জিরো পয়েন্ট নিউজ, উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, ১২ জুন ২০২৪ :
আজ জামাই ষষ্ঠী।আর এই জামাই ষষ্ঠীর মূল খাদ্য টাটকা ইলিশ থেকে এবারে বঞ্চিত জামাইরা। জামাইষষ্ঠীতে জামাইয়ে পাতে মধ্যমণি ইলিশ । বছরে এই দিন বাজারে টাটকা ইলিশ নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলে। দাম তুঙ্গে উঠলেও শ্বশুরমশাইয়েরা জান লড়িয়ে দেন টাটকা ইলিশ জোগাড়ে। নদীর পাড়ে ভিড় জমে জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি ইলিশ কেনার জন্য।কিন্তু এ বার আর সে আশা পূরণ হলো না। বর্ষা পিছিয়েছে। সরকারি ভাবে ১৪ জুন পর্যন্ত নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আছে। এখনও পর্যন্ত কোন ও ট্রলার ইলিশের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারেনি।ফলে এ বার জামাই ষষ্ঠীতে মিললো না টাটকা ইলিশ।
তবে শ্বশুর শাশুড়ির মনোবাঞ্ছা পূরণে ভরসা রাখতে হলো হিমঘরের ইলিশের উপরেই। মাছের বাজার গুলিতে পলিথিনে মোড়া বরফ-ঠান্ডা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে টাটকা ইলিশের থেকেও বেশি দামে।এ বছর জামাইষষ্ঠীতে রায়দীঘি, কাকদ্বীপ, নামখানা, এবং ডায়মন্ডহারবারে পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের ভরসা এই মায়ানমারের ইলিশ। এই ইলিশই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরো বাজারে। তাও বছর খানেকের পুরনো।হিমঘরে থাকা সেই মাছই এ বার পড়বে জামাইদের পাতে। আকারে বড় মাছের দাম খোলা বাজারে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা প্রতি কেজি। তাই জামাই আদরে রূপোলি ফসল ঘরে আনতে কপালের ভাঁজ চওড়া হতে বাধ্য শ্বশুরমশাইদের।বিভিন্ন পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, জামাইষষ্ঠীর দিন রাজ্যে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ টন ইলিশের চাহিদা থাকে। তবে এ বার শুধু ইলিশের দামেই ছ্যাঁকা নয়, পাবদা থেকে গলদা, ভেটকি থেকে কাতলা— সব মাছেরই একই অবস্থা।
দামের ঠেলায় মাথায় হাত মধ্যবিত্তের। কাকদ্বীপের বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম বুধবার সকালে ছিল ২২০০-২৫০০ টাকার কাছাকাছি। একই বাজারে পাবদার কেজি ৫০০-৫৫০ টাকা, ভেটকিরও একই দাম। গলদা ৭০০-৮০০ টাকা, কাতলা (কাটা) ৫০০ টাকা কেজি। তবু বছরে এই একটা দিন জামাই আপ্যায়নে ত্রুটি রাখতে চান না কোনও শাশুড়ি। প্যাকেট-বন্দি ইলিশই তাই বিকোচ্ছে দেদার।ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্র বাজারের এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন,এই মুহূর্তে বাজারগুলিতে হিমঘরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এই ইলিশ মূলত মায়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। মায়ানমারের ইলিশ একটু সরু ও লম্বাটে হয়ে থাকে। আর জামাইষষ্ঠী মাত করছে এই ইলিশই।
রায়দীঘির এক মৎস্যজীবী বলেন, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাই মায়ানমার থেকে ইলিশ মাছ জাহাজে করে এ রাজ্যে আনা হয়। এগুলি বেশির ভাগই ইরাবতী নদী থেকে ধরা ইলিশ।বুধবার সকালে কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন,এবারের জামাইষষ্ঠীতে ইলিশের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা মিটে যাবে কয়েক দিনের মধ্যে। ১৬ জুন থেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে ট্রলারগুলি যাবে। এরপরে মাছের দাম অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।তবে আপাতত এ বছর মায়ানমারের ইলিশই মান রাখলো জামাই ষষ্ঠীতে।