোক না তা অল্প দিনের সংযম । লক্ষ্য তো সেই পরম করুনা ময় ঈশ্বর বা আল্লাহ প্রাপ্তি । সারা বছর সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য ই তো এত ত্যাগ ।
ইসলামি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নবম মাস হলো রমজান মাস । ইসলাম ধর্মে এই মাস কে কোরবানী বা ত্যাগের মাস হিসেবে গণ্য করা হয় । ১২ মাস হলেও ইসলামি ইসলামি ক্যালেন্ডারে দিনের সংখ্যা ৩৫৪ হয়। তাই প্রতি বছর ১১দিন করে এগিয়ে আসে রমজান মাস এবং তা পরোটা নির্ভর করে চাঁদের উপর ।
সর্বোপরি সবার মধ্যে ক্ষমা শান্তি মমত্ব বোধ ও আত্ম শুদ্ধিকরণের বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র রমজান মাস । অসহিষ্ণু তা ও বিভাজন সৃষ্টি কারীর কোনো স্থান নেই এই মাসে । বরকত পূর্ণ সময়ের গুনাহার( পাপ ) কাজ অত্যন্ত ধ্বাংসাত্মক হ’তে পারে । তাই আমরা প্রার্থনা করি সবার জীবনে যেন মাহে রমজানের গুরুত্ব ও ফজিলত সমান ভাবে ছড়িয়ে পড়ে ।
কবিতা
আমার স্বপ্ন
পার্থ দেবনাথ
স্বপ্ন আমায় তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিক্ষণে
রুদ্ধ দ্বারে, জটিল বাঁকে, অচিন পথে।
স্বপ্ন আমায় কাঁদায়-স্বপ্ন আমায় হাসায়
আঁধার রাতে, কখনো বা আতশবাজির সাঁঝে।
স্বপ্ন আমায় ভাবায়, নতুন পথে হাঁটায়
নতুন ঊষার সন্ধানে।
স্বপ্ন আমায় চোখ খোলায়,মন ভোলায়
আবার কখনো বা মন দোলায়।
আমি আলোড়িত হই কভু বা অনুরণিত হই,
সে চক্রব্যূহ রচনা করে
আমায় অভিমন্যু হওয়ার আহ্বান জানায়
স্বপ্ন আমায় নতুন মহাভারত রচনা করায়।
প্রতিবাদের প্রতিরোধের সুর লহড়ী কে
মননে ছান্দিক স্পন্দন ঘটায়।
সৃজন সৃষ্টিকে সুরেলা সুরের আনন্দ জাগায়
আদর্শবাদের মন্ত্র দীক্ষার শপথ পাঠ করায়,
প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখি বাঁচার তাগিদে
স্বপ্ন আমার চির সঙ্গী রবে আমরণ
আমার স্বপ্ন করিবে আমার সাথে সহ মরণ।♦
কবিতা
আগুন জ্বালে ফাগুন
গৌতম কুমার রায়
পলাশ বনে লালের আভা
শিমুল বনেও তাই।
কৃষ্ণচূড়া গাইছে দেখো
ফাগুন এলো ভাই।
মহুল বনে বাজলো মাদল
লাগলো মনে নেশা।
বাজায় বাঁশি অচিন পাখি
বুকে নিয়ে আশা।
ওই দেখো ঐ অশোক বনে
ঝরাপাতার কান্না ভাসে
বিরহের গান গেয়ে যায়
সোহাগ ভরা খুশির আশে।
ফাগুন জ্বালে প্রেমের আগুন
মন সাগরে ঢেউ
বিরহের পাহাড় কেটে বলবে এসে
নেইতো এমন কেউ।
পলাশ ডালে কোয়েল ডাকে
বাজায় প্রেমের বাঁশি
সোহাগ ভরা খুশির হিল্লোল
ফুলের মুখে হাসি।
বনে বনে তিতলির মেলা
পলাশ শিমুল খুঁজি
আকাশে বাতাসে খুশির ছোঁয়া
বসন্ত এলো বুঝি।♦
গল্প
সোনালী হোটেল
শিলাবৃষ্টি
তখন আমার ক্লাস নাইন। পুরী যাব প্রথম বার, ভীষণ উত্তেজনা। মাসীমণিরাও যাবে। জগন্নাথ এক্সপ্রেসে টিকিট কাটা হয়েছে। কয়েকদিন আগে থেকেই গোছগাছ শুরু করে দিয়েছি। অবশেষে যাওয়ার দিন এসে গেল, আমরা ট্রেনে খুব মজা করতে করতে ভোর বেলায় পুরী পৌঁছে গেলাম। একজন পাণ্ডার সাথে মেসোর আলাপ ছিল, সেই পাণ্ডাই আমাদের স্টেশনে এসে রিসিভ করে নিয়ে গেল! অটোয় উঠে সমুদ্র দেখতে দেখতে আমরা
হোটেলে গেলাম। সমুদ্রের কাছেই আমাদের হোটেল। নাম সোনালী। দোতালায় দুটো বড় বড় রুম আমাদের জন্য খুলে দিল। ঝাঁ চকচকে নতুন হোটেল না হলেও, বেশ আভিজাত্যে মোড়া। আমার তো খুব পছন্দ হয়ে গেল!
