বিশেষ প্রতিবেদনঃ রমজানুল মোবারক আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন রহমত স্বরূপ। রমজান হচ্ছে আত্ম সংযমের মাস। ধর্য্যশীলতার মাস। রমজানের অন্যতম একটি শিক্ষা হচ্ছে সংযম। এবার করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তৈরি হয়েছে ভিন্ন আবহ। বিশ্ব পরিস্থিতির অবস্থা থমথমে। অদৃশ্য ভাইরাসের কারণে সবাই আতঙ্কিত।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি করে দোয়া করা আমাদের দায়িত্ব। দেশ-জাতি সর্বোপরি বিশ্ব কল্যাণের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত। সেই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বের না হওয়াটাও এক ধরনের সংযম।
যেহেতু এই পরিস্থিতিতে সরকারের তরফ থেকে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মহামারিকালে ঘর থেকে বের না হওয়ার কথা হাদিসের মধ্যেও আছে। রাসুলে পাক্ (স.) বলেছেন, কোনো এলাকার মানুষ যদি মহামারিতে আক্রান্ত হন বা কোনো এলাকায় যদি মহামারি দেখা দেয় তাহলে ওই স্থানের লোকজন এলাকা ছেড়ে বাইরের এলাকায় বের হবে না। আবার বাইরের এলাকার লোকজন ওই এলাকায় প্রবেশ করবে না, এটা আল্লাহর রাসুলের নির্দেশ।
সুতরাং রমজান মাসে এই পরিস্থিতিতে ত্বাক্ওয়া অর্জনের আরও বেশি সুযোগ এসেছে। কারণ আমরা বিশ্বের সব মানুষ কিন্তু মৃত্যু ভয়ে কাতর হয়ে আছি। যত বড় সাহসী মানুষই হোক, মৃত্যু ভয় তাকে কাবু করতে পারে। আমরা মরণের ভয়ে আছি, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের নৈকট্যের আরও বেশি সুযোগ এসেছে।
অন্য বছরের চেয়ে এবার পরিস্থিতির কারণে আল্লাহ তায়ালার ভয় আমাদের মনে জাগ্রত করতে বাধ্য করেছে। এই বিষয়গুলো আমাদেরকে খেয়াল রাখা দরকার। কারণ রমজানুল মোবারকের প্রতিটি মুহূর্ত দোয়া কবুলের সময়। প্রতিটা মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন।
সুতরাং এই সময়ে সমগ্র মানব জাতির জন্য আমরা দোয়া করবো, আল্লাহ তায়ালা যেন এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের মুক্তি দেন। আমাদের গুনাহ, পাপাচার, অশ্লিলতার কারণে আল্লাহ আমাদের এই আজাব আর গজব দান করেছেন। তাই আমাদেরও প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে দেন, তাহলে ভবিষ্যত জীবনে আমরা যেন গুনাহে জড়িত না হই। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে নাফরমানি, বিদ্রোহের সামিল হয় এমন কোনো কাজে আমরা জড়িয়ে না পড়ি। যেমন বিশ্ববাসী সকলেই কিন্তু এখন নিজেদের সংশোধনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
আর এই পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ অভাবের মধ্যে আছে। খেতে পারছে না, ইফতারের ব্যবস্থা নেই। অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমাদের মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে হতদরিদ্রদের পাশে যেতে হবে। যাদের সামর্থ আছে, তারা আশপাশের মানুষজনকে সহযোগিতা করবো। যাদের ওপর যাকাত ফরজ হয়, তারা উদার চিত্তে যাকাত দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবো, কষ্টগুলোর অংশীদার হবো। আমরা রমজান মাসে সামর্থবানরাসহ সকলেই উপবাস থাকি। রমজান মাসে একমাস সিয়াম পালন করে তাদের অবস্থা উপলব্ধি করেন যারা সারা বছর যারা উপবাস করে। তাদের কষ্টগুলো অনুভূতিতে জাগ্রত করে দেয় মাহে রমজান।
এছাড়া মানুষের অভাব, সংকটকে পুঁজি করে যারা বাড়তি মুনাফা করে, মজুদদারি (গুদামজাত) করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে কষ্টে পতিত করে। তাদের প্রতি আল্লাহর রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- তারা অভিশপ্ত, লা-নত প্রাপ্য।
তাই তাদের বোঝা দরকার, আল্লাহ তায়ালা যেকোনোভাবে আমাদের এই কষ্টের মধ্যে ফেলতে পারেন। এমনিতে মানুষ দুর্ভোগে আছে, তারপর আমাদের কর্মের দ্বারা যেন মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে না পড়ে। যেকোনো মানুষকে কষ্ট দেওয়া জায়েজ না, এটা ইসলাম সমর্থন করে না।
মহামারিকালে বা কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষজন নিজেদের হেফাজতে ঘরে থাকে। তখন জীবন বাজি রেখে যারা মানুষের সেবা করেন, তারা জাতির শ্রেষ্ট সন্তান। ঠিক তেমনই এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা বিপদগ্রস্থ মানুষকে চিকিৎসা দিতে নিজের জীবন এমনকি পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। তাদের প্রতি পুরো জাতির কৃতজ্ঞ থাকা এবং দোয়া করা প্রয়োজন। (সূত্রঃ মুফতি মাওলানা জিয়াউর রহমান)