29/03/2024 : 3:08 PM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

e-জিরো পয়েন্ট – জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭ (রবীন্দ্র-নজরুল সংখ্যা)

ভাবনা


রঙের রবীন্দ্রনাথ

✒দেবপ্রিয়া বারিক

“অন্তর মম বিকশিত করো
অন্তর তর হে।
নির্মল করো উজ্জ্বল করো
সুন্দর করো হে। “

রবীন্দ্র সাহিত্য আমাদের জীবনের সুখ, দুঃখ , উচ্ছ্বাস, আবেগ, সকল অনুভূতির সঙ্গে কীভাবে মিশে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কবিতা, উপন্যাস, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, পত্রসাহিত্য, নাট্যসাহিত্য ,সংগীত, চিত্রকলা সকল দিক থেকে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করেছেন। আবার বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বাংলা সাহিত্যকে সম্মানিত করেছেন।
তিনি মাত্র আট বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করলেও চিত্রাঙ্কন (ছবি আঁকতে) শুরু করেন ষাট বছর বয়সে।তাঁর কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছিল না। তিনি তাঁর মনের ভাবনাকে খেলাচ্ছলে রেখা ও রঙের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন।
তিনি নিজের হাতের লেখার প্রতিও শিল্প সচেতন ছিলেন। তাঁর ‘রঠ’ সিলমোহর টিও একটি শৈল্পিক নিদর্শন।

অবচেতন মনে সাধারন কিছু কাটাকুটি কে রেখার ছন্দের মাধ্যমে পান্ডুলিপিতে শব্দগুলিকে শৈল্পিক সৌন্দর্য দান করে বহু অপূর্ব নকশাচিত্র অঙ্কন করেন। চিত্রশিল্পের প্রতি ভালোবাসার বীজ বপন শুরু কাটাকুটির নকশা চিত্র থেকে।
রবীন্দ্রনাথের ছবি গুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন-১। মুখমণ্ডল বা মুখবয়বের ছবি, ২।কাল্পনিক প্রাণীর ছবি, ৩।প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি।

এছাড়াও অনেক ছবি এঁকেছেন । তবে তিনি মুখাবয়বের ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন। এছাড়াও তিনি ফিমেল ন্যুডও এঁকেছেন।
তাঁর আঁকার পদ্ধতিও ছিল অদ্ভুত কখনো কলম,কখনো পেন্সিল, কখনো তুলি আবার ওভারকোটের হাতায় রং মাখিয়েও এঁকেছেন। তিনি ক্যানভাসে না এঁকে কাগজে আঁকতেন।
তাঁর ছবিতে লাল ও সবুজ রঙের ব্যবহার বেশী দেখা গেছে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ একে প্রোটনোপিয়া নামে আখ্যায়িত করেছেন।
তবে এক মজার বিষয় হলো, তিনি সব সময় ভাবতেন “ছবি টা আদৌ ছবি হলো কিনা “।
১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে তিনি তাঁর ছবি প্রদর্শনের আয়োজন করেন ‘ পিগাল আর্ট গ্যালারিতে ‘। এবং তিনিই প্রথম ভারতীয় শিল্পী যাঁর ছবি বা শিল্প রাশিয়া, ইউরোপ, ইউনাইটেড স্টেট-এ প্রদর্শিত হয় । তিনি পাশ্চাত্যে ছবি প্রদর্শনী করেছিলেন Argentinian Intellectual Victoria Ocampo এর সহযোগিতায়।
তিনি সাহিত্যে যা বলতে পারেননি ছবির মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন। তাঁর রঙের উগ্রতা , জ্যামিতিক আকার, কৌনিকতা ব্যবহারে কেউ কেউ এডভার্ড মুঙ্খ বা এমিল লোনদের শিল্পের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি অঙ্কন শিল্প কে এতটাই ভালোবাসতেন যে কলকাতার বাড়িতে ‘বিচিত্র ক্লাব’ নামে উঠতি শিল্পীদের অঙ্কন শিল্প প্রদর্শনের জন্য শিল্প চর্চা ক্লাব গড়ে তোলেন। অবশ্য এটি বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর তিনি ১৯১৯খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটিতে ‘কলাভবন কেন্দ্র’ গড়ে তোলেন।

