গল্প
ছায়া
কবিরুল
সুদাম পড়াশোনায় অমনোযোগী হলেও শিক্ষাগুরুর কথা মানত কদর করত। উনারা যা বলত তাই শুনত। শিক্ষক মহাশয়রা মহাত্মা গান্ধীর উপমা দিতেন। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের কথা বলতেন। বাপুজির জীবন দর্শনের কথা বলত। বাপুজীর সততা ছাত্রদের মুগ্ধ করত। রাধাকৃষ্ণননের নীতি আদর্শ সবাই মন দিয়ে শুনত। সব ছাত্ররা নীতি বাক্য না মানলেও সুদাম মানত।
সুদাম ছোট থেকেই সৎ হবার চেষ্টা করে এসেছে। আদর্শবান চরিত্রবাণ পুরুষ হতে চেয়েছে। সৎ শিক্ষক হতে চেয়েছে। এই জন্য লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়লেও সুদাম ছিল শিক্ষকদের কাছে চোখের মণি।
তাই প্রথম থেকেই শিক্ষকের সাথে একটা ভাল বণ্ডিং গড়ে উঠেছে। যেটা ওর কর্মজীবনকে অনেকখানি প্রভাবিত করেছিল।
সুদাম জীবনে চেয়েছিল একজন বড় আদর্শবান শিক্ষক হতে। শিক্ষার বীজ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। মানুষ গড়ার কারিগর হতে।
তবে জীবনে কোন কারণে সুদামের শিক্ষক হয়ে ওঠা হয় নি। জীবনের পথ থেকে সে সরে গিয়েছিল। ভাগ্যচক্রে সুদামকে ভাতের জন্য অন্যভাবে রোজগারের পথ বাছতে হয়েছিল।
তবে সুদাম সারাজীবন সৎ থেকে গেছে। আর তার সুফল সে হাতে নাতে পেয়েছিল। যদিও তারজন্য চোখের জল কম ফেলতে হয়নি সুদামকে। পুরষ্কারও ভাল জুটেছিল
সুদাম পড়াশোনায় অমনোযোগী হলেও শিক্ষাগুরুর কথা মানত কদর করত। উনারা যা বলত তাই শুনত। শিক্ষক মহাশয়রা মহাত্মা গান্ধীর উপমা দিতেন। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের কথা বলতেন। বাপুজির জীবন দর্শনের কথা বলত। বাপুজীর সততা ছাত্রদের মুগ্ধ করত। রাধাকৃষ্ণননের নীতি আদর্শ সবাই মন দিয়ে শুনত। সব ছাত্ররা নীতি বাক্য না মানলেও সুদাম মানত।
সুদাম ছোট থেকেই সৎ হবার চেষ্টা করে এসেছে। আদর্শবান চরিত্রবাণ পুরুষ হতে চেয়েছে। সৎ শিক্ষক হতে চেয়েছে। এই জন্য লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়লেও সুদাম ছিল শিক্ষকদের কাছে চোখের মণি।
তাই প্রথম থেকেই শিক্ষকের সাথে একটা ভাল বণ্ডিং গড়ে উঠেছে। যেটা ওর কর্মজীবনকে অনেকখানি প্রভাবিত করেছিল।
সুদাম জীবনে চেয়েছিল একজন বড় আদর্শবান শিক্ষক হতে। শিক্ষার বীজ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। মানুষ গড়ার কারিগর হতে।
তবে জীবনে কোন কারণে সুদামের শিক্ষক হয়ে ওঠা হয় নি। জীবনের পথ থেকে সে সরে গিয়েছিল। ভাগ্যচক্রে সুদামকে ভাতের জন্য অন্যভাবে রোজগারের পথ বাছতে হয়েছিল।
তবে সুদাম সারাজীবন সৎ থেকে গেছে। আর তার সুফল সে হাতে নাতে পেয়েছিল। যদিও তারজন্য চোখের জল কম ফেলতে হয়নি সুদামকে। পুরষ্কারও ভাল জুটেছিল
******
দাদুর হাত ধরে খুব ছোটতে সুদাম পনেরোই আগস্টের দিন পাড়ার অনুষ্ঠানে এসেছিল। সেদিন ঐ অনুষ্ঠানে মহাত্মা গান্ধীর উপর একটা নাটক হয়। চোখের সামনে নাটক দেখে বাপুজীকে প্রত্যক্ষ করল। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ আর নীতি সুদামের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠল। যেটা স্কুলের শিক্ষকরা দিদিমণিরা বারবার বলত। সুদামের কাছে গান্ধীজি ছিল প্রকৃত শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষাগুরু।