ব্যাগপত্র রেখে আমরা সীবিচে চলে গেলাম। কচুরি, ঘুগনী, চা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সারা হলো। মাসীর মেয়ে ফুচুদি আমার থেকে তিন বছরের বড়ো। ফুচুদি আর আমি সমুদ্র স্নানে নেমে পড়লাম। বাবা মা মাসী মেসো সবাই নামলো। তবে আমার আর ফুচুদির আনন্দটা যেন সবাইকে ছাপিয়ে গেল। হোটেলে ফিরে চেঞ্জ করে খেতে গেলাম বিখ্যাত মাসীর হোটেলে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছিল, তাই সারা দুপুর ঘুমালাম আমরা। সন্ধের দিকে বীচে গেলাম, একের পর এক এটা ওটা খাওয়া চলতে লাগলো। অবশেষে ডিনার সেরে সোনালী হোটেলে ফিরলাম। এতক্ষণে আমরা খেয়াল করলাম হোটেলে আমরা ছাড়া আর তেমন কেউ নেই! ফুচুদিই বললো ~” একটা জিনিস নোটিশ করেছ তোমরা? পুরীতে এত ভিড়, অথচ এই হোটেলে আমরা ছাড়া কেউই নেই বোধহয়!” হ্যাঁ তাইতো সকাল থেকে এতবার বেরোলাম ফিরলাম, তেমন কারো সাথেই দেখা হয়নি! শুধু ম্যানেজার বা হোটেলে কাজ করা দু একটা লোক ছাড়া!
যাইহোক আমরা ফ্রেস হয়ে গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। ফুচুদি আর আমি একটা বেডে, আর মা বাবা আরেকটা বেডে। মাসীমণিরা পাশের রুমে। গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কে জানে!
ঘুমটা ভেঙে গেল বাবা মায়ের গলার আওয়াজে। মা বলছে ” তুমি দরজাটা লক করোনি?”
বাবার উত্তর ” কেন করবোনা! দেখো দরজাটা লক আছে এখনো!”
আমি আর ফুচুদিও উঠে বসলাম –
“কি হয়েছে বাপী? ”
মা বললো যে মা স্পষ্ট কাউকে রুমের ভেতর চলাফেরা করতে দেখেছে! “কে? কে তুমি?” বলার পরে আর দেখতে পায়নি। বাবারও তখন ঘুম ভেঙে গেছে!
আমি বললাম ” দরজাটা খুলে একবার দেখো।! আবার মায়ের মনের ভুলও হতে পারে! ” মা এ কথা শুনে খুব রেগে গেল। বাবা ইতস্তত করছে দেখে আমি আর ফুচুদি রুমের লাইট জ্বেলে দরজা খুলতে এগোলাম। পেছনে বাবা। লম্বা বারান্দার অল্প আলোয় তাকিয়ে দেখলাম আমরা তিনজনেই- টুপি পরা একটা সাহেব গোছের লোক এগিয়ে আসছে পায়ে পায়ে। কাছাকাছি আসতেই লোডশেডিং হয়ে গেল গেল মানে ঘরের আর বারান্দার আলোগুলো নিভে গেল। কিন্ত সেই সাহেবটার চোখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা এক অদ্ভুত রশ্মিতে হালকা আলোয়
ভরে গেল টানা বারান্দাটা। লোকটা বিকট ভাবে হাসতে থাকলো।আর আমরা কাঁপতে থাকলাম। বাবা তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে ফুচুদি মোবাইলের টর্চ জ্বেলে খাটে গিয়ে বসলো। বাবা আমাকে বললো” এ হোটেলে থাকা যাবেনারে টুলটুল।” আমরা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম। “বেশ কয়েকবছর আগে পেপারে মনে হয় এই সোনালী হোটেলের কথাই পড়েছিলাম! এই হোটেলে নাকি আত্মা ঘুরে বেড়ায়! ” শুনে আমরা তো ভয়ে কাঠ। সবাই একটা বেডেই জড়ো হয়ে বসে আছি। এমন সময় কারেণ্ট এলো। মা তাড়াতাড়ি ঘরের বড় আলোগুলো জ্বেলে দিলো। সবাই শুয়ে পড়লাম। বাবা বললো ভোর হলেই হোটেলের খোঁজে বেরোবে। আর কয়েক ঘণ্টা এখানে এভাবেই কাটাতে হবে!
সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে বা তন্দ্রাচ্ছন্ন! আমার চোখে কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা। আবার লোডসেডিং হয়ে গেল! খানিক বাদে দরজার বাইরে পায়ের আওয়াজ আর ফিসফিসানি শুনতে পেলাম। ভয়ে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল, চোখ খুলতে পারছিলাম না। তবু অন্ধকারে সাহস করে চোখটা খুলতেই দেখি ফ্যানের সাথে একটা বডি ঝুলছে! রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে আমার গলা থেকে একটা চিৎকার শুধু প্রতিধ্বনিত হলো…, বাবা গো…..
আর কিছু মনে নেই আমার। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ভোরের আলো ফুটে গেছে আর আমার চারিদিকে সকলে ভিড় করে আছে। হোটেল চেঞ্জ করে আমরা আর ওমুখো হইনি। ম্যানেজার বিশ্বাস না করলেও, পরে আলোচনা প্রসঙ্গে অনেকের কাছেই শুনেছিলাম সোনালী হোটেলে অনেক বছর আগে এক সাহেবকে কেউ খুন করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল ওই ১৬নং রুমেই। তারপর থেকেই মাঝে মাঝে সাহেবের ভুত নাকি ওখানে দেখা যায়! আর বড় একটা কেউ জেনেশুনে ওই হোটেলে ওঠেনা।
এখনো সেই দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে!!!♦
রবিবারের আড্ডায় লেখা পাঠাতে হলে যোগাযোগ করুন 7797331771