|| *** গল্প *** ||
সার্থক মা
অসীমা সরকার
একমাত্র ছেলে সৌরভের বিয়ের গাড়িটা জলছবির মতো মিলিয়ে গেলো দূর থেকে দূরে। খুব অলবয়সেই পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছেলেটাকে
বুকে করে অনেক কষ্টে নিভাদেবী একাই মানুষ করেছেন। কখনও ছেলেকে বাবার অভাব বুঝতে দেন নি। সেই দুর্দিনের কথা স্মরণ করে চোখ দুটো ভিজে উঠলো।
——-‘একি? কাঁদছো কেনো? কি অলুক্ষনে ব্যাপার রে বাবা!! ছেলে যাচ্ছে বিয়ে করতে, মা কাঁদছে। ছেলের বিয়ে যেনো কারো হয় না। কি অমঙ্গল যে হবে ছেলেটার কে জানে…..’
চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন নিভাদেবী। জানিয়ে দিলেন, তাকে কেউ যেনো বিরক্ত না করে।
——‘-ইসসস…….সত্যি তো……এমনভাবে কেনো কাঁদলাম?সত্যি যদি ছেলেটার আগামী জীবনে কিছু অমঙ্গল নেমে আসে? না না এমনটা হবে না। অনেক কষ্টে মানুষ করেছি ওকে’। দীর্ঘদিনের পুরানো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন নীভাদেবী।
মালা পড়ানো স্বামীর ছবিটার দিকে তাকিয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে কাঁদতে বললেন—-
——–‘আর কেউ না জানুক,তুমি তো জানো। সৌর কে নিয়ে কতো কষ্টই না আমি করেছি। আজ,আ-আ-আজ তুমি ওকে আশীর্বাদ করেছো
তো? ও কিন্তু তোমার নীভার জন্যে বউ আনতে গেছে। তুমি,তুমি খুশী তো?’
নীভাদেবীর মনে পড়ে যেতে লাগলো সব পরপর………
যেদিন বউ হয়ে প্রথম এই পরিবারে এসেছিলেন,সেদিন থেকেই শুরু শ্বাশুড়ির অত্যাচার। বাধ্য হয়েই অমলবাবু নিজের পৈতৃক ভিটে ছেড়ে
উঠে আসেন ভাড়াবাড়ীতে। বছর দুয়েক বাদেই জন্ম হয় সৌরভের। security guard – এর চাকরী করা অমলবাবু যতদূর পারতেন স্ত্রী –ছেলের যাবতীয়, প্রয়োজনীয় সংসারের জিনিস মেটানোর চেস্টা করতেন।ভালো-মন্দে গরীবানা ভাবে খুব একটা খারাপ কাটছিলো না ওদের দিনগুলো। স্বচ্ছলতাখুব না থাকলেও তিনজনে আনন্দেই ছিলো। একদিন অমলবাবু, যে ফ্লাট এ security Guard এর চাকরী করতেন, সেখানে জলের পাম্প বন্ধ করতে গিয়ে প্রচন্ডভাবে current এর ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান।কিছু একটা পড়ে যাবার
জোর আওয়াজ পেয়ে,ফ্ল্যাটে র বাসিন্দারা ছুটে এসে অমলবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আর জ্ঞান ফেরেনি অমলবাবুর। বাড়িতে খবর দেওয়া হলে নীভাদেবী ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে কোনরকমে দৌড়ান হাসপাতালে।শেষ রক্ষা হোলো না। সৌর তখন সবে ক্লাস VII।
সেই থেকে লোকের বাড়ির blouse এহেম করে সংসার চালিয়ে ছেলেকে এই এত্তো বড়ো করেছেন।ফ্লাট থেকে পাওয়া অনুদানের টাকাটা
রেখে দিয়েছেন fixed করে ছেলের জন্যে। পড়াশুনায় ভালো থাকার জন্যে সৌরভ স্কুল ও কলেজ থেকে আর্থিক সাহায্যও পেয়েছে।
আজ hons graduate সৌরভ competitive exam দিয়ে সাফল্য পেয়ে bank-এর clerk,একটা দু-কামরার ফ্লাট ও কিনেছে সে।
হঠাৎ নীভা দেবীর মনে হোলো অমলবাবু তার দিকে তাকিয়ে হাসছেন আর বলছেন—
‘কেঁদোনা নীভা।আজ তোমার কত আনন্দের দিন।আমি নেই তো কি হয়েছে? তোমরা সুখে ঘর করো। আমি ওপর থেকে তোমাদের দেখবো।’ নীভাদেবী নিজেই অবাক হয়ে একা হাসতে লাগলেন।
——–‘সত্যিই তো……না……না,আমি আর কাঁদবো না। আমি কাঁদলে ওই মানুষটা যে বড়ো কষ্ট পায়। সে তো বেঁচে থাকতেও কোনোদিন আমার এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে পারতো না।’
———দরজা খুলে আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে আসেন নীভা দেবী।
আত্মীয়রা সবাই খুব খুশী হয়। এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা বলেন,—‘মায়ের আনন্দাশ্রু ছেলের মঙ্গল আনে গো। মা যে ছেলের সুখে আনন্দ করে কাঁদে।’
বিয়ের লগ্ন ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। সকলের সাথে হাসি-ঠাট্টায় মজে যান নীভাদেবী। প্রস্তুতি শুরু হয় পরের দিনের মা লক্ষী কে বরণ করার।
অপেক্ষায় থাকেন নীভাদেবী পরের দিন কখন তিনি দেখবেন তার ছেলে ও মেয়েকে। নীভাদেবী আজ একজন ‘সার্থক মা’।
2 মন্তব্য