যদিও সুদাম সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণনের নাম শুনেছিল। উনার ধ্যান ধারণাও সুদামের চিন্তন আর মননকে প্রসারিত করেছিল।
সেই দিন থেকেই গান্ধীজির চেতনা সুদামের মনে শিউলি ফুল হয়ে ফুটেছিল। তবু শিক্ষক রাধাকৃষ্ণণ মুছে যায়নি।
সুদাম চেয়েছিল বড় হয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হবে। হতে পারেনি। কারণ পড়শোনা বেশীদূর চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।
সুদামের কাছে বাপুজীই রাধাকৃষ্ণণ।
সেই যে গান্ধীজির আদর্শ ওর মনে ঢুকল, সেই থেকে তা ঢাল হয়ে সুদামকে রক্ষা করে এসেছে।
******
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু সুদামের গান্ধীবাদ মন থেকে মুছে যায়নি। বোকা , গোবেচারী , সরল সুদাম জীবনে গান্ধীবাদের পরীক্ষায় পাশ করল বটে , তবে নিজের ক্যারিয়ারটা শেষ করল।
রাধাকৃষ্ণননের বীজ রোপিত হয়ে অঙ্কুর বের হবার পর আর বেড়ে উঠল না। শিক্ষক হবার স্বপ্ন মুছে গেল চিরতরে।
******
বারো ক্লাসের বোর্ড এক্জাম। পরীক্ষার হল বেশ থমথমে। সুদাম ভালই লিখছে। সুদামের বন্ধু প্রতীক কিছুই পারছে না।পরোপকারী সুদাম বন্ধুকে দেখাতে গিয়ে গার্ডের কড়া নজরে পড়ল। সুদামের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়।
সুদাম আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। সুদাম অহিংসায় বিশ্বাসী। সততায় বিশ্বাসী। বারো ক্লাস পাস করলেই প্রতীকের পুলিশের চাকরি পাকা। ওর বোনেরও বিয়ে দিতে হবে ওকে। সুদাম পারত গার্ডকে সব খুলে বলতে। পারেনি। প্রতীককে বাঁচিয়ে দিল।
হয়ত বারো ক্লাস পাস করার পর ওর জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরত। সৎ শিক্ষক হবার স্বপ্নটা বেঁচে থাকত।
******
পরে একবার ……
অটো চালানোর সময় কুকুরের বাচ্ছা ওর অটোর সামনে চলে আসে আর মারা যায়। ইউনিয়নের ছেলেরা ওকে বেধড়ক মার মারে। সেবারেও গান্ধীবাদের জয় হয়।
******
সুদামের ক্যানসার আক্রান্ত মা হসপিটালে ভর্তি আছে। অবস্থা সিরিয়াস।
আজ গান্ধীজির বার্থডে। দুদিন বাদেই পুজো। রাস্তায় সাংঘাতিক ভিড়।
সারাদিন অটো চালিয়ে ক্লান্ত সুদাম হসপিটালে যাবার সময় পায়নি। সন্ধ্যের অনেক পরে হসপিটালের দিকে পা বাড়াতেই একটা বড় ব্যাগ নজরে পড়ল। কেউ ফেলে গেছে তার অটোতে। ব্যাগে প্রচুর টাকা আর জুয়েলারী।
বাইরে অনেকটা টাকার দেনা।
মালদার মঙ্গলবাড়ির সুদাম পারত ব্যাগের সব জিনিস আত্মসাৎ করতে।
পারল না। হৃদয়ের অলিন্দে লুকানো ” গান্ধীবাদ ” তার ক্ষণিকের লোভকে মেরে ফেলল।
রুপেশ কানারিয়া টাকা ও সব গহনা ফেরৎ পেলেও সুদাম সব হারাল।
******
এগারোটার পর যখন হসপিটালে পা রাখল তখন দেখল মায়ের মরদেহ ফুলের আদরে মুড়ে রয়েছে।
অনতিদূরেই গান্ধীর মূর্তি। আর কিছু দূরে হাইস্কুলের প্রাঙ্গনে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণননের মূর্তি। গাঢ় আলো আর ফুলে সুসজ্জিত হয়ে মূর্তি দুটি হাসছে।
সুদামকে দেখেই হাসপাতালে সমবেত সকলে সমস্বরে চিৎকার করে উঠল –
” বল হরি হরি বোল !
