কবিতা
বৃন্তের দুটি ফুলে
আরণ্যক বসু
কবিতা যখন রামধনু হয়ে ভাসায় ছবি
সেই হৃদয়ের একূল-ওকূল নজরুল আর রবি।
একজন যদি দীগন্ত হয়, অন্যজনের গানে,
তেরো পার্বনে রূপসী বাংলা মানুষের কানে কানে!
আমাদের আছে অগ্নীবীণা সঙ্গে গীতাঞ্জলি
সুজন বন্ধু বাতাস ডাকছে ফেলে রেখে দলাদলি।
যখনই আগুন লেলিহান হয় ভুলে গিয়ে পরিমিতি
রবি-নজরুল একসাথে বলে– সম্প্রীতি সম্প্রীতি।
আবার যখন কাঁচা রোদ হাসে দীগন্তে নামে মেঘ,
এই দুই কবি আমাদের রাখে শান্ত-নিরুদ্বেগ।♥
প্রণমি তোমারে
শম্পা গাঙ্গুলী ঘোষ
জ্যোতির অতল গহন সমুদ্র হতে,
তব আনন্দময় প্রকাশ
খুলে দিল, হে উদার, হে জ্যোতির্ময়
মম তুচ্ছ জীবনের অন্তহীন আকাশ।
সংসারচক্রে, জীবনের সকল ছন্দে
সুখে দুঃখে আনন্দে বিরহে
নিত্য আছো তুমি অধরা বন্ধে
আছো তুমি গানের আরোহে অবরোহে।
অনুভবি সকল কর্মে, সকল কষ্টে নিত্যদিন
চোখের জলের বন্যা যায় ভেসে
তোমার গানের সুরে নিশিদিন
সমর্পিত এ প্রাণ, অজানা আশ্বাসে।
প্রণমি প্রানের রবি, তোমার আসন
চিরস্হায়ী এ হৃদয় মাঝারে
আসুক বারবার তব শুভ জন্মদিন
বাজুক বাঁশরী বৈশাখসমীরে।♥
প্রেম শ্বাশত
আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী
প্রেমের বিরহে চির বিরহী
বেদনা হত কবি
ব্যথার দহনে দহিয়া তুমি
সহেছো নিরবধি।
জন্ম জন্মান্তরের তপস্যা ধন
কবি মনের ছবি
প্রথম পরশে মনের হরষে ফোটে
নার্গিস বনের নূতন রবি।
বাঙলা মায়ের দেহখানি ধরে
ইংরেজ দলের ধ্বজাধারী
নিজেদের স্বার্থে খান খান করে
কতো নেতা ব্রহ্মচারী।
চির শাশ্বত কবির অমৃত বাণী
গড়ে-প্রেমের অট্টালিকা
তিল তিল করে ভাঙ্গিল সেদিন
সোনার প্রতিমা।
গোমতী থেকে বুড়িনদী
বামুনীর কাল বেয়ে
নজরুল নার্গিস মাঝে আসে
বিয়ের অতিথি হয়ে।
তবুও তোমার প্রেমের প্রথম বিন্দু ছিল
যে মাটির গহ্বরে
দিনের শেষে শূন্য দেহ মিলন ঘটালো
সবার অগোচরে।
তোমার প্রেমের বাঁধন টুটিতে
এমন সাধ্য কার
ঈশ্বর-কবি প্রেম বিলাতে আজও
জন্ম নেয় বারংবার।।♥
1 টি মন্তব্য
নববর্ষ সংখ্যার পর প্রকাশিত হয়েছে জিরো পয়েন্ট এর মাসিক জৈষ্ঠ্য সংখ্যা “রবীন্দ্র নজরুল সংখ্যা”।
লক ডাউন মাঝে মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন রবীন্দ্র নজরুল কে স্মরণ করে জিরো পয়েন্ট এর এই প্রয়াস অতুলনীয়। এই মহান দুই মনীষী দের সম্মান জানানোর পাশাপাশি আমরা এই সংখ্যায় পেলাম অসাধারণ সব সাহিত্য বুনন।
বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী আরণ্যক বসুর কবিতা সমালোচনা করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তাঁর কবিতা মানেই ‘spontaneous overflow of powerful feelings’। ”বৃন্তের দুটি ফুলে” কবিতাটিও ব্যতিক্রম নয়। রবীন্দ্র নজরুল এর পটভূমিকায় তিনি বলেছেন ‘সম্প্রীতি সম্প্রীতি রাখে শান্ত-নিরুদ্বেগ’ ।
শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ এর কবিতা “প্রণমি তোমারে” তে কবিমন রবীন্দ্রময় দৈনন্দিন জীবনের কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘আনন্দময় প্রকাশ’ ‘চিরস্থায়ী’ কবির ‘এ হৃদয় মাঝারে’। আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী র কবিতা “প্রেম শাশ্বত” তে পাওয়ার অফ আর্ট এর কথা বলা হয়েছে। মানব জীবনের সমস্যাময় পথে বহু বাধা আসবেই। তবু কবির কাছে
