27/04/2024 : 9:35 AM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

|| শিক্ষাঞ্জলি || e-জিরো পয়েন্ট – ভাদ্র ১৪২৭

ব্ল্যাক বোর্ড


প্রিয় সিদ্দিকী স্যার

✒ শ্যামল কুমার সরকার

সব স্যারের কথা শিক্ষার্থীদের আনন্দের সাথে মনে পড়ে না। আবার কোনো কোনো স্যার বরাবরই থেকে যান শিক্ষার্থীর মনের মণিকোঠায়। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেন এগিয়ে যেতে। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ী থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী তেমনই একজন স্যার। কখনও এভাবে স্যারকে নিয়ে লিখতে হবে ভাবিনি। অথচ স্যারকে নিয়েই লিখছি। আমার পাশেই স্যারের স্মিতহাস্যের ফাইল ছবি। আশির দশকের শেষভাগে স্যারের সাথে পরিচয় হয় ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে। অতি সাধারণ পোশাকে অতি সাধারণ চলাফেরা। স্যার মাঝে মধ্যে বাইসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতেন। বিশ^বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের এমন অবস্থা কি ভাবা যায়? পরবর্তীতে স্যারকে খুব কম দামী পুরনো একটি মোটরবাইক চালাতে দেখেছি। জানতাম স্যারের বাসা শহরের শালবাগান এলাকায়। প্রায় দুই যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসার পর স্যারের সাথে আর দেখা হয়নি। বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে ও অন্য কয়েকজন স্যারের সাথে দেখা হলে সিদ্দিকী স্যারের খবর নিয়েছি। ইংরেজি বিভাগে আরেকজন রেজাউল স্যার থাকায় বিভ্রাট এড়াতে আমরা অনেকেই স্যারকে সিদ্দিকী স্যার বলে সম্বোধন করতাম।

স্যার শহীদল্লাহ কলা ভবনের চেম্বারে বসে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। স্যার আমাদের যোশেফ কনরাডের ‘হার্ট অব ডার্কনেস’ আর রবার্ট ব্রাউনিংয়ের কবিতা পড়িয়েছেন। মনে আছে ‘হার্ট অব ডার্কনেস’ পড়াতে গিয়ে একদিন স্যার আফ্রিকার মানচিত্র ক্লাশে নিয়ে এসেছিলেন। ভৌগলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে স্যার অত্যন্ত আকর্ষর্ণীয়ভাবে আমাদের কালজয়ী বইটি পড়িয়েছেন। আর ব্রাউনিংয়ের কবিতা পড়াতে গিয়ে আর্ট ও শিল্পকলার ইতিহাস নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। এই তো একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকের কাজ। শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ জ্ঞানদান করা যায় না- বিষয়টি স্যারের কাজ থেকে জেনেছি। একাডেমিক কাজে যাই যাই করেও আমার প্রাণের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে যাওয়া হচ্ছে না। এখন গেলেও আর স্যারের সাথে দেখা হবে না। টিভি চ্যানেল আর দৈনিকের প্রথম পাতায় আমার প্রিয় স্যারের আগের ছবি ও মর্মান্তিক ছবি দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। স্যারের একমাত্র ছেলের ক্রন্দনরত ছবি দেখে ও স্যারের মুখ স্মরণ করে কেঁদেছিলাম। আমার স্যারের মতো একজন ভালো মানুষ এভাবে চলে যেতে পারেন না।

স্যারের পরিবারের সদস্যরা ও স্বজন কিভাবে এ নিষ্ঠুরতা সহ্য করছেন ? এটা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ বর্বরতা ক্ষমার অযোগ্য। এর যথাযথ বিহিত হওয়া উচিত। স্বজন হারানোর বেদনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ভালো করেই জানেন। কাজেই আশা করব অতিদ্রæত স্যারের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। এতে স্যারের প্রতি জাতির ঋণের কিছুটা হলেও শোধ হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে বিভাগীয় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানাই আপনারা যার যার অবস্থান হতে সিদ্দিকী স্যারের হত্যার প্রতিবাদ করুন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার হউন। তবেই স্যারের প্রতি আমাদের ঋণ বিন্দুমাত্র হলেও শোধরানো হবে। ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর সংঘটিত লেখক ও বুদ্ধিজীবি হত্যার ধারাবাহিকতা যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বিজয় অর্জন অর্থহীন হয়ে পড়বে। দানবের থাবা হতে দেশকে মুক্ত করে মানবের বাসযোগ্য করার জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে। স্যার, আপনি ওপারে ভালো থাকবেন। আমাদের ক্ষমা করবেন !

Related posts

প্রকাশিত হলো রস-সাহিত্যিক ‘কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়’ স্মারক সংখ্যা

E Zero Point

একুশের অনুভূতি – ২১ স্রষ্টার একুশে শ্রদ্ধাঞ্জলি

E Zero Point

প্রকাশিত হলো উৎসর্গ পত্রিকার মোড়ক

E Zero Point

মতামত দিন