বল হরি হরি বোল !
মায়ের মৃত্যু হল বটে । বেঁচে থাকল আদর্শ। গুরুর শিখানো বুলি।
চিতার আগুণে ঝলসে উঠল মায়ের মরদেহ।
মরদেহ পুরোপুরি দাহ হলে মায়ের অস্থিভস্ম কপালে ঠেকিয়ে গান্ধীজি আর রাধাকৃষ্ণনের মূর্তিকে করজোড়ে প্রণাম করে অটোর পাশে দাঁড়াল সুদাম।
মৃর্তিদুটির ছায়া সুদাম আর সুদামের অটোর উপরে পড়েছে।
ছায়া দুটিই সুদামের চলার পথের সঙ্গী। ঢাল। পথের পাথেয়।
ছায়া দুটি সততার ছায়া। আদর্শভাবে পথ চলার ছায়া। প্রকৃত শিক্ষার ছায়া।
সারা জীবন সুদাম ঐ ছায়া দুটিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকবে। আর মানুষের মঙ্গল করবে।
দাদুর হাত ধরে খুব ছোটতে সুদাম পনেরোই আগস্টের দিন পাড়ার অনুষ্ঠানে এসেছিল। সেদিন ঐ অনুষ্ঠানে মহাত্মা গান্ধীর উপর একটা নাটক হয়। চোখের সামনে নাটক দেখে বাপুজীকে প্রত্যক্ষ করল। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ আর নীতি সুদামের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠল। যেটা স্কুলের শিক্ষকরা দিদিমণিরা বারবার বলত। সুদামের কাছে গান্ধীজি ছিল প্রকৃত শিক্ষক। আদর্শ শিক্ষাগুরু।
যদিও সুদাম সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণনের নাম শুনেছিল। উনার ধ্যান ধারণাও সুদামের চিন্তন আর মননকে প্রসারিত করেছিল।
সেই দিন থেকেই গান্ধীজির চেতনা সুদামের মনে শিউলি ফুল হয়ে ফুটেছিল। তবু শিক্ষক রাধাকৃষ্ণণ মুছে যায়নি।
সুদাম চেয়েছিল বড় হয়ে একজন আদর্শ শিক্ষক হবে। হতে পারেনি। কারণ পড়শোনা বেশীদূর চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি।
সুদামের কাছে বাপুজীই রাধাকৃষ্ণণ।
সেই যে গান্ধীজির আদর্শ ওর মনে ঢুকল, সেই থেকে তা ঢাল হয়ে সুদামকে রক্ষা করে এসেছে।
******
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। কিন্তু সুদামের গান্ধীবাদ মন থেকে মুছে যায়নি। বোকা , গোবেচারী , সরল সুদাম জীবনে গান্ধীবাদের পরীক্ষায় পাশ করল বটে , তবে নিজের ক্যারিয়ারটা শেষ করল।
রাধাকৃষ্ণননের বীজ রোপিত হয়ে অঙ্কুর বের হবার পর আর বেড়ে উঠল না। শিক্ষক হবার স্বপ্ন মুছে গেল চিরতরে।
******
বারো ক্লাসের বোর্ড এক্জাম। পরীক্ষার হল বেশ থমথমে। সুদাম ভালই লিখছে। সুদামের বন্ধু প্রতীক কিছুই পারছে না।পরোপকারী সুদাম বন্ধুকে দেখাতে গিয়ে গার্ডের কড়া নজরে পড়ল। সুদামের খাতা কেড়ে নেওয়া হয়।
