জিরো পয়েন্ট নিউজ, এম. কে. হিমু, মেমারি, ২২ নভেম্বর ২০২২:
সোমবার নবান্নে স্বাস্থ্য নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী। তিনি বলেন রেফার এত বাড়ছে কেন। আমি এ সব আর বরদাস্ত করব না। রেফার বন্ধ করতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই জেলা থেকে কলকাতার হাসপাতালে রোগী রেফার এত বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বৈঠকে অভিযোগ করেন, প্রসূতিদের পর্যন্ত কলকাতায় রেফার করা হচ্ছে। ওই চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই তো কোনও বিপদ হতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এদিন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকেও রীতিমতো ধমক দেন। তিনি বলেন, তোমাকে আরও স্ট্রং হতে হবে। তুমি এমনি ভালোমানুষ। কিন্তু তোমাকে ঘিরে নানা ধরনের লোক আছে। বৈঠকে এদিন স্বাস্থ্যকর্তাদের একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, কর্তারা কখনও সারপ্রাইজ ভিজিট দেন কি না।তিনি নির্দেশ দেন আপনারা কখনও কখনও ছদ্মবেশে হাসপাতাল ভিজিট করবেন। কখনও চাদর গায়ে দিয়ে, কখনও নকল দাঁড়ি, গোঁফ লাগিয়ে ভিজিট করুন। আগে একজন স্বাস্থ্যকর্তা ছিলেন, তিনি এভাবে আচমকা হাসপাতাল পরিদর্শন করতেন।
সোমবারের এই বৈঠকের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী আদৌকি জানেন রাজ্যের ব্লক বা গ্রামীন হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি। জেলা থেকে কলকাতার হাসপাতালে রোগী রেফার এত বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্লক ও গ্রামীন হাসপাতালগুলো সামান্য কারণে যখন রোগীদের শুধু রেফার করেন জেলা হাসপাতালে – তার মানে কি ব্লক ও গ্রামীন হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা পাওয়া যায় না?
সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি গ্রামীন হাসপাতাল কেন্দ্রীয় সরকারের মাপকাঠির বিচারে পশ্চিমবঙ্গের সেরা গ্রামীণ হাসপাতাল হিসেবে বিবেচিত হয়। জানা যায় পরিষেবা ও পরিবেশে রাজ্যে সেরা মেমারি গ্রামীণ হাসপাতাল। পরিবেশ গত ভাবে মেমারি গ্রামীন হাসপাতালের উন্নয়ণ হয়েছে এ কথা অনস্বীকার্য কিন্তু পরিষেবার ক্ষেত্রে বাস্তব পরিস্থিতি অন্যকথা বলে।
মেমারি হাসপাতালে পরিষেবা নিতে আসা রোগীদের আত্মীয় স্বজনদের একটাই অভিযোগ কথায় কথায় শুধু রেফার টু বর্ধমান। সামান্য আঘাত থেকে শুরু করে গলাই দড়ি, বিষ খাওয়া, সাপে কাটা রুগীদের যে চিকিৎসা প্রাথমিক ভাবে করা যায় সেগুলোও কোনপ্রকার রিস্ক না নিয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
মেমারি গ্রামীন হাসপাতালের উপর মেমারি শহর তথা মেমারি বিধানসভা ও থানা এলাকার বিশাল জনসংখ্যা নির্ভর করে কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হলো না। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল তার ইস্তেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মেমারিবাসী তাই এখনও অপেক্ষা করছে।
এদিকে বিধায়ক হওয়ার পর মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য প্রায়ই মেমারি গ্রামীন হাসপাতালে পরিদর্শনে যান রুগীদের সুবিধা অসুবিধার কথা জানার জন্য। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই রেফার টু বর্ধমান কেন সে বিষয়ে তদারকি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তার সাথে সাথে ব্যাপারটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর নজরেও আনা দরকার বলে মনে করছেন রোগীর আত্মীয় পরিজনরা।