‘চির শাশ্বত কবির অমৃত বাণী’ ‘জন্ম জন্মান্তরের তপস্যা ধন’। সৃষ্টি ও স্রষ্টা এই কবিতায় প্রেমময় ঈশ্বর।
তৃতীয় পৃষ্ঠায় শুভাশিস মল্লিক “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল” শীর্ষক তথ্যপূর্ণ লেখনীতে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্পর্কে জানা যায়। বদ্রিনাথ পালের লেখা “এক বৃন্তের ফুল” এ অবিনশ্বর রবি-নজরুল কীর্তির জয়গান গেয়েছেন। ” তোমারই খোঁজে” কবিতায় দিকভ্রান্ত কবি ‘জীবনের জয়গান শোনে তোমার থানে বসে।’
কবিরুল এর ছোটগল্প “চন্ডালিকা” অসাধারণ। বর্তমান সময়ের পটভূমিকায় সমাজের নানান বিষয় খুব সুক্ষ চালে তুলে ধরেছেন তিনি। আজকের সমাজে মনিকার খুব দরকার। গল্প টি পড়তে পড়তে ডিলন টমাস এর “A Refusal to Mourn the Death” কবিতাটির কথা মনে পড়লো। আর এই গল্পের মাধ্যমে লেখক সমাজ সচেতনতার পাঠ দিতে ‘reverse psychology’ ব্যবহার করেছেন বলে মনে হয়।
“আহ্বানে কবি” তে কবি কেতকী মির্জার মননে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ফিরে আসার আর্তি ধরা পড়েছে: ‘ফিরে এসো গো কবি নজরুল/এসো এসো গো তরুন কবি নজরুল’। ডঃ রমলা মুখার্জি র প্রবন্ধ “পত্রিকা সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ” এর বিবরণ পাওয়া যায়। মিরাজুল সেখ “স্মরণে রবীন্দ্রনাথ” ও মুস্তারি বেগমের “অবেলার কবি” কবিতাদুটিতে চিরদার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জয়গান করেছেন।
বাংলা তথা বাঙালির ‘দমবন্ধ বাতাসে কালবৈশাখী’ হলেন কবিগুরু।
“কবিগুরু কে নিয়ে আমার ভাবনা” যে অসীমা সরকার কবিগুরু কে নিয়ে নানান ভাবনা তুলে ধরেছেন। ‘হিরকখন্ড’ উজ্জ্বল রবি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “অমৃতলোকে থাকো তুমি, হয়ে চির-ভাস্বর,/আমরা সদাই গাহিবো তোমার প্রেমগাঁথা নিরন্তর।” হাস্নে আরা বেগম “চিরনমস্য” কবিতায় বর্তমান সময়ে নজরুল এর অভাব লক্ষ্য করেছেন। তিনি মনে করেন আজকে নজরুল থাকলে ‘বুঝতো সবাই বিদ্রোহ কাকে বলে?’
দেবপ্রিয়া বারিক এর “রঙের রবীন্দ্রনাথ ” এ চিত্রশিল্পী কবিগুরু কে পাওয়া গেলো এবং সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি। রতন নস্করের “রবিঠাকুর রবিঠাকুর” ও মঞ্জুশ্রী মন্ডলের “বিদ্রোহী কবি” নামক কবিতা দুটিতে যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম কে সম্মান জানিয়েছেন। “রবীন্দ্র সাহিত্য ও সমাজচেতনা” ই অগ্নিমিত্র রবীন্দ্র সমাজ ভাবনার দিকটি তুলে ধরেছেন। লক ডাউন এর সময় বন্দি জীবনে ‘তোমার (রবীন্দ্র)বাণী, তোমার (রবীন্দ্র) চিন্তায়/গানে গল্পে কবিতায়, দিন কেটে যায়’ বলেছেন কবি বর্ণালী শেঠ তার “আর্জি” কবিতায়। কবি শিলাবৃষ্টি র “সাম্যবাদী” কবিতায় বিদ্রোহী কবি “নজরুল ভারতের প্রতি প্রান্তরে তুমি চির-বিদ্রোহী বীর !” শেষ পাতায় স্থান পেয়েছে অসাধারণ আবৃতিমালা ও পাণ্ডুলিপির ছবি। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগলো জৈষ্ঠ্য ১৪২৭ সংখ্যা।
…রজত ঘোষ, বালিন্দর, কালনা, পূর্ব বর্ধমান।