24/04/2024 : 11:06 AM
অন্যান্য

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় রাষ্ট্র ও সরকারের সাথে আমাদেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

গ্রাম -গঞ্জে প্রতিটি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও খাদ্য সরবরাহের প্রতি নজর দিতে হবে সরকারকে


বিমল মণ্ডল, পূর্ব মেদিনীপুর

 

“মহামারি” -এই শব্দটার সাথে গোটা বিশ্ব পরিচিত। কারণ বিভিন্ন সময়ে এই শব্দটি সারা বিশ্বে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। যখনই রোগ নিয়ে এসেছে, তখনই শ্মশান করে দিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। দেশ -কাল – গণ্ডি সমস্ত কিছু একাকার হয়ে গিয়েছিলো। শুধু বিশ্ব জুড়ে একটাই শব্দ “মৃত্যু”! এর প্রমাণ রেখে গেছে সময় , দেখেছে ভারত সহ গোটা বিশ্ব- কালাজ্বর, কলেরা, প্লেগ মারণ রোগের আক্রমণ। আবার সেই দিন ফিরে এলো ভয়ংকর কোভিড-১৯ মারণ ব্যাধি। ২০২০ সালের গোটা মার্চ মাসজুড়ে মৃত্যু , ভয়, আর আতঙ্কের মানচিত্র।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মারণ ভাইরাস সংক্রমণে কয়েক লক্ষ মানুষ আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
তাই এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে নতুন নতুন মোকাবিলায় সামিল হতে হচ্ছে । তাই এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের ভূমিকার সাথে সাথে আমাদেরও ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমাদের বলতে বোঝাতে চাইছি যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। যাঁরা সত্যি সত্যি এই বিপদের সময় ঘরে বসেও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। যেমন ধরা যাক শিক্ষক, অধ্যাপক, নাট্যকার, নাট্যকর্মী, চলচ্চিত্র জগতে বিভিন্ন অভিনেতা, অভিনেত্রী, গবেষক, বৈজ্ঞানিক, ডাক্তার প্রমুখ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়।

যদিও সরকার চিকিৎসা, সামাজিক বিধি নিয়ন্ত্রণ রূপায়ণ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকাকে সুরক্ষিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তবুও আমাদের দায়িত্বও সরকারের সাথে কিছুটা হলেও থেকে যায়।

সারা পৃথিবী জুড়ে যে করোনার তাণ্ডব শুরু হয়েছে, তার হাত থেকে বাঁচার উপায় কেউ বলতে পারছেন না। এই রোগে একবার আক্রান্ত হলে এর থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই। কারণ এই রোগের এখনো পর্যন্ত কোনো ঔষধ কিংবা টীকা আবিষ্কার হয়নি। তাই ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে মারণ রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

ভারতেও এই সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে । উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত সহ গোটা ভারতবর্ষে আজ লকডাউন আর জনতা কার্ফু জারির মধ্যদিয়ে মানুষের কাছে সচেতনতা বৃদ্ধি করার আর্জি বর্তমান ভারত সরকার রেখেছেন। প্রতিটি রাজ্যের মতো আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গেও এই মারণ রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এখানেও রাজ্য সরকার সমস্ত রাজ্যবাসীর কাছে ভালো থাকার দাবি রেখেছেন।

আজ যেন সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষ অস্থির হয়ে উঠেছেন। যিনি শহরে কিংবা গ্রামে জন্মেছেন।বেড়ে উঠেছেন।মাতৃস্নেহ পেয়েছেন। আজ সেই শহর, গ্রাম, জেলা, রাষ্ট্র কাঁঁদছেন। চোখের সামনে হাসপাতালে পরীক্ষানিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ কিংবা অনান্য সামগ্রি সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এই মারণ রোগে আক্রান্ত মানুষগুলো ছটপট ছটপট করে মারা যাচ্ছেন। আজ মহাসংকট দেখা দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও। ধ্বংস হতে বসেছে বিভিন্ন দেশ।

