25/04/2024 : 7:36 AM
অন্যান্য

e-জিরো পয়েন্ট – বৈশাখী ১৪২৭

|| *** কবিতা গুচ্ছ *** ||


ইচ্ছেখুশি

শম্পা গাঙ্গুলী ঘোষ


পড়তে বসে পাঠশালাতে
ছোট্ট সোনামণি
অঙ্ক কষে দুপুরবেলা
আঙুল গনি গনি।

পদ্যগুলো হাতটি নেড়ে
পড়ে যখন দুলে
মনে হয় ঠিক কচিপাতা
আলোর কথা বলে।

পড়ার শেষে সোনামণি
ঘরে ফেরার সময়
আলের ধারে মাঠের পথে
নিজেকে কি হারায়?

ঈশান কোণে আকাশ জুড়ে
জমল হঠাৎ কালো
সোনার মেয়ের হৃদয়খানি
হারিয়ে কোথায় গেল?

ওই সুদূরে অচীনপুরে
তেপান্তরের মাঠ
তারও পরে আছে কি সেই
ইচ্ছেনদীর ঘাট?

ব্যাঙগমা আর ব্যাঙগমীদের
সেই সেখানেই দেশ?
পাঠশালা যে নেইকো সেথা
খেলার নেইকো শেষ!

অচিনপুরের সেই দেশেতে
যাবেই ছোট্ট মেয়ে
স্বপ্ন গুলো ভাবায় তাকে
সত্যিকারের হয়ে।

লুকোচুরি খেলার শেষে
সারাদিনের পরে
মায়ের কোলে ফিরবে সোনা
পক্ষীরাজে চড়ে।


ও গর্ভবতী ছিলো

মুস্তারী বেগম


ওর মুখ কালো ছিলো
ওর দুচোখে ভয় ছিলো
ওর পেটে সন্তান ছিলো
ওর করোনা ছিলো না
তবুও ও মারা গেলো
ওর পাশে নার্স ছিলো কিনা জানি না
উপযুক্ত ডাক্তার ওকে সিজার করেছিলো কিনা জানি না।
ও সময়ে সব পরিষেবা পেয়েছিলো কিনা জানিনা।
ওর স্বামীটা পাথর হলো।
ওর মা মূর্ছা গেলো
ওর প্রথম সন্তান ওকে খুঁজছিলো।
পাঁচদিন ওরা ডাক্তার খানার দরজায় দরজায় ঘুরছিলো
ওদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো কিনা জানিনা।
ওদের গ্রামে করোনা রোগী নেই
ওদের পাশের গ্রামে ও করোনা রোগী নেই।
ওদের জেলায় করো না রোগী নেই।
ও নিঃশ্বাস নিতে পারছিলো না।
ওর মুখে মাক্স ছিলো।
অনেক অপেক্ষার পর ও টেবিল পেলো।
আজ পাঁচদিন ওর কাপড়ে চুঁয়ানো রক্ত।
ভীতহরিণীর মতো ও কুচকে ছিলো।
পাশে নার্স ছিলো কি না জানিনা।
উপযুক্ত ডাক্তার ছিলো কিনা জানিনা।
বেলা দশটায় ওর লড়াই শেষ হলো।
স্বামীর মন স্ত্রী র ঘরের দিকে পরে ছিলো।
সে হাতে গ্লাবস পড়েনি।
মুখে মাক্স পরেনি।
কে বা কারা যেনো দাঁতখেচিয়ে তাকে গেটের বাইরে বের করে দিলো।
প্রতিমার দেহ এলিয়ে পড়েছে বেডে।
ঠোঁট শুকনো।
রক্ত সব শেষ।
ওপারে চলে গেলো।
বলে গেলো আমার করোনা হয়নি।
আমাদের করোনা হয়নি।
ছোঁও।প্লিজ ছোঁও।
ডাক্তার বাবু।
টেস্ট করে নাও প্রযোজনে।
তবু ছোঁও।
আমার পেটের টা পৃথিবীতে আসবে।
ওর স্বামী পাথর হলো।
পাথর হতে হতে ভাস্কর্য হলো।
ভাস্কর্য হতে হতে টাওয়ার হলো।
চিৎকার ভেসে গেলো আকাশে
আমার করোনা হয়নি।
আমার স্ত্রী র করোনা হয়নি।
নবজাত লালঠোঁটে লালা নিয়ে আমাদের বললো
আমার মায়ের করোনা ছিলো না।
কুঁয়া কুঁয়া কুঁয়া।

স্তব্ধ আকাশ।
আমার চোখ থেকে পেনের কালি পড়ে
আমি চিৎকার করে বলি
বিশ্বাস করো ওর করোনা ছিলো না
ও গর্ভবতী ছিলো।

সরকারী নির্দেশ মানুন।
হাত সাবান দিয়ে ধৌতকরুন বার বার
মুখে মাক্স পড়ুন
অসহায় মানুষের পাশে দা‍ঁড়ান।

