26/04/2024 : 2:35 PM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

|| শিক্ষাঞ্জলি || e-জিরো পয়েন্ট – ভাদ্র ১৪২৭

স্মৃতির স্কুল ব্যাগ


আমার প্রিয় শিক্ষক

✒ মৈত্রেয়ী সিংহরায়
প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে লিখতে বসলে চোখের সামনে ভিড় করেন বেশ কয়েকজন অসামান্য ব‍্যক্তিত্ব যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়
পর্যন্ত আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁদের প্রত‍্যেকের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আমি গর্বিত যে আমি তাঁদের স্নেহধন‍্যা। কিন্তু
জীবনের চলার পথে শুধুমাত্র প্রথাগত
শিক্ষা নয়,একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে
ওঠার পাঠ যাঁর কাছে পেয়েছিলাম তিনি
আমার বাবা, আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর অনাড়ম্বর জীবনের প্রতিটি
দৃঢ় পদক্ষেপ আমার শিক্ষার ভিত রচনা
করে।
        স্বল্পভাষী,আবেগপ্রবণ,রসিক অথচ ভীষণ গম্ভীর মানুষটির তীক্ষ্ণ ব‍্যক্তিত্ব আমাকে আকৃষ্ট করতো। যখন শৈশব এসে মাথা নেড়েছে উঠোনে, টলমল পা,
সেইসময় থেকেই পেয়েছি মেরুদন্ড সোজা
করে চলার শিক্ষা, আর ওই দামাল শৈশব
থেকেই অন্তরে গেঁথে দিয়েছিলেন তাঁর
খুব প্রিয় কতকগুলো শব্দ ভালোবাসা, মানবতা,আত্মশক্তি,আত্মমর্যাদা সহিষ্ণুতা। না,কখনো‌ই নীতিবাক্য দিয়ে
কাজ সারেন নি,গোপনে কৌশলে প্রয়োগ করে দেখিয়েছিলেন ধনসম্পদ নয় এইগুলো‌ই জীবনের মহামূল্যবান ভূষণ। আড়ম্বরের চাপল‍্য যেন আত্মসম্মানকে কখনো স্পর্শ করে না এই ছিল তাঁর শিক্ষা। নিজের তিলমাত্র সম্মান রক্ষার প্রতিও তাঁর লেশমাত্র শৈথিল্য ছিল না,অনেক উঁচুপদে অধিষ্ঠিত থেকেও নিজের চরিত্রকে সর্বপ্রযত্নে রক্ষা করতেন। এই শিক্ষা যে আজ কত প্রয়োজন তা মর্মে মর্মে অনুভব করি।
       ভেদাভেদ কথাটির প্রবেশ আমাদেরপরিবারে নিষিদ্ধ ছিল, মানুষের মনুষ্যত্ব হানিকে তিনি উপদ্রব বলে মনে করতেন।
ধর্ম সম্পর্কে বলতেন , ধর্ম মানে হৃদয় জুড়ে ভালোবাসার প্রকাশ এবং নিজের মধ্যে যে অকৃত্রিম মনুষ্যত্ব তিনি অনুভব করতেন কখন কোন ফাঁকে তার বীজ আমার মধ্যে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন তা
ভেবে আজ বিস্মিত হ‌ই।
      মনের জড়তা ও অন্ধকারকে দূর করার জটিল অঙ্ক তাঁর কাছেই শিখেছি,
বাহ‍্যানুষ্ঠান নয় অন্তরের সজীবতা ও সরসতাই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আধো আধো
বোল, দুই বিনুনি করা শৈশব তখন থেকেই
বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ে মানেই এক অফুরন্ত শক্তির আধার,আমার মধ্যেও আছে টুকরো দূর্গা। সামান্য যেটুকু লেখালিখি করি তার অনুপ্রেরণা একমাত্র আমার বাবা। শুধু তাই নয় কবিতা আবৃত্তিও শিখি বাবার কাছ থেকেই। ধরে ধরে শিখিয়েছেন উচ্চারণ।পরিশীলিত রুচি গড়ে তুলতে তাঁর জুড়িমেলা ভার।মিঠে শৈশবের বড় হ‌ওয়ার শুরুতেই এই
দুঁদে শিক্ষক স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি দৈহিক সৌন্দর্য্য নয় মনের
সৌন্দর্য্যই প্রকৃত সৌন্দর্য্য।স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন ও দেখাতে ভালোবাসতেন। কোনো দেবদেবী নয় মা বাবা‌ই যে প্রকৃত বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণা এ শিক্ষা তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি। আজ এই শিক্ষা আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রয়োগ করি।
    ইংরাজীর এই শিক্ষকের ছিল মাথাভর্তি বিজ্ঞান, কতো অনায়াসে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন জটিল জটিল পাটিগণিত,যা আজ জীবনের হিসাব মেলাতে বড় সহায়ক। আজ বুঝতে পারি একজন ভালো শিক্ষকের গুরুত্ব জীবনে কতখানি।ব‍্যতিক্রমী এই মানুষটিই আমার প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধু , যিনি ইহজগতে না থেকেও শতগুণে বিরাজ করছেন আমার মধ্যে। যখন আমি নির্জনে জীবনের ভার বহনে ম্লান ও ম্রিয়মাণ হ‌ই তখন এই মহান শিক্ষকের স্পর্শ অনুভব করি অন্তরে। তাঁর প্রতি এবং আমার সমস্ত শিক্ষকদের  প্রতি র‌ইল‌ বিনম্র শ্রদ্ধা। ♦

Related posts

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিঃ আষাঢ় মাসের মাসিক ই-ম্যাগাজিন

E Zero Point

দৈনিক কবিতাঃ আমি আসবো…….

E Zero Point

সর্বজনীন সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাকল্পে, সন্ধান অনুসন্ধান অনুসন্ধিৎসা এষা অন্বেষা এবং ভাবনা

E Zero Point

মতামত দিন