27/04/2024 : 12:35 AM
অন্যান্য

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা | রতন নস্কর | মুস্তারী বেগম | দিলীপ সাঁতরা | ইব্রাহিম সেখ | আঞ্জুমনোয়ারা আনসারী

গল্প


শিকড়


 ✒আঞ্জুমনোয়ারা আনসারী

গাঁয়ের মেয়ে অবন্তীকা। তার জীবনের বাঁচা বাড়া সরল সজীবতায় মোড়া গ্ৰাম্য পরিবেশেই। কিন্তু গ্ৰামের আর পাঁচজনের থেকে ও একটু আলাদা।
ও ভালোবাসে সকালের প্রথম সূর্যের আলোমাখা কাঁচরঙা শিশির ঘাসের আগায় রৌদ্রস্নান, অথবা পড়ন্ত বিকেলে অস্ত-রাগের রাখালিয়া সুরে গা-ভাসিয়ে দীঘির পাড়ে ঘাস ফড়িংয়ের পিছন পিছন দৌড়াতে। আবার কখনও কখনও রাতের আকাশে চাঁদ উঠলে, উঠানে লুটোপুটি খাওয়া চাঁদের আলোয় মাদুর পেতে, মা, মেয়ের ছোট্টবেলার গল্প শোনা।
এইভাবেই অবন্তিকার সারল্যমাখা চঞ্চলতায় দিন যায়, রাত আসে আবার দিন।
সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতির নিয়মেই অবন্তিকার জীবনেও আসে পরিবর্তন।
এমনই একদিন বিকেলের নরম রোদ্দুর মেখে অবন্তিকা একটা প্রজাপতির পিছনে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ দেখে দূরে কে যেন আসছে। আগুন্তুক ওর কাছাকাছি আসতেই থেমে যায়।
অবন্তিকার মুখাবয়ব অস্তরাগের আভায় রাঙা হয়ে উঠেছে।
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানুষটি। লজ্জাবনত দুটি ঠোঁট দিয়ে উচ্চারিত হয় অবন্তিকার, কি দেখছ গো?
একমুখ নয়, ঠোঁটের কোণে একটুকরো হেসে মানুষটি বলে, তোমাকে। অবন্তিকার মুখাবয়ব আরও রাঙা হয়ে ওঠে। দু’জনেই নীরব। একে অপরের ভাবনায় বিভোর। চকিতে দু’জনেই নাম কি, থাকো কোথায়? কোন উত্তর না দিয়ে কোন উত্তর না নিয়েই মানুষটি বলে অন্য কোনোদিন, এখন আসি।
তারপর আস্তে আস্তে মানুষটা পথের বাঁকে চেয়ে থাকা নিষ্পাপ দুটি আঁখির অন্তরালে হারিয়ে গেল। অবন্তিকা এখন শুধুই চেয়ে আছে, তার রেখে যাওয়া পথের ধূলির উপর পদচিহ্ন গুলির দিকে।
বেশ কিছুদিন। অবন্তিকার হাসি নেই মুখে, সুখ নেই মনে, চঞ্চলতা নেই দেহে, ব্যস্ততা নেই জীবনেও। শুধু মাঝে মাঝে দিঘির পাড়ে বিকেলের গোধূলির আলোয় একা একা স্বচ্ছ কাঁচজলে ভাসা একটা মুখোচ্ছবি খুঁজে বেড়ায়।
এখন গ্ৰামটি অনেক উন্নত। গ্ৰামের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি পাকা হয়েছে। সেই ব্যস্তময় রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি, বাস চলাচল করে। মানুষের সুবিধার্থে একটা বিশ্রামঘর, দু-একটি খাবার ও চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে।
