অনুগল্প
পথপ্রদর্শক
পরেশ নাথ কোনার
এক এক জনের অবদান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভোলা যায় না।একজন সন্তানের জীবনে তার বাবা মা র অবদানযেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক মহাশয়ের ভূমিকা।বাবা মা তাদের সন্তান নামক কাদা মাটি টিকে অল্প একটু আকার দিয়ে তুলে দেন শিক্ষক মহাশয়ের হাতে, শিক্ষক মহাশয় তার যত্ন দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে,মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরী করেন এক একটি সম্পূর্ণমূর্তি।তাই প্রত্যেক ছাত্র বা ছাত্রীর জীবনে একজন শিক্ষকের বিশেষ ভুমিকা থাকে, যার ভালবাসা সে কোন দিন ভুলতে পারে না।
আমার জীবনে আমার বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক মদন মোহন কোনার – মহাশয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমার জীবনাকাশে তিনি সন্ধ্যাবেলায় সন্ধ্যা তারা আর ভোর বেলায় শুকতারার মতোই সমুজ্জ্বল। তিনি না থাকলে আজ এই যে কলম ধরেছি সেটুকু ও বোধ হয় সম্ভব হতো না। আমি যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সেই আউশগ্ৰাম উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনিইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন।আরো অনেকশিক্ষকমহাশয়ছিলেনযাদের নাম না করলে এই শ্রদ্ধা নিবেদন অসম্পূর্ণথেকে যাবে তারা হলেন শিবদাস ঘোষ, সুভাষ চন্দ্র দে,বিপদতারণ চট্টোপাধ্যায় এবং বোলপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক স্বপন সরকার ,যারা আমাকে পুত্রবৎ স্নেহ দিয়ে চির ঋণী করে ছেন।
মদন বাবুর সঙ্গে আমার ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক ছাড়াও আর একটি সম্পর্ক আছে, তিনি হলেন আমার কাকা।বাড়িতে তার প্রচন্ড শাসনে অন্যথা করার উপায় ছিল না। তাই এক ই বয়সী বন্ধুরা যা করতে পারত আমরা ভাই বোনেরা তা করতে পারতাম না।খেলার সময় টুকু ছাড়া বাইরে আড্ডা দেওয়া ,অযথা ঘোরাঘুরি করার কোনউপায় ছিল না।সব কিছু সময়ে করতে হতো।যে অভ্যাস গুলো পরবর্তী জীবনে খুব কাজে লেগেছে।
ছাত্র হিসাবে আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না। যেহেতু কাকা ঐ বিদ্যালয়ের ই শিক্ষক ছিলেন তাই অন্যান্য শিক্ষক মহাশয়দের নেকনজরে ছিলাম।নেকনজরে ছিলাম তার অর্থ এই নয় যে বিশেষ কোন সুবিধা অনুদান হিসেবে পেতাম, বরং অসুবিধা ই হতো বেশী ।সব সময় চোখে চোখে থাকতাম,এদিক ওদিক করার কোন উপায় ছিল না। আমার কোন আচরণ বিসদৃশ হলে শুধু মদনবাবু কিছু বলতেন তাই না , সুভাষ বাবু কাছে ডেকে বুঝিয়ে দিতেন কেন এটা করা ঠিক হয় নি।মদন বাবুর পাঠদানের বিশেষ কৌশল, নিয়মানুবর্তিতা ,সততা,কোন বিষয় সম্পর্কে তার বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি তাকে
তাদের স্টাফ রুমে আলাদা আসনের অধিকারী করেছিল।
তার যে গুণটি আমাকেসবথেকে আকর্ষণ করেছিল তাহলো তার দানশীলতা । ভগবতীদেবী না থাকলে বিদ্যাসাগর যেমন ষোল আনা বিদ্যাসাগর হতেন কি না কে জানে তেমনি মদনবাবু র মার শিক্ষা না থাকলে তিনিএই গুণটি পেতেন না।কত গরীব , দরিদ্র ছাত্র ছাত্রী কে তিনি গোপনে সাহায্য করেছেন তা তারাই জানে যারা তার সাহায্য পেয়েছে।
যখন ই পরিচিত কারো সাথে সুভাষ বাবুর দেখা হয়
এখনও তিনি আমার বিস্তারিত খবর নেন। স্কুলের শিক্ষক মহাশয়দের এই ভালোবাসা যারা পায় তারা নিশ্চিত ভাবেই ভাগ্যবান। এরাই আমার জীবনের torch bearer এদের চরণে শত কোটি প্রণাম নিবেদন করা ছাড়া আর দেওয়ার কিছু নেই।