কবিতা
রবিঠাকুর রবিঠাকুর
রতন নস্কর
রবিঠাকুর রবিঠাকুর জোড়াসাঁকোয় বাড়ি
রবিঠাকুর রবিঠাকুর ভুবন ডাঙায় পাড়ি ।
রবিঠাকুর কবির কবি সঙ্গী বারো মাস
দু:খে সুখে মরমী বাউল হৃদয় মাঝে বাস।
পদ্মাপারে শিলাইদহ জমিদারীর কাজে
মনের মাঝে গান কবিতা দিবানিশি বাজে ।
রবিঠাকুর সাধক ঋষি আলোক ধ্রুবতারা
শতদু:খেও তুমি অবিচল নীরব ঝর্ণাধারা ।
তোমার কলমে জগৎ জীবন অপরুপ জলছবি
সৃষ্টি তোমার নব দর্শন প্রণমি বিশ্বকবি ।
কাব্য কলায় গল্প গাথায় ভুবন ওঠে দুলে
বাঁচার নতুন পথ খুঁজে পাই বিরহ বেদন ভুলে ।
দুচোখ জুড়ে বৃষ্টি নামে গহন গহীন রাতে
তোমার গানে মুক্তি খুঁজি গীতবিতান হাতে ।
জ্যোৎস্না রাতের একতারা সুর প্রাণ জুড়িয়ে যায়
রবিঠাকুর,ভারতবর্ষ প্রণাম তোমার পায় ।
জানি ঠাকুর, দেশপ্রেমিক, দাঁড়িয়ে ছিলে রুখে
মানবতার মরণ দেখে কেঁদেছিল প্রাণ দু:খে ।
তোমায় জানা ফুরায় নাক জীবন জুড়ে থাক
স্মরণ করি ভক্তি অর্ঘ্যে পঁচিশে বৈশাখ ।
আম জারুল , শাল পিয়ালের পাতায় মধুমায়া
নিত্যদিনই তোমায় কবি নতুন করে পাওয়া ।
রবিঠাকুর,কোপাইনদী, খোয়াই পারের ডাক
রবির আলো মাখছে ভুবন পঁচিশে বৈশাখ ।♥
বিদ্রোহী কবি
মঞ্জুশ্রী মণ্ডল
নজরুল ইসলাম ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি ।
কবিতায় বিদ্রোহের প্রকাশ তাই বিদ্রোহী কবি ।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলা ছিল তাঁর জন্মস্থান ।
দারিদ্র্যকে বরণ করেও বাড়িয়েছিলেন সম্মান ।
নজরুল ইসলাম তো বাঙালি মণীষীর নিদর্শন ।
পিতার মৃত্যুতে সংসারে এল অভাব-অনটন।
শত কষ্টেও তখন তাঁর ভাঙ্গেনি কচি মন।
কিভাবে কি করা যায় চলছে মনে আলোড়ন।
দশ বছরেই নামতে হয় জীবিকা অর্জনের কাজে।
তখন থেকেই যান তিনি গান,কবিতা লেখায় মজে।
ছোট গল্প,বড় গল্প ,প্রবন্ধ লেখাতে ছিল মন।
উপন্যাস,নাটক,সঙ্গীত,দর্শনেও ছিল চয়ন ।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে কবিতা,গানে সমাদৃত ।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি বলে তিনি আদৃত ।
মানুষ ছিল অত্যাচার,অনাচার,শোষণে জর্জরিত ।
কলমেই ছিল তাঁর প্রতিবাদ অবধারিত ।
আরবী,ফারসী,উর্দু ভাষাতেও ছিলেন তিনি দক্ষ।
কবি,গীতিকার,নাট্যকার এর নেশায় ছিলেন মোক্ষ।
বাংলার নবজাগরণে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ।
ছিলেন প্রভাব বিস্তারকারী নানা প্রতিষ্ঠানের ভিত।
নানা কর্মে মোদের কাছে তিনি বরণীয়।
যুগ যুগান্তরে থাকবেন তিনি হয়ে স্মরণীয়।।♥
1 টি মন্তব্য
নববর্ষ সংখ্যার পর প্রকাশিত হয়েছে জিরো পয়েন্ট এর মাসিক জৈষ্ঠ্য সংখ্যা “রবীন্দ্র নজরুল সংখ্যা”।
লক ডাউন মাঝে মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন রবীন্দ্র নজরুল কে স্মরণ করে জিরো পয়েন্ট এর এই প্রয়াস অতুলনীয়। এই মহান দুই মনীষী দের সম্মান জানানোর পাশাপাশি আমরা এই সংখ্যায় পেলাম অসাধারণ সব সাহিত্য বুনন।
বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী আরণ্যক বসুর কবিতা সমালোচনা করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তাঁর কবিতা মানেই ‘spontaneous overflow of powerful feelings’। ”বৃন্তের দুটি ফুলে” কবিতাটিও ব্যতিক্রম নয়। রবীন্দ্র নজরুল এর পটভূমিকায় তিনি বলেছেন ‘সম্প্রীতি সম্প্রীতি রাখে শান্ত-নিরুদ্বেগ’ ।
শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ এর কবিতা “প্রণমি তোমারে” তে কবিমন রবীন্দ্রময় দৈনন্দিন জীবনের কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘আনন্দময় প্রকাশ’ ‘চিরস্থায়ী’ কবির ‘এ হৃদয় মাঝারে’। আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী র কবিতা “প্রেম শাশ্বত” তে পাওয়ার অফ আর্ট এর কথা বলা হয়েছে। মানব জীবনের সমস্যাময় পথে বহু বাধা আসবেই। তবু কবির কাছে
‘চির শাশ্বত কবির অমৃত বাণী’ ‘জন্ম জন্মান্তরের তপস্যা ধন’। সৃষ্টি ও স্রষ্টা এই কবিতায় প্রেমময় ঈশ্বর।
তৃতীয় পৃষ্ঠায় শুভাশিস মল্লিক “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল” শীর্ষক তথ্যপূর্ণ লেখনীতে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্পর্কে জানা যায়। বদ্রিনাথ পালের লেখা “এক বৃন্তের ফুল” এ অবিনশ্বর রবি-নজরুল কীর্তির জয়গান গেয়েছেন। ” তোমারই খোঁজে” কবিতায় দিকভ্রান্ত কবি ‘জীবনের জয়গান শোনে তোমার থানে বসে।’
কবিরুল এর ছোটগল্প “চন্ডালিকা” অসাধারণ। বর্তমান সময়ের পটভূমিকায় সমাজের নানান বিষয় খুব সুক্ষ চালে তুলে ধরেছেন তিনি। আজকের সমাজে মনিকার খুব দরকার। গল্প টি পড়তে পড়তে ডিলন টমাস এর “A Refusal to Mourn the Death” কবিতাটির কথা মনে পড়লো। আর এই গল্পের মাধ্যমে লেখক সমাজ সচেতনতার পাঠ দিতে ‘reverse psychology’ ব্যবহার করেছেন বলে মনে হয়।
“আহ্বানে কবি” তে কবি কেতকী মির্জার মননে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ফিরে আসার আর্তি ধরা পড়েছে: ‘ফিরে এসো গো কবি নজরুল/এসো এসো গো তরুন কবি নজরুল’। ডঃ রমলা মুখার্জি র প্রবন্ধ “পত্রিকা সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ” এর বিবরণ পাওয়া যায়। মিরাজুল সেখ “স্মরণে রবীন্দ্রনাথ” ও মুস্তারি বেগমের “অবেলার কবি” কবিতাদুটিতে চিরদার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জয়গান করেছেন।
বাংলা তথা বাঙালির ‘দমবন্ধ বাতাসে কালবৈশাখী’ হলেন কবিগুরু।
“কবিগুরু কে নিয়ে আমার ভাবনা” যে অসীমা সরকার কবিগুরু কে নিয়ে নানান ভাবনা তুলে ধরেছেন। ‘হিরকখন্ড’ উজ্জ্বল রবি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “অমৃতলোকে থাকো তুমি, হয়ে চির-ভাস্বর,/আমরা সদাই গাহিবো তোমার প্রেমগাঁথা নিরন্তর।” হাস্নে আরা বেগম “চিরনমস্য” কবিতায় বর্তমান সময়ে নজরুল এর অভাব লক্ষ্য করেছেন। তিনি মনে করেন আজকে নজরুল থাকলে ‘বুঝতো সবাই বিদ্রোহ কাকে বলে?’
দেবপ্রিয়া বারিক এর “রঙের রবীন্দ্রনাথ ” এ চিত্রশিল্পী কবিগুরু কে পাওয়া গেলো এবং সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি। রতন নস্করের “রবিঠাকুর রবিঠাকুর” ও মঞ্জুশ্রী মন্ডলের “বিদ্রোহী কবি” নামক কবিতা দুটিতে যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম কে সম্মান জানিয়েছেন। “রবীন্দ্র সাহিত্য ও সমাজচেতনা” ই অগ্নিমিত্র রবীন্দ্র সমাজ ভাবনার দিকটি তুলে ধরেছেন। লক ডাউন এর সময় বন্দি জীবনে ‘তোমার (রবীন্দ্র)বাণী, তোমার (রবীন্দ্র) চিন্তায়/গানে গল্পে কবিতায়, দিন কেটে যায়’ বলেছেন কবি বর্ণালী শেঠ তার “আর্জি” কবিতায়। কবি শিলাবৃষ্টি র “সাম্যবাদী” কবিতায় বিদ্রোহী কবি “নজরুল ভারতের প্রতি প্রান্তরে তুমি চির-বিদ্রোহী বীর !” শেষ পাতায় স্থান পেয়েছে অসাধারণ আবৃতিমালা ও পাণ্ডুলিপির ছবি। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগলো জৈষ্ঠ্য ১৪২৭ সংখ্যা।
…রজত ঘোষ, বালিন্দর, কালনা, পূর্ব বর্ধমান।