সেখানে শিক্ষক হিসেবে আমন্ত্রিত হন চিত্রশিল্প জগতে নবরত্নের একরত্ন নন্দলাল বসু।
তিনি বিভিন্ন দেশের শিল্পকে আত্মস্থ করেছিলেন। যেমন-নিউজিল্যান্ডের লোকশিল্প, কানাডার পশ্চিম উপকূলের হাইদা খোদাই শিল্প ও ম্যাক্স পেচস্টইনের কাঠখোদাই শিল্প।
তিনি তাঁর শিল্প ও সাহিত্য চর্চার শৈশব সঙ্গী রানি চন্দ কে বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন art would be more lasting legacy than literature.
তাঁর সৃষ্টিকর্মের কাছে আবারও বলতে হয়-
“আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধূলার তলে। ”
জীবনকাল- (১৮৬১-১৯৪১)
ছদ্মনাম- ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা)
নোবেল পুরস্কার-১৯১৩খ্রিস্টাব্দে (গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ)
চিত্রশিল্প চর্চা জীবনের শেষ সতেরো বছরে
ছবি সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার (২৫০০)। সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগই দিল্লির ‘ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মর্ডান আর্ট ‘ ও শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটিতে সংরক্ষিত আছে।♥

Related posts

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা ~ সুব্রত চক্রবর্তী | মনোজ কুমার রায় | মুহাম্মদ ইসমাইল | নির্মাল্য পাণ্ডে | অর্পিতা চ্যাটার্জ্জী

E Zero Point

শিয়ালদহে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চবান মহাসম্মেলন

E Zero Point

সর্বজনীন সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাকল্পে, সন্ধান অনুসন্ধান অনুসন্ধিৎসা এষা অন্বেষা এবং ভাবনা

E Zero Point

1 টি মন্তব্য

রজত ঘোষ May 24, 2020 at 8:45 am

নববর্ষ সংখ্যার পর প্রকাশিত হয়েছে জিরো পয়েন্ট এর মাসিক জৈষ্ঠ্য সংখ্যা “রবীন্দ্র নজরুল সংখ্যা”।
লক ডাউন মাঝে মানুষ যখন গৃহবন্দি তখন রবীন্দ্র নজরুল কে স্মরণ করে জিরো পয়েন্ট এর এই প্রয়াস অতুলনীয়। এই মহান দুই মনীষী দের সম্মান জানানোর পাশাপাশি আমরা এই সংখ্যায় পেলাম অসাধারণ সব সাহিত্য বুনন।

বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী আরণ্যক বসুর কবিতা সমালোচনা করার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। তাঁর কবিতা মানেই ‘spontaneous overflow of powerful feelings’। ”বৃন্তের দুটি ফুলে” কবিতাটিও ব্যতিক্রম নয়। রবীন্দ্র নজরুল এর পটভূমিকায় তিনি বলেছেন ‘সম্প্রীতি সম্প্রীতি রাখে শান্ত-নিরুদ্বেগ’ ।

শম্পা গাঙ্গুলি ঘোষ এর কবিতা “প্রণমি তোমারে” তে কবিমন রবীন্দ্রময় দৈনন্দিন জীবনের কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের ‘আনন্দময় প্রকাশ’ ‘চিরস্থায়ী’ কবির ‘এ হৃদয় মাঝারে’। আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী র কবিতা “প্রেম শাশ্বত” তে পাওয়ার অফ আর্ট এর কথা বলা হয়েছে। মানব জীবনের সমস্যাময় পথে বহু বাধা আসবেই। তবু কবির কাছে
‘চির শাশ্বত কবির অমৃত বাণী’ ‘জন্ম জন্মান্তরের তপস্যা ধন’। সৃষ্টি ও স্রষ্টা এই কবিতায় প্রেমময় ঈশ্বর।