বাঙালির পয়লা বৈশাখের মেজাজ আজ একলা বৈশাখের পণে পরিপূর্ন। সৌজন্যে করোনার দাপাদাপি। স্যানিটাইজার হাতে লক্ষ্মী বার্তা-“ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন” – উনিশের করোনাকে চমকিত করেছে নিশ্চয়। শিল্পীর নিপুন শৈলী অতীব কুশলে করোনা সচেতনতার বার্তা প্রকাশের পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের সূচনার সাংকেতিক ও বাঙালির সনাতন ভাবনার রূপদান করেছেন। সম্পাদকীয় তে করোনামুক্ত ভোরের খোঁজে জনসচেতনতার বার্তা স্পন্দিত। স্থিতিশীল উন্নয়নের পাশে বিকশিত হোক মানবিক গুন যা আজকের বর্তমান সময়ে একান্ত কাম্য।
অজয় কুমার দের ” বাংলা নতুন বছরের সেকাল একাল” বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। পয়লা বৈশাখ মানে হৃদয় বিদারক চৈত্র পেরিয়ে নতুন জীবনের শুরু। নতুন ভাবে ভাবা শুরু। আজও বাংলার গ্রামাঞ্চল, মফস্বলে নববর্ষ পালিত হয়।
ম্যাগাজিনের তৃতীয় পৃষ্ঠায় দুটি কবিতা স্থান পেয়েছে। শংকর হালদারের “মনে রেখো” কবিতায় কবি নিঃস্ব হৃদয়ের কোনো হিসেব না চেয়ে শুধু মনে রাখার আকুতি করেছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালো থাকার কামনা করেছেন। অজস্রতার ভিড়ে একাকী একটা হাত খুঁজেছেন। রজত ঘোষের ” হে একাকীত্ব” কবিতায় বন্ধু একাকীত্ব এর হাত ধরে নির্জন দুপুরে কাঙালের কেমন অনুভূতি কলম কালি নিয়ে খেলতে পারে তার কথা বলা হয়েছে।
কবিরুল লিখিত গল্প ” এক টুকরো ভারতবর্ষ” নেমে এসেছে ঘোষালবাড়িতে। ” বিবিধের মাঝে মিলন মহান” ভারতের এই ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ঘোষালকর্তা তাই চড়কের মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করেছেন। পঞ্চম পৃষ্ঠায় ছোট্ট সোনামনির ” ইচ্ছে খুশি” গুলি সুন্দর রূপ দিয়েছেন কবি শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ। মুস্তারি বেগমের লেখনী সত্যিই অনবদ্য যা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে খুবই ভাবায়।
করোনার গ্রাসে যখন ঢুকছে পৃথিবী, তখন সেই পৃথিবীকে বহু অনুরোধ “ওর করোনা ছিল না” ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে। একরাশ স্তব্ধ আকাশ শুনলো “কুয়া কুয়া কুয়া” আর এই পৃথিবী হারালো এক মা কে। নির্মম বাস্তবধর্মী এই কবিতা।
অগ্নিমিত্র ওরফে ড. সায়ন ভট্টাচার্য্য রচিত” মামা ও করোনা” তে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানসিক দূরত্ব কমানোর কথা বলেছেন। কবি রতন নস্কর তার কবিতা “প্রত্যাশা” করোনা মুক্ত পৃথিবীর আশা করছেন। সৈয়দ সেরিনার কবিতা “অন্যরকম বৈশাখ” পয়লা পরিবর্তে একলা বৈশাখ এর গান গেয়েছেন।অসীমা সরকার এর “সার্থক মা” একটি সার্থক ছোটগল্প যার মধ্যে শেষ হয়েও হইলো না শেষের সুর বর্তমান।
শিবব্রত গুহ র “ঘুরে এলাম বাংলাদেশ থেকে” ভ্রমণকাহিনী মূলক লেখায় একখন্ড বাংলাদেশ উঠে এসেছে। লেখার সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি পাঠকের বিমূর্ত মনন ছবিগুলিকে মূর্ত রূপ দিয়েছে বলে মনে হয়।
ব্রততী ঘোষ আলীর কণ্ঠে আরণ্যক বসুর কবিতা “বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না” অসাধারণ। কবিতাটি অতীত-বর্তমান, সংস্কার- কুসংস্কার, ধর্ম-বিজ্ঞান, কল্পনা-বাস্তবতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। অতীতের কাল্পনিক জগৎ থেকে বাস্তবের মাটির ক্ষুদ্র শূন্যস্থানগুলিকে দেখিয়ে আগামী দিনে বিজ্ঞানের জয়গান গেয়েছেন। সত্যিই বিজ্ঞান কখনো ঘুমোয় না।
“বৈশাখী-১৪২৭” ই ম্যাগাজিন সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রই স্থান পেয়েছে।
কবিতা, কবিতা আবৃত্তি, গল্প, অনুগল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী মেলবন্ধন এই ম্যাগাজিন। এগিয়ে চলুক এই ম্যাগাজিন ও জিরো পয়েন্ট নববর্ষে এই কামনা করি।
মাসিক ই-পত্রিকার প্রকাশনার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী ও অভিনব। বৈশাখী সংখ্যাটি শেয়ার ক’রলাম। প্রিয় সম্পাদক মহাশয়কে অনেক ধন্যবাদ।