|| *** অনু গল্প *** ||
মামা ও করোনা
অগ্নিমিত্র ( ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য)
নববর্ষ আগতপ্রায় । আমার কিপটে মামা একটু ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন । সব কিছু তালাবন্ধ বলে আমিও বাড়ি ফিরতে পারিনি ; মামাবাড়িতেই আছি ।
নতুন বছর আসছে তাই মামা আজ তিনদিন পর বাড়ি থেকে বেরোলেন ।
সকালবেলা, বাজারে- দোকানে তুমুল ভীড়। সব দোকানেই কিলোমিটার খানেক লম্বা লাইন । লোকে দিব্যি ঘেঁষাঘেঁষি করে জিনিস কিনছে! চেনা উল্টোবাবু দশ কিলো চাল, চার কিলো আলু ও আট প্যাকেট দুধ কিনলেন ।..এদিকে পাগল বিকর্ণের দেখা নেই; কোথায় গিয়েছে কে জানে ।
মামা ভাবলেন, মাংস কিনবেন । সেখানেও লাইন ও লোকে গল্পও করছে । সুখদুঃখের গল্প; করোনা টরোনা ইত্যাদি!
কিছু লোক চায়ের দোকানে চা খাচ্ছে, কেউ ডাব খাচ্ছে । অনেকে মুখ ঢেকেছে, অনেকে ঢাকেনি ।..
মাংসের দোকানে দোকানীর বন্ধুরা কোথা থেকে বিয়ার কিনবে, তাই নিয়ে জল্পনা করে চলেছে ! কিছু লোক সিগারেট কোথায় পাওয়া যেতে পারে, তাই নিয়ে গুলতানি করছে ! .. সব কিছুই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ।
দেখেশুনে মামার তো চক্ষু চড়কগাছ! …এগুলো পরে আমাদের বলেছেন ।
” মানছি নববর্ষ আসছে, তাই বলে এমন অব্যবস্থা! ..এমন করলে তো আরো হুহু করে অসুখ ছড়াতে থাকবে!”
মাংস, পেঁয়াজ ও রসুন কিনে মামা বাড়ি ফিরলেন । ফিরেই সারপ্রাইজ!..স্কাইপে ভাইবোনদের সাথে কথা হলো । তাদের কেউ থাকে ইংল্যান্ডে, কেউ আমেরিকাতে । কেউই বেরোচ্ছে না বাড়ি থেকে! সবাই খুশি নতুন বছর নিয়ে, যদিও আগামী দিনে কী হতে চলেছে তা কেউ জানে না ।..
মামা সন্তুষ্ট চিত্তে বলেন -” বুঝলি পলু ! শারীরিক দূরত্ব বাড়লেও মনের দূরত্ব যেন না বাড়ে । তোকে অগ্রিম শুভ নববর্ষ । ”
ঠিক, ভাবলাম; মামা ঠিকই বলেছেন !
