18/04/2024 : 6:24 AM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

|| শিক্ষাঞ্জলি || e-জিরো পয়েন্ট – ভাদ্র ১৪২৭

স্মৃতি


আদর্শবান

✒ সুনন্দ মন্ডল

মনে পড়ে সেই ক্লাস ফোরের কথা!
ভুল অংকে ঠিক চিহ্ন, আর ঠিক অংকে ভুল।

আমরা ঠিক অংক করেও কোথায় ভুল হল তা নিয়ে মাথায় ঠুকতাম কলম,
চিন্তা করে করে উত্তর সেই একই জায়গায়।
যারা ভুল করেও ঠিক পেল, তারা হাসল, ব্যঙ্গ করল গোটা ক্লাসে।

তারপর সকলের খাতা দেখা শেষ করে মাষ্টারমশাই যখন বললেন, “কই দেখি, এবার দাঁড়া তো!”
আমরা সবাই দাঁড়াতাম তখন আবার বলতেন, “যাদের অংকে ঠিক দেওয়া আছে তারাই কেবল দাঁড়া!”

আমরা ভুল চিহ্ন নিয়ে বসে পড়তাম।
আর মাষ্টারমশাই ভাঙা কঞ্চি নিয়ে ঠিক অংকের পাছায় ঘা কতক লাগিয়ে দিত।
ভুল অংকের পাশে দিত বাহবা।

বার্ষিক পরীক্ষা হল, বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেলাম,
প্রাইমারি পিছনে ফেলে সেকেন্ডারিতে।
লিভিং সার্টিফিকেট নিতে যাওয়ার সময় মাষ্টারমশাই সকলকে একজায়গায় ডেকে বললেন,
“জীবন অনেক বড়। অনেকগুলো অংকের সমষ্টি।”

“একটা অংক ভুল মানেই নতুন করে শুরু নতুন পদ্ধতি। জীবনের অংকটাও তেমনই।”

তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি!
মাষ্টারমশাই কেন এমন করতেন?
কেনই বা এমন বলতেন।

এতদিনের জীবনে কতটুকুই বা বুঝেছি,
তবু বলতে পারি এটাই!
যে জীবনে সঠিক কাজ করলেও কখনো কখনো ভুল করেই ফেলি,
তাই নতুন ভাবে জীবনকে সাজাতে চিন্তাশীল ও ধৈর্যশীল হতেই হবে।

আর ভুল করেও সঠিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা একদিন না একদিন ভুলের গাদে পড়ে থাকবে।
তখন জীবনে বেঁচে থাকার আশাটা নির্মূল হয়ে যাবে।

মাস্টারমশাইকে সেজন্য আজও মনে আছে,
তার মূল্যবান কথার উপলব্ধিতে স্বতন্ত্র আদর্শ আঁকতে পারি।

শিক্ষকদের বোধহয় এতটুকু আদর্শবান হতেই হয়।

Related posts

সাহিত্যের ব্ল্যাকবোর্ড আঝাপুরে

E Zero Point

হলদিয়ার গান্ধী আশ্রমে ছায়াঘেরা পাঠশালা

E Zero Point

জিরো পয়েন্ট রবিবারের আড্ডা ~ সুপর্ণা সেনগুপ্ত | রতন নস্কর | ডঃ সায়ন ভট্টাচার্য | মুহাম্মদ ইসমাইল | আব্দুল হিল শেখ

E Zero Point

মতামত দিন