তাই আমাদের দেশে কিংবা রাজ্যে কয়েকটি দাবি উঠতেই পারে সেই দাবিগুলি হলো স্বাস্থ্য পরীক্ষার সেবামূলক কেন্দ্র হাসপাতাল ছাড়াও প্রতিটি গ্রামের নির্দিষ্ট একটা জায়গা ঠিক করে পরীক্ষানিরীক্ষা করা।ঠিক মতো দূরত্ব বজায় রেখে। হাসপাতালে, হাসপাতালে বিনামূল্যে ভাইরাস পরীক্ষা এবং করোনায় আক্রান্তদের বে সরকারি হাসপাতালকেও যুক্ত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে সমস্ত গরীব ও অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষেরা যাঁরা বাইরের থেকে বাড়িতে ফিরেছেন তাদের জন্য ১৪ দিন গৃহবন্দী না রেখে একটা নির্দিষ্ট ক্যাম্প করে রাখলে আরো বেশি মানুষ সুস্থ থাকতে পারতেন। কিন্তু সরকারের ঘোষণা মতো বিদেশ থেকে কিংবা ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি ফিরেছেন তাদের সামান্য পরীক্ষা করে বাড়িতে ১৪ দিন বাড়িতে থাকলেও বাড়ির পরিবারও আক্রান্ত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশব্যাপী জনজীবন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শুধু লকডাউন করলে চলবে না তার সাথে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাহসের সঙ্গে রাষ্ট্র ও সরকারের সাথে আমাদের দৃঢ়তার সাথে এই মারণ রোগের মোকাবিলা করতে হবে।

২রা মার্চ থেকে আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্ত আজ পর্যন্ত ৮৭৩ জন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মোট ১৭ জন।অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত সংখ্যা কম হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে একটা ভয় থেকে যায়
পশ্চিমবঙ্গে অনান্য রাজ্যের তুলনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা১৫ জন। মৃতের সংখ্যা ১জন।
তবে ডাক্তার কিংবা বৈজ্ঞানিকগণ বার বার বলছেন যে প্রতিটি মানুষকে বেশি বেশিকরে শারীরিক পরীক্ষা করতে হবে। তার সরকারি ভাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এই করোনা নামক ভাইরাসের বাসা ভাঙার জন্য বৈজ্ঞানিকদের যুক্তি অনুযায়ী আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ২১ দিনের লক ডাউন ঘোষণা করেছেন।প্রতিটি মানুষকে ঘরে থাকার আর্জি জানিয়েছেন। তার সাথে সাথে প্রতিটি রাজ্যের সাধারণ মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে। তাদের যাতে কোনো রকম অসুবিধে না হয় তার জন্য বিভিন্ন অর্থ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাথে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও প্রতিটি জেলা ও গ্রামগুলোতে যাতে গরীব ও দরিদ্র মানুষের কোনো অসুবিধা না হয় তার খেয়াল রাখতে বলেছেন।
সবচেয়ে বড়োকথা হলো মানুষ যদি সচেতন না হয়। সরকারের কথা অমান্য করে খোলা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার জন্য প্রশাসন কি করতে পারেন? কি বা করার থাকে। তাই আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
প্রয়োজনে এই কয়েকদিন যাঁরা কাজ হারিয়ে ঘরে বন্দী হয়ে আছেন কিংবা রোজ আনে রোজ খায় তাদের যাতে খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যাতে করে সরকারি সাহায্য থেকে কেউ না বাদ যায়। তাদের প্রতি নজর রাখতে হবে যেমন সরকারকে, তেমনি আমাদেরকেও এই বৃহৎ কাজে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে সাহায্য করার জন্য।
প্রতিদিন যাতে আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এবং সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সময় মতো খাদ্যের সরবরাহ করা এবং কি ভাবে ঘরে বসে সুস্থ থাকা যায় তা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে।

তাই সমগ্র মানব জাতির সেবাই আমাদের মূল ধর্ম। তাই করোনা নামক মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে ঘরে বসে এই টুকু কাজ করে যাওয়া এটাই আমাদের কর্তব্য।

যাতে শুধু আমি না, আমার চারপাশে যাঁরা আছে সবটুকু নিয়ে ভালো থাকা। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা এক্ষেত্রে মেনে চলা উচিৎ। বিশেষ করে গরীব, শ্রমজীবী, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা জেনে তাঁদের সাহায্য করতে হবে।
আজ এমন দুঃসহ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও সরকারের সাথে থেকে কি সেটা করতে পারিনা সবাই?

Related posts

রাজ্যে মোট সংক্রমিত ২৭৬! ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ২৪ জন কিন্তু কেন্দ্রীয় তথ্যে ৩১০ জন সংক্রমণ রাজ্যে 

E Zero Point

করোনা যুদ্ধ জয় করে দুর্গাপুর সনোকা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন ৩ করোনা রোগী

E Zero Point

করোনা পরবর্তীতে পরিস্থিতির শিকার হবেন অনেকেই, সেটি করোনার থেকেও মারাত্মক | অর্ক পাল

E Zero Point