2 মন্তব্য
বাঙালির পয়লা বৈশাখের মেজাজ আজ একলা বৈশাখের পণে পরিপূর্ন। সৌজন্যে করোনার দাপাদাপি। স্যানিটাইজার হাতে লক্ষ্মী বার্তা-“ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন” – উনিশের করোনাকে চমকিত করেছে নিশ্চয়। শিল্পীর নিপুন শৈলী অতীব কুশলে করোনা সচেতনতার বার্তা প্রকাশের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের সূচনার সাংকেতিক ও বাঙালির সনাতন ভাবনার রূপদান করেছেন। সম্পাদকীয় তে করোনামুক্ত ভোরের খোঁজে জনসচেতনতার বার্তা স্পন্দিত। স্থিতিশীল উন্নয়নের পাশে বিকশিত হোক মানবিক গুন যা আজকের বর্তমান সময়ে একান্ত কাম্য।
অজয় কুমার দের ” বাংলা নতুন বছরের সেকাল একাল” বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। পয়লা বৈশাখ মানে হৃদয় বিদারক চৈত্র পেরিয়ে নতুন জীবনের শুরু। নতুন ভাবে ভাবা শুরু। আজও বাংলার গ্রামাঞ্চল, মফস্বলে নববর্ষ পালিত হয়।
ম্যাগাজিনের তৃতীয় পৃষ্ঠায় দুটি কবিতা স্থান পেয়েছে। শংকর হালদারের “মনে রেখো” কবিতায় কবি নিঃস্ব হৃদয়ের কোনো হিসেব না চেয়ে শুধু মনে রাখার আকুতি করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালো থাকার কামনা করেছেন। অজস্রতার ভিড়ে একাকী একটা হাত খুঁজেছেন। রজত ঘোষের ” হে একাকীত্ব” কবিতায় বন্ধু একাকীত্ব এর হাত ধরে নির্জন দুপুরে কাঙালের কেমন অনুভূতি কলম কালি নিয়ে খেলতে পারে তার কথা বলা হয়েছে।
কবিরুল লিখিত গল্প ” এক টুকরো ভারতবর্ষ” নেমে এসেছে ঘোষালবাড়িতে। ” বিবিধের মাঝে মিলন মহান” ভারতের এই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ঘোষালকর্তা তাই চড়কের মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করেছেন। পঞ্চম পৃষ্ঠায় ছোট্ট সোনামনির ” ইচ্ছে খুশি” গুলি সুন্দর রূপ দিয়েছেন কবি শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ। মুস্তারি বেগমের লেখনী সত্যিই অনবদ্য যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে খুবই ভাবায়।
করোনার গ্রাসে যখন ঢুকছে পৃথিবী, তখন সেই পৃথিবীকে বহু অনুরোধ “ওর করোনা ছিল না” ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে। একরাশ স্তব্ধ আকাশ শুনলো “কুয়া কুয়া কুয়া” আর এই পৃথিবী হারালো এক মা কে। নির্মম বাস্তবধর্মী এই কবিতা।
অগ্নিমিত্র ওরফে ড. সায়ন ভট্টাচার্য্য রচিত” মামা ও করোনা” তে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানসিক দূরত্ব কমানোর কথা বলেছেন। কবি রতন নস্কর তার কবিতা “প্রত্যাশা” করোনা মুক্ত পৃথিবীর আশা করছেন। সৈয়দ সেরিনার কবিতা “অন্যরকম বৈশাখ” পয়লা পরিবর্তে একলা বৈশাখ এর গান গেয়েছেন।অসীমা সরকার এর “সার্থক মা” একটি সার্থক ছোটগল্প যার মধ্যে শেষ হয়েও হইলো না শেষের সুর বর্তমান।
শিবব্রত গুহ র “ঘুরে এলাম বাংলাদেশ থেকে” ভ্রমণকাহিনী মূলক লেখায় একখন্ড বাংলাদেশ উঠে এসেছে। লেখার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠকের বিমূর্ত মনন ছবিগুলিকে মূর্ত রূপ দিয়েছে বলে মনে হয়।
ব্রততী ঘোষ আলীর কণ্ঠে আরণ্যক বসুর কবিতা “বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না” অসাধারণ। কবিতাটি অতীত-বর্তমান, সংস্কার- কুসংস্কার, ধর্ম-বিজ্ঞান, কল্পনা-বাস্তবতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। অতীতের কাল্পনিক জগৎ থেকে বাস্তবের মাটির ক্ষুদ্র শূন্যস্থানগুলিকে দেখিয়ে আগামী দিনে বিজ্ঞানের জয়গান গেয়েছেন। সত্যিই বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না।
“বৈশাখী-১৪২৭” ই ম্যাগাজিন সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রই স্থান পেয়েছে।
কবিতা, কবিতা আবৃত্তি, গল্প, অনুগল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী মেলবন্ধন এই ম্যাগাজিন। এগিয়ে চলুক এই ম্যাগাজিন ও জিরো পয়েন্ট নববর্ষে এই কামনা করি।
মাসিক ই-পত্রিকার প্রকাশনার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী ও অভিনব। বৈশাখী সংখ্যাটি শেয়ার ক’রলাম। প্রিয় সম্পাদক মহাশয়কে অনেক ধন্যবাদ।