দিগন্তিকা বসু
‘আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা।’
আজ ১৬ মে ২০২০, ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আলোক দিবস । সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক আলো ও আলোক প্রযুক্তির বছর হিসেবে উদযাপিত হয়েছে২০১৫ সাল । সেই সূত্রেই ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ১৬ মে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে।১৯৬০ সালের এই দিনেই পরীক্ষাগারে পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী থিওডর মাইমান লেজার রশ্মি তৈরি করেন। একটি আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরন। যদিও আন্তর্জাতিক আলোক দিবসের মূল সুর শুধুই বিজ্ঞান নয় । দিবসটি উদযাপনের উদ্দেশ্য , মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, সমাজ-সংস্কৃতি-সভ্যতায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতিতে অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে পৃথিবী গতির যাত্রায় আলো এবং আলোক প্রযুক্তির যে বিশাল ভূমিকা রয়েছে, সেটাকে স্বীকৃতি দেয়া। অর্থাৎ আলোর প্রয়োগ নিয়েই আলোক দিবস কাজ করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
কোভিট-১৯ এর জন্য পৃথিবী ব্যাপী বিপর্যয়ের কারণে ইউনেস্কোর আহ্বান ঘরে থেকে উদযাপন করো আন্তর্জাতিক আলোক দিবস ২০২০। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্বের প্রায় ষাট টি দেশ অনলাইনে পালন করছে আজকের দিনটি।এই কথা মাথায় রেখে আমার এই লেখার চেষ্টা।আলো আমাদের জীবনের অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। আলো শুধু দৃষ্টি দেয় না, উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক অধিকাংশ কাজের জন্য আলো প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তির প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে আলো। সর্বাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ফাইবার অপটিকাল কেবল বা বেতার যোগাযোগ, স্যাটেলাইট বা মোবাইল, কম্পিউটার, সবকিছু চালনার মূলে আছে আলো। আলোর এই কর্মযজ্ঞ একই সাথে ইউনেস্কোর “শিক্ষা, সমতা ও শান্তি” অর্জনের লক্ষ্যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং শিল্প-সংস্কৃতির একইসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।এই আয়োজনের পরিচালনা কমিটিতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যবৃন্দ।
বিজ্ঞান – প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দু আলো। বহুকাল ধরে আলো বিজ্ঞানের জগতে তোলপাড় তুলে এসেছে। ইবনে আল হাইথাম থেকে আইনস্টাইন ,অবার এখনো আলো নিয়ে কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানিরা। গামা রশ্মি থেকে রেডিও তরঙ্গ, আলোকবর্ণালী আমাদের সামনে তুলে ধরেছে সৃষ্টিরহস্য থেকে আজকের পৃথিবী বদলে দেয়া প্রযুক্তি পর্যন্ত। ন্যানো ফোটোনিক কিংবা কোয়ান্টাম অপটিকসের উচ্চতর গবেষণা মেলে ধরেছে নতুন সব আবিষ্কারের সুযোগ আর বিজ্ঞানের নতুন শাখা। অলোক নির্ভর কারিগরি আলোক কনা মানবজাতির সুস্থায়ি উন্নয়ন ও উন্নত জীবনে পৌঁছে দিয়েছে। অলোক কনা ভিত্তিক শিল্পগুলো হয়ে উঠছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। উন্নততর ঔষধ, যোগাযোগব্যবস্থা ও শক্তি উৎপাদনে ফোটোনিকসের ব্যবহার সমাজে নিয়ে আসছে উন্নত মানের পরিবর্তন। দৃষ্টি শক্তি থেকে মুঠোফোন , ইন্টারনেট আলোক কনার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সর্বব্যাপী।
ইউনেস্কোর সুস্থায়ি উন্নয়ন সহ অন্যান্য লক্ষ্যে জরুরি কার্যকরী করার জন্য ফোটোনিকস এক অন্যতম হাতিয়ার।আলোকপ্রযুক্তি চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম চাবিকাঠি। রোগনির্নয় থেকে শুরু করে উন্নত রোগনিরাময় প্রক্রিয়া ও গবেষণা, সবকিছুতেই রয়েছে আলোকপ্রযুক্তির বিবিধ ব্যবহার। রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি জন্ম দেয় সুস্থায়ি কৃষিব্যবস্থার, যা বিশ্বের ক্ষুধা নিবারনের অন্যমত হাতিয়ার। একই সাথে সুস্থায়ি কৃষিব্যবস্থা জলাশয় ও সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষার অন্যতম নিয়ামক। আধুনিক আলোকব্যবস্থা জীবনযাত্রার মানোয়ন্নে কার্যকর ও পরিবেশ বান্ধব সমাধান দিতে পারে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা ও এর প্রভাব অনুমান করার জন্য আলোক ভিত্তিক কার্যকর সমাধান গুরুত্বপূর্ণ।আলো মানুষের শিক্ষা, সংস্কৃতিতে, অর্থনৈতিতে যুগ যুগ ধরে প্রভাব ফেলে আসছে। আলো সবসময়ই শিল্প-সাহিত্য ও মানুষের চিন্তাধারায় বড় ভূমিকা রেখে এসেছে। তাই আমাদের কাছে এই দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।
তথ্যসূত্র..
https://en.unesco.org/commemorations/dayoflight
https://en.unesco.org/events/international-day-light