09/12/2024 : 6:48 PM
অন্যান্য

ধারাবাহিক গল্পঃ নীভা থেকে নীভাদেবী হয়ে ওঠার কাহিনী (চতুর্থ পর্ব) ~ সুতপা দত্ত

কোথায় যাবে , কার একটু অভিভাবকত্ব পাবে এই ভেবে যখন আকূল তখন এলো উকিলের নোটিশ , বিষয়- সৌরভের কাস্টডি । এক্কেবারে ভেঙে পড়লো নীভা। সে সময় অর্পণের কাছের দুই বন্ধুর সহযোগিতায় কোর্ট অবধি আর গড়ালো না কেসটা । বিনিময়ে লিখে দিতে হলো – ভবিষ্যতে সে বা তার ছেলে কখনও কোনো পরিস্থিতিতে ঐ বাড়ির কোনো সম্পত্তি দাবি করবে না । এককথায় সাইন করে দিয়েছিল নীভা । যে মানুষটা তার রক্তের সম্পর্কের কাছে হেরে গিয়ে রোজ তিলে তিলে মরেছে , আজ সেই মানুষটার অবর্তমানে ঐ বাড়ির সম্পত্তি চাইবে , ছিঃ , এমন শিক্ষা ‘ও’ কখনও পায় নি । সম্পত্তির কাগজ নিয়ে চলে যাবার সময় এও বলে গেল – ” মা’তো আস্তাকুঁড় থেকে উঠে আসা, সেই ছেলে যে ভবিষ্যতে কি হবে সে তো সবার জানা , তাই ভালোই হলো ভবিষ্যতে মান সম্মান খোওয়ানোর আর ভয় রইলো না “। কখনও একটা কথার ও জবাব দেয়নি নীভা । তার বুকের ধন বুকেই থাকবে – এর বাইরে আর তার কোনো চাহিদা নেই , আর এটাই গরীব ঘরের মেয়েদের প্লাস পয়েন্ট।
সেদিনের পর থেকে বারবার শুধু শাশুড়ির কথা মনে হয়েছে , একবারও কেন এলেন না মা , ছেলেকে শেষ দেখা দেখতেও ইচ্ছে হলো না ! নাকি ছেলের বৌয়ের মুখ দেখতে খুব ঘেন্না হলো ! খুব জানতে ইচ্ছে করে মা । ‘ও’ তো জানে না , ওরই মতো সব হারিয়ে,  নিঃস্ব হয়ে মা যে শয্যাশায়ী । হাই ব্লাড-প্রেশার এ মাথা তুলতেই পারেন না । যাওয়ার দিন সকালেও যে ‘সে’ এসেছিল চায়ের দোকানে , বাজারের ব্যাগ হাতে করে । অনিমা দেবীও রোজকার মতন বারান্দায় বেরিয়েছিলেন যদি আসে ছেলেটা , তাই ভেবে । নিঠুর ঈশ্বর মা-ছেলের ভালোবাসায় অপূর্ণতা রাখলেও দুজনের ‘শেষ দেখা-টা ‘ লিখে রেখেছিলেন ওদের ভাগ্যলিপিতে।
বাড়ি ছাড়ার দিন এগিয়ে আসছে , একলা একজন বিধবা-কে কে দেবে থাকতে !! সেই সময় সুনীল দা , ওর বন্ধু, ভগবানের দূত হয়ে এলেন বাড়িতে । ওঁর এক পিসি, পঞ্চাশোর্ধ মহিলা , খুব অল্প বয়সে বিধবা , সম্বল বলতে পিসের পেনশন আর একতলা একটা বাড়ি , ছোটোই , কিন্ত ওদের হয়ে যাবে । সবটা শুনে কোথাও হয়তো ওঁর মন কেঁদেছে , তাই রাজি হয়েছেন থাকতে দিতে , ভাড়াও অল্পই, একটু শুধু খিটখিটে। নীভার তখন একটা আশ্রয় দরকার , একজন অভিভাবক দরকার , এর বাইরে ‘ও’ আর কিছু ভাবতে চায় নি , তড়িঘড়ি উঠে এসেছিল বিমলা পিসির বাড়িতে ।
এরপর শুরু হলো আসল সংগ্রাম , ক্ষুধা নিবৃত্তির সংগ্রাম , ছেলেকে মানুষ করার সংগ্রাম। ঐ খিটখিটে মানুষটার ঝাঁঝালো বাক্য-বাণের জেরেই ‘ও’ আজকের নীভা । সেই দুর্দিনে পাশে পাওয়া মানুষগুলোর সবাই কিন্তু ভালো ছিল না , সাহায্যের হাত বাড়াতেই  বেরিয়ে পড়েছিল তাদের নিজেদের রূপ , কিছু রূপ ছিল অতি কদর্য্য। এতদিন অর্পণের চোখে যে রূপের প্রশংসা শুনেছিল আজ সেই রূপ-ই তার সবথেকে বড়ো শত্রু। খুব বেশি আর না ভেবে চার বাড়িতে রান্নার কাজ নিয়েছিল নীভা , কারণ ওটাতেই সে দক্ষ । পিসি বলতেন , আগে শুরু তো কর কিছু দিয়ে , দিন আসবে অন্য কিছু ভাবার । ছেলেকে স্কুলে দিয়ে , চলে যেত রান্নায় , বাড়ি ফেরার পথে ছেলেকে নিয়ে আসতো , খাইয়ে, ঘুম পাড়িয়ে, বিকেল হলেই পিসির দায়িত্বে রেখে আবার ছুটতো দু’বাড়ি। সাত বছর ধরে মহারাণী হয়ে সংসার করে, আজ ভাগ্যের পরিহাসে পরের বাড়ির দাসী ।
“জানি না, কি ভাবতে তুমি ওপর থেকে। আদৌ কি পেতে দেখতে ! আজও কি পাও!” অর্পণের মালা পড়ানো ছবিটার সামনে বসে অঝোর ধারায় ভিজছেন নীভা দেবী । কান্নার শব্দকে ছাপিয়ে মোবাইলটা বেজে উঠল সেই সময়েই, চমকে উঠে ফোনটা ধরে দেখলেন – বাপাই কলিং ************
– পৌঁছে গেছি মা । তুমি এবার একটু কিছু খাও । আর আমাকে প্রমিস করো আর কাঁদবে না একটুও । চোখের জল মোছো মা । আমি আছি তো , থাকব সবসময় , বিশ্বাস রাখো , তোমার ছেলে হারিয়ে যাবে না মা । তোমার আশীর্বাদই আমার বর্ম , আমার কোনো ক্ষতি হবে না । এবার আমরা পাঁচ জনে মিলে বাঁচব মা , খুব ভালো থাকব ‘।
– স্মিত হেসে ছেলেকে একটা চুমু দিলেন ফোনে , বললেন , এবার  বিয়ে কর মন দিয়ে ‘।(ক্রমশ)


পঞ্চম পর্ব – অন্তিম পর্ব  আগামীকাল

Related posts

বীরভূমের এক পরিযায়ী শ্রমিক করোনা আক্রান্ত

E Zero Point

আউশগ্রামে ডোকরা শিল্পীদের পাশে বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার

E Zero Point

মেমারি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি থেকে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দান

E Zero Point

মতামত দিন