Related posts

সম্প্রীতির আবহাওয়ায় মেমারি তাতারপুর ডাঙ্গাপাড়ায় অন্নদান

E Zero Point

মাতৃসমা প্রকৃতি আজ শাসন করে চলেছে তার অবাধ্য শিশুদের

E Zero Point

আমফান ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে মেমারি শহর বিজেপি

E Zero Point

2 মন্তব্য

রজত ঘোষ April 14, 2020 at 7:52 pm

বাঙালির পয়লা বৈশাখের মেজাজ আজ একলা বৈশাখের পণে পরিপূর্ন। সৌজন্যে করোনার দাপাদাপি। স্যানিটাইজার হাতে লক্ষ্মী বার্তা-“ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন” – উনিশের করোনাকে চমকিত করেছে নিশ্চয়। শিল্পীর নিপুন শৈলী অতীব কুশলে করোনা সচেতনতার বার্তা প্রকাশের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের সূচনার সাংকেতিক ও বাঙালির সনাতন ভাবনার রূপদান করেছেন। সম্পাদকীয় তে করোনামুক্ত ভোরের খোঁজে জনসচেতনতার বার্তা স্পন্দিত। স্থিতিশীল উন্নয়নের পাশে বিকশিত হোক মানবিক গুন যা আজকের বর্তমান সময়ে একান্ত কাম্য।

অজয় কুমার দের ” বাংলা নতুন বছরের সেকাল একাল” বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। পয়লা বৈশাখ মানে হৃদয় বিদারক চৈত্র পেরিয়ে নতুন জীবনের শুরু। নতুন ভাবে ভাবা শুরু। আজও বাংলার গ্রামাঞ্চল, মফস্বলে নববর্ষ পালিত হয়।

ম্যাগাজিনের তৃতীয় পৃষ্ঠায় দুটি কবিতা স্থান পেয়েছে। শংকর হালদারের “মনে রেখো” কবিতায় কবি নিঃস্ব হৃদয়ের কোনো হিসেব না চেয়ে শুধু মনে রাখার আকুতি করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালো থাকার কামনা করেছেন। অজস্রতার ভিড়ে একাকী একটা হাত খুঁজেছেন। রজত ঘোষের ” হে একাকীত্ব” কবিতায় বন্ধু একাকীত্ব এর হাত ধরে নির্জন দুপুরে কাঙালের কেমন অনুভূতি কলম কালি নিয়ে খেলতে পারে তার কথা বলা হয়েছে।

কবিরুল লিখিত গল্প ” এক টুকরো ভারতবর্ষ” নেমে এসেছে ঘোষালবাড়িতে। ” বিবিধের মাঝে মিলন মহান” ভারতের এই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ঘোষালকর্তা তাই চড়কের মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করেছেন। পঞ্চম পৃষ্ঠায় ছোট্ট সোনামনির ” ইচ্ছে খুশি” গুলি সুন্দর রূপ দিয়েছেন কবি শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ। মুস্তারি বেগমের লেখনী সত্যিই অনবদ্য যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে খুবই ভাবায়।
করোনার গ্রাসে যখন ঢুকছে পৃথিবী, তখন সেই পৃথিবীকে বহু অনুরোধ “ওর করোনা ছিল না” ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে। একরাশ স্তব্ধ আকাশ শুনলো “কুয়া কুয়া কুয়া” আর এই পৃথিবী হারালো এক মা কে। নির্মম বাস্তবধর্মী এই কবিতা।

অগ্নিমিত্র ওরফে ড. সায়ন ভট্টাচার্য্য রচিত” মামা ও করোনা” তে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানসিক দূরত্ব কমানোর কথা বলেছেন। কবি রতন নস্কর তার কবিতা “প্রত্যাশা” করোনা মুক্ত পৃথিবীর আশা করছেন। সৈয়দ সেরিনার কবিতা “অন্যরকম বৈশাখ” পয়লা পরিবর্তে একলা বৈশাখ এর গান গেয়েছেন।অসীমা সরকার এর “সার্থক মা” একটি সার্থক ছোটগল্প যার মধ্যে শেষ হয়েও হইলো না শেষের সুর বর্তমান।

শিবব্রত গুহ র “ঘুরে এলাম বাংলাদেশ থেকে” ভ্রমণকাহিনী মূলক লেখায় একখন্ড বাংলাদেশ উঠে এসেছে। লেখার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠকের বিমূর্ত মনন ছবিগুলিকে মূর্ত রূপ দিয়েছে বলে মনে হয়।

ব্রততী ঘোষ আলীর কণ্ঠে আরণ্যক বসুর কবিতা “বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না” অসাধারণ। কবিতাটি অতীত-বর্তমান, সংস্কার- কুসংস্কার, ধর্ম-বিজ্ঞান, কল্পনা-বাস্তবতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। অতীতের কাল্পনিক জগৎ থেকে বাস্তবের মাটির ক্ষুদ্র শূন্যস্থানগুলিকে দেখিয়ে আগামী দিনে বিজ্ঞানের জয়গান গেয়েছেন। সত্যিই বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না।

“বৈশাখী-১৪২৭” ই ম্যাগাজিন সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রই স্থান পেয়েছে।
কবিতা, কবিতা আবৃত্তি, গল্প, অনুগল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী মেলবন্ধন এই ম্যাগাজিন। এগিয়ে চলুক এই ম্যাগাজিন ও জিরো পয়েন্ট নববর্ষে এই কামনা করি।

উত্তর
উত্তমকুমারখাঁ April 15, 2020 at 7:55 am

মাসিক ই-পত্রিকার প্রকাশনার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী ও অভিনব। বৈশাখী সংখ্যাটি শেয়ার ক’রলাম। প্রিয় সম্পাদক মহাশয়কে অনেক ধন্যবাদ।

উত্তর

মতামত দিন