তৃতীয় পৃষ্ঠায় শুভাশিস মল্লিক “রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল” শীর্ষক তথ্যপূর্ণ লেখনীতে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সম্পর্কে জানা যায়। বদ্রিনাথ পালের লেখা “এক বৃন্তের ফুল” এ অবিনশ্বর রবি-নজরুল কীর্তির জয়গান গেয়েছেন। ” তোমারই খোঁজে” কবিতায় দিকভ্রান্ত কবি ‘জীবনের জয়গান শোনে তোমার থানে বসে।’

কবিরুল এর ছোটগল্প “চন্ডালিকা” অসাধারণ। বর্তমান সময়ের পটভূমিকায় সমাজের নানান বিষয় খুব সুক্ষ চালে তুলে ধরেছেন তিনি। আজকের সমাজে মনিকার খুব দরকার। গল্প টি পড়তে পড়তে ডিলন টমাস এর “A Refusal to Mourn the Death” কবিতাটির কথা মনে পড়লো। আর এই গল্পের মাধ্যমে লেখক সমাজ সচেতনতার পাঠ দিতে ‘reverse psychology’ ব্যবহার করেছেন বলে মনে হয়।

“আহ্বানে কবি” তে কবি কেতকী মির্জার মননে বিদ্রোহী কবি নজরুলকে ফিরে আসার আর্তি ধরা পড়েছে: ‘ফিরে এসো গো কবি নজরুল/এসো এসো গো তরুন কবি নজরুল’। ডঃ রমলা মুখার্জি র প্রবন্ধ “পত্রিকা সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ” এর বিবরণ পাওয়া যায়। মিরাজুল সেখ “স্মরণে রবীন্দ্রনাথ” ও মুস্তারি বেগমের “অবেলার কবি” কবিতাদুটিতে চিরদার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জয়গান করেছেন।
বাংলা তথা বাঙালির ‘দমবন্ধ বাতাসে কালবৈশাখী’ হলেন কবিগুরু।

“কবিগুরু কে নিয়ে আমার ভাবনা” যে অসীমা সরকার কবিগুরু কে নিয়ে নানান ভাবনা তুলে ধরেছেন। ‘হিরকখন্ড’ উজ্জ্বল রবি সম্পর্কে তিনি লিখেছেন: “অমৃতলোকে থাকো তুমি, হয়ে চির-ভাস্বর,/আমরা সদাই গাহিবো তোমার প্রেমগাঁথা নিরন্তর।” হাস্নে আরা বেগম “চিরনমস্য” কবিতায় বর্তমান সময়ে নজরুল এর অভাব লক্ষ্য করেছেন। তিনি মনে করেন আজকে নজরুল থাকলে ‘বুঝতো সবাই বিদ্রোহ কাকে বলে?’

দেবপ্রিয়া বারিক এর “রঙের রবীন্দ্রনাথ ” এ চিত্রশিল্পী কবিগুরু কে পাওয়া গেলো এবং সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি। রতন নস্করের “রবিঠাকুর রবিঠাকুর” ও মঞ্জুশ্রী মন্ডলের “বিদ্রোহী কবি” নামক কবিতা দুটিতে যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম কে সম্মান জানিয়েছেন। “রবীন্দ্র সাহিত্য ও সমাজচেতনা” ই অগ্নিমিত্র রবীন্দ্র সমাজ ভাবনার দিকটি তুলে ধরেছেন। লক ডাউন এর সময় বন্দি জীবনে ‘তোমার (রবীন্দ্র)বাণী, তোমার (রবীন্দ্র) চিন্তায়/গানে গল্পে কবিতায়, দিন কেটে যায়’ বলেছেন কবি বর্ণালী শেঠ তার “আর্জি” কবিতায়। কবি শিলাবৃষ্টি র “সাম্যবাদী” কবিতায় বিদ্রোহী কবি “নজরুল ভারতের প্রতি প্রান্তরে তুমি চির-বিদ্রোহী বীর !” শেষ পাতায় স্থান পেয়েছে অসাধারণ আবৃতিমালা ও পাণ্ডুলিপির ছবি। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগলো জৈষ্ঠ্য ১৪২৭ সংখ্যা।
…রজত ঘোষ, বালিন্দর, কালনা, পূর্ব বর্ধমান।

উত্তর

মতামত দিন