প্রতিদিন বাস থেকে ওঠা নামা করে বিভিন্ন ধরনের মানুষজন। তেমনি একদিন এক সাংবাদিক বাস থেকে নেমে চায়ের দোকানে এসে বসে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দেখে, একটা মেয়ের পিছনে কয়েকটি ছেলে, পাগলি পাগলি বলে দৌড়াচ্ছে। কৌতুহলবশতঃ দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসা করলে, জানতে পারে মেয়েটির আকষ্মিক ঘটে যাওয়া পিছনের কথা। সাংবাদিকতার চোখে খবরের রসদ পাওয়ার তাগিদে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এবং দিঘির পাড়ে নিয়ে গিয়ে বসায়। তারপর খুব কাছাকাছি সহানুভূতি মেশানো কথায়, এখন তোমার কোন ভয় নেই। এবার আমাকে বল তোমার কথা।
অনেকটা জড়সড় ভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সা়ংবাদিকটির কাছাকাছি বসে।
জানো, আমার একজন মনের মানুষ ছিল। সে কোথায় হারিয়ে গেল। আমি তো সব সময় তাঁকেই খুঁজে বেড়ায়। তুমি কি তাকে জানো? সে কোথায় থাকে।
সাংবাদিক কি বলবে, কোন উত্তর দিতে পারে না। করুন স্বরে জানি কিন্তু, ঠিক তখনই অবন্তিকা বলে ওঠে—
আমি জানতাম তোমরা কেউ তার খোঁজ দিতে পারবে না। শুধু শুধু আমার এতটা দেরি করিয়ে দিলে। কতজন চলে গেল। আমার খোঁজা হল না। হয়তো ওদের মধ্যে আমার হারিয়ে যাওয়া সেই মানুষটি……।
সাংবাদিক আবারও কাছাকাছি হয়ে বলে, তুমি অত উতলা হয়ো না। “ভালোবাসা খুঁজতে হয় না। দেখো, ভালোবাসায় একদিন, ঠিক তার মনের মানুষকে খুঁজে নেবে…….”
অবন্তিকা তার ভাবনার তীরে দূরন্ত পাহাড়ি নদী হয়ে সাগর ছুঁতে চায়। কিন্তু সাংবাদিকটি তখন অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে।
সময় কখনও কোন কিছুর জন্য কখনো থামতে শেখেনি। সেই গতিময়তাই যেমন সবার জীবন এগিয়ে চলেছে ঠিক তেমনিভাবেই এই সাংবাদিকটির জীবনও চলছে তার নিজস্ব ছন্দে। তবুও কারো কারো জীবনের পথ মাঝে মাঝে মোড় নেয় উল্টো দিকে।
সকাল থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টিরা ঝেঁপে এসেছে। আর সেই ধারায় ধায়িত হয় সাংবাদিকের মন ও হৃদয়। মনে পড়ে সেই পাগলি মেয়েটির কথা। এক গ্ৰাম্য সরল সবুজতায় ভরা কথা তুমি কি জানো, আমার মনের মানুষটিকে?
কি জানি হয়তো জানতো, নয়তো জানতো না। তবুও সা়ংবাদিকটি তাঁর নিজের চির শাশ্বত ভাবনার নিরিখে দাঁড়িয়ে অস্ফুটে বলে, আমি কি পারতাম না– ওর শুষ্ক জীবনের পাতাটায় একটু সবুজ এনে দিতে……?


রবিবারের আড্ডায় লেখা পাঠাতে হলে
zeropointpublication@gmail.com
ইমেইল এড্রেসে টাইপ করে পাঠান।
অবশ্যই লেখাটি অপ্রকাশিত হতে হবে।


 

Related posts

কোভিড-১৯ মোকাবিলা নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ভাষণ

E Zero Point

সামাজিক মাধ্যমের গ্রুপের ব‍্যবস্থাপনায় রসুলপুরে “নিঃশুল্কের বাজার”

E Zero Point

রাজ্য সরকার কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করল, দুই বর্ধমান অরেঞ্জ জোনে

E Zero Point

মতামত দিন