27/04/2024 : 9:19 AM
রবিবারের আড্ডাসাহিত্য

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা ~ সুব্রত চক্রবর্তী | মনোজ কুমার রায় | মুহাম্মদ ইসমাইল | নির্মাল্য পাণ্ডে | অর্পিতা চ্যাটার্জ্জী

অনু গল্প


বাবুই পাখী

✒ নির্মাল্য পাণ্ডে
কিরে চড়াই! কেমন আছিস এই গরমে বাবুদের বাড়িতে!
-দূর! এটা কি থাকা, না আছে বারান্দা, না আছে বড় বড় থামের ফোকোর যেখানে, বাঁধব বাসা খড়কুটো দিয়ে। সবি তো ফ্ল্যাট বাড়ি। যত সাবেকি বাড়ি ছিল, সবই তো এখন প্রোমোটারের কাছে বাঁধা। তারা সব আমাদের বাসা ভেঙ্গে দিয়ে ফ্ল্যাট বানাচ্ছে, যেখানে থাকছে না কোন আলাদা জায়গা, থাকছেনা কোন অলিন্দ বা উঠোন। শুধু ইটের পরে ইঁট গেঁথে, এক চিলতে মাথা গোঁজার স্থান করে দিচ্ছেন বাবুদের জন্যে। না থাকছে পর্যাপ্ত আলোবাতাসের সংস্থান, না থাকছে যথেষ্ট পরিসর, তার মধ্যেই থাকতে হচ্চে কোন রকমে। তুই তো আমার খোঁজ নিলি, তোর খবর বল!
–আমার আবার খবর! আমার অবস্থাও তোর মত। সবুজ তো আজ ধ্বংসপ্রায়, বড় বড় গাছ কেটে চালান হচ্ছে বাবুদের বাড়িতে। একটা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে শহুরে বাবুরা, আধুনিক সভ্যতা। বনানী আজ হয়েছে কারখানা বা আবাসন, যেখানে ঠাঁই নেই আমাদের। আমরা তো বনের, গাছের আশ্রয়ে থাকি, গাছের ডালে ঘর বাঁধি, আমাদের শিল্প সত্ত্বা প্রকাশ পায় ঘর বাঁধার মাধ্যমে, আমরা কিন্তু শিল্পকলা নিয়ে শিক্ষালাভ করিনা, এটা আমাদের সহজাত গুন-ঈশ্বর প্রদত্ত আশীর্বাদ, কিন্তু তাতেও বাধ সাধছেন আধুনিক সভ্যতা, আধুনিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি। বিজ্ঞান বলছে, সবুজ নষ্ট করবে না, গাছ কাটবে না, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, লোকক্ষয়, প্রানীক্ষয়, দূষণ জনিত নানান প্রকৃতি নির্ভর ‘অসুখের’ আবির্ভাব ঘটবে। কিন্তু ভাই, কে,- কার কথা শোনে! সেই চলেছে প্রকৃতির ওপর আঘাত, অত্যাচার, নিপীড়ন। আমাদের নেই কোন ঠাঁই, তাই চলে যাই দূর-দূরান্তে, হয়ে যাই অনেক সময় পরিযায়ী ! দেখ না ভাই, এই তো এল আম-পান, কেউ বলছেন উম –পুন, কেউ বা নাম দিয়েছেন আম্ফান-সে যাইই হোক না কেন, নিমেষে বড় বড় গাছে পড়ে গেল মাটিতে। ঝড়ের দাপটে খনিকের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল আধুনিক সভ্যতা, সভ্যসমাজের দম্ভ, অহংকার, নেতা-নেত্রির বক্তৃতা। মুখে তারা বলেন- কয়েক কোটি গাছ লাগাব, সবুজে ভরে দেব প্রকৃতিকে, এত অক্সিজেনের যোগান দেব যে, মানুষ-প্রাকৃতিক জীব হয়ে উঠবে চনমনে! কিন্তু, ভাই গাছ লাগাবে কোথায়? সব তো প্রমোটারদের কবলে, আবাসনে আবদ্ধ। তা’ছাড়া বড় গাছ হতে কতদিন লাগবে বলতো! বড় গাছ না হলে বাবুই বাসা বাঁধব কোথায়? অক্সিজেনই বা উৎপাদন হবে কিভাবে? তবে ভাই, একটা উপকার হয়েছে- এই হাজার হাজার বড় গাছ যা, আম্ফানের দয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে, তার গতি হবে বাবুদের বাড়িতে, কাঠ হোয়ে আসবাবে বা ইমারতের কাজে-এটা কিন্তু কিমি. আশীর্বাদ নয়! আইনকে ফাঁকি দিয়ে ঝড়ের নামে গাছ কাটা- আর, আমাদের অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকের মত। দেখনা ভাই! অমোঘ মারণ রোগ এল ‘করোনা’, কত লোককে দিতে হল প্রাণ বা, আরও কত দিতে হবে, তা-কে জানে! এটাও তো প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের ফল–।
– আচ্ছা! ভাই, সবই তো বুঝলাম, এখন তবে করনীয় কি? তোমারও যা হাল, আমারও তাইই! আমাদের তো বাঁচতে হবে, স্বর্গে বললেই তো যেতে পারব না, তার জন্য চাই আবার মনের স্বচ্ছ্বতা, পবিত্রতা- আমরা তো ভ্রষ্টাচার, আসুরিক বৃতিতে আসক্ত, নিজেদ্র স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমরা সব কিছু খারাপ কাজ করতে পারি, আমাদের চৈতন্য পেয়েছে লোপ লোভের জন্য- তাই তো নারী ধর্ষণ থেকে অর্থনৈতিক ধর্ষণে অভ্যস্থ হয়ে পরেছি—
– ব্যাপারটা গুরুতর। এই জাল থেকে বেরিয়ে আসার উপায়- আমার মনে হয়- সততার সঙ্গে, পবিত্রতার সঙ্গে, ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রেখে ও প্রকৃতিকে যদি ঠিকমত লালন-পালন করা যায়, তবে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের স্থান হবে—♥

Related posts

কবিতা গানে মুখর বাংলার জনরবের সাহিত্য অনুষ্ঠান

E Zero Point

আবার এসেছি ফিরে পত্রিকার পক্ষ থেকে গুণীজন সংবর্ধনা  ও পত্রিকা  প্রকাশ অনুষ্ঠান

E Zero Point

দৈনিক কবিতাঃ প্রকৃত বন্ধু

E Zero Point

মতামত দিন