সুদাম আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। সুদাম অহিংসায় বিশ্বাসী। সততায় বিশ্বাসী। বারো ক্লাস পাস করলেই প্রতীকের পুলিশের চাকরি পাকা। ওর বোনেরও বিয়ে দিতে হবে ওকে। সুদাম পারত গার্ডকে সব খুলে বলতে। পারেনি। প্রতীককে বাঁচিয়ে দিল।
হয়ত বারো ক্লাস পাস করার পর ওর জীবনের মোড় অন্যদিকে ঘুরত। সৎ শিক্ষক হবার স্বপ্নটা বেঁচে থাকত।
******
পরে একবার ……
অটো চালানোর সময় কুকুরের বাচ্ছা ওর অটোর সামনে চলে আসে আর মারা যায়। ইউনিয়নের ছেলেরা ওকে বেধড়ক মার মারে। সেবারেও গান্ধীবাদের জয় হয়।
******
সুদামের ক্যানসার আক্রান্ত মা হসপিটালে ভর্তি আছে। অবস্থা সিরিয়াস।
আজ গান্ধীজির বার্থডে। দুদিন বাদেই পুজো। রাস্তায় সাংঘাতিক ভিড়।
সারাদিন অটো চালিয়ে ক্লান্ত সুদাম হসপিটালে যাবার সময় পায়নি। সন্ধ্যের অনেক পরে হসপিটালের দিকে পা বাড়াতেই একটা বড় ব্যাগ নজরে পড়ল। কেউ ফেলে গেছে তার অটোতে। ব্যাগে প্রচুর টাকা আর জুয়েলারী।
বাইরে অনেকটা টাকার দেনা।
মালদার মঙ্গলবাড়ির সুদাম পারত ব্যাগের সব জিনিস আত্মসাৎ করতে।
পারল না। হৃদয়ের অলিন্দে লুকানো ” গান্ধীবাদ ” তার ক্ষণিকের লোভকে মেরে ফেলল।
রুপেশ কানারিয়া টাকা ও সব গহনা ফেরৎ পেলেও সুদাম সব হারাল।
******
এগারোটার পর যখন হসপিটালে পা রাখল তখন দেখল মায়ের মরদেহ ফুলের আদরে মুড়ে রয়েছে।
অনতিদূরেই গান্ধীর মূর্তি। আর কিছু দূরে হাইস্কুলের প্রাঙ্গনে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণননের মূর্তি। গাঢ় আলো আর ফুলে সুসজ্জিত হয়ে মূর্তি দুটি হাসছে।
সুদামকে দেখেই হাসপাতালে সমবেত সকলে সমস্বরে চিৎকার করে উঠল –
” বল হরি হরি বোল !
বল হরি হরি বোল !
মায়ের মৃত্যু হল বটে । বেঁচে থাকল আদর্শ। গুরুর শিখানো বুলি।
চিতার আগুণে ঝলসে উঠল মায়ের মরদেহ।
মরদেহ পুরোপুরি দাহ হলে মায়ের অস্থিভস্ম কপালে ঠেকিয়ে গান্ধীজি আর রাধাকৃষ্ণনের মূর্তিকে করজোড়ে প্রণাম করে অটোর পাশে দাঁড়াল সুদাম।
মৃর্তিদুটির ছায়া সুদাম আর সুদামের অটোর উপরে পড়েছে।
ছায়া দুটিই সুদামের চলার পথের সঙ্গী। ঢাল। পথের পাথেয়।
ছায়া দুটি সততার ছায়া। আদর্শভাবে পথ চলার ছায়া। প্রকৃত শিক্ষার ছায়া।
সারা জীবন সুদাম ঐ ছায়া দুটিকে আঁকড়ে বেঁচে থাকবে। আর মানুষের মঙ্গল করবে।♦