25/04/2024 : 8:49 PM
ই-ম্যাগাজিনসাহিত্য

e-জিরো পয়েন্ট – আষাঢ় ১৪২৭ (আষাঢ়ে ভূতের  আড্ডা)

গল্প


শাঁখচুন্নীর সাথে একটি রাত

✒পরেশ নাথ কোনার
যে ঘটনার কথা বলছি সেটা ১৯৮০সালের ঘটনা।তখন বাংলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্ৰামের চিত্র ছিল একই। গ্রাম কিম্বা শহর গুলিকে ইঁট কাঠ পাথর এত বেশী নিবিড় ভাবে  আলিঙ্গন করে নি।গ্ৰাম গুলি গাছ গাছালি বাগানে ভরা ছিল।তখন কী গ্ৰাম কী শহর সর্বত্র ছেলেদের খেলার মাঠ ছিল।খেলা বলতে তখন ফুটবলের চর্চা এবং জনপ্রিয়তা ছিল প্রশ্নাতীত।মোহন বাগান – ইস্টবেঙ্গলের খেলা হলে লোকের মধ্যে আলোড়ন পড়ে যেত। গ্রামের
ক্লাব গুলোতে উচ্চ মানের ফুটবল চর্চা হতো।আমি দেখেছি আমার গ্ৰামের সাথে অন্য গ্ৰামের ফুটবল খেলা হলে সেদিন দিন মজুররা এমন কী বাড়ির কাজের লোকরা এক বেলা কাজ করে ফুটবল মাঠে নারী পুরুষ সবাই উপস্থিত হতো।ফুটবল নিয়ে ক্লাব গুলোতে একটা অদ্ভুত উন্মাদনা ছিল।তখন সরকার ক্লাব গুলোকে দু লাখ টাকা অনুদান দিত না। ছেলেদের নিজেদের চাঁদা দিয়ে ফুটবল, জার্সি,বুট কিনতে হতো।
          সমবয়সী ছেলেরা মিলে “স্বপ্নতরী”নামে একটা ক্লাব তৈরি করে ছিলাম আমরা আমাদের সোমাইপুর গ্রামে। ক্লাবের অনুশাসন মিলিটারী রুলকেও হার মানায়।ক্লাব সেক্রেটারী র কথা যে অমান্য করবে তাকে তার ফল ভোগ করতে হবে নিদারুণ ভাবে।ক্লাব তো আর শুধু ফুটবল কেন্দ্রিক হবে তা নয় , ক্লাবের সাংস্কৃতিক দিক ও থাকতে হবে।নাটক,গান-বাজনা এ গুলোও থাকতে হবে ।এর জন্যে তো প্রচুর টাকার দরকার।তার জন্য শুধু চাঁদা র উপর নির্ভর করলে চলবে না, অন্য উপায় দেখতে হবে।
তখনকার দিনে কোন কোন ক্লাব মাঠ পাহারা দিত,কোন কোন ক্লাব গ্রামে রাত পাহারা দিত। তেমনি একটি প্রস্তাব দিল ভাগ্যধর বলে একটি ক্লাব সদস্য।সেবার খুব খরা।মাঠ ঘাট পুকুর সব জল শূন্য। খাঁ পুকুরে জল ভরে দিতে পারলে ওরা ক্লাবকে মোটা টাকা ডোনেট করবে।মাঠে জল নেই অথচ পুকুর ভরা সম্ভব নয় তাই পুকুরের মালিক
আমাদের ক্লাবের ছেলেদের এটি অফার করেছে। উত্তম প্রস্তাব। প্রস্তাব পাশ হলো।ডিউটি রোস্টার তৈরী হলো।যে যে জায়গা গুলো তে ক্যানেলের বাঁধ কেটে জল বের করে নেয় সেই জায়গায় পাহারা দিতে হবে তাহলে একরাতেই
পুকুর ভরে যাবে।
        ক্যানেলটি এসেছে গ্ৰামের শ্মশান,কবর স্থানের পাশ দিয়ে। শ্মশান যেখানে সেখানে ই জল চোররা বাঁধ কেটে জল নামিয়ে নেয়। সুতরাং ঐ জায়গাটা ভালোভাবে পাহারা দিতে হবে । সেক্রেটারী স্বপন গোস্বামী ঠিক করে দিল দুজন সাহসী ছেলে ঐ জায়গায় পাহারা দেবে ।কারণ একে শ্মশান তার উপর যত রাত বাড়ে ততই ভূতের উপদ্রব বাড়ে।ঠিক হলো আমি ও উদয় ঠাকুর ঐ জায়গা পাহারা দেবো। সঙ্গে নিতে হবে জোরালো টর্চ,লাঠি ও একটি কোদাল।বাড়িতে বলা হলো নাটকের স্টেজ রিহার্সাল হবে সুতরাং আজ রাত টা ক্লাবেই থাকতে হবে।
             খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই মিলে অবনী কাকার দোকানে জড়ো হলাম তারপর যে যার জায়গায় চলে গেলাম।
          চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ধান মাঠ।ঝি ঝি পোকা র ডাক, সঙ্গে কোলা ব্যাঙের গম্ভীর ডাক। কোন কোন গাছ থেকে রাত চোরা পাখির ডাকে একটা ভয়ের পরিবেশ।তার উপর আগের থেকে শোনা শ্মশান ও কবর স্থান সম্পর্কে কাহিনী মনের মধ্যে কেমন যেন খচখচ করছিল।শোনা যায় অপমৃত্যু ঘটলে কিম্বা মরার সময় বেশী দোষ পেয়েছে অথচ তাদের গয়া দেওয়া হয় নি সেই সব ভূতরা সারা জায়গা ঘুরে বেড়ায়।এদের  মধ্যে শাঁখচুন্নী
খুব বিপদজনক ভূতনী।এরা মানুষের রক্ত চুষে খায়।এরা সাদা শাড়ি পরা,মাথায় আগুনের গোলা।
           আমি ও উদয় ঠাকুর গেলাম শ্মশানের কাছে ঐ জায়গাটায় । ভালো ভাবে বাঁধটি বেঁধে একটু দূরে একটা ঝোপের আড়ালে বিপরীত দিকে মুখ করে পিঠে  পিঠ ঠেকিয়ে বসলাম যাতে পিছন থেকে ভূত এসে ধরতে না পারে।ঝোপ থেকে মেঠো ইঁদুর বেরিয়ে এলো।উদয় আমার হাতটা চেপে ধরে রাম রাম রাম বলতে লাগলো।
রাত বাড়তে থাকে আমরা দুজন দুজনকে চেপে ধরে বসে আছি। হঠাৎ দূরে দেখা গেল সেই  শাঁখচুন্নী । সাদা শাড়ি, মাথায় আগুনের গোলা, একবার নেভে একবার জ্বলে।একবার বসে একবার ওঠে। কিছুক্ষণ পর অদৃশ্য হয়ে যায়।প্রায় মিনিট দশেক পর আবার দেখা যায়। মধ্যের ঐ
দশ মিনিট যে কি করে কেটেছে একমাত্র আমরাই জানি। হঠাৎ ঘুঙুরের শব্দ।
উদয়— এটা বোধহয় অন্য ভূত।
আমি—– চুপ, একদম চুপ।
উদয় —আমাদের গন্ধ পেয়েছে বোধ হয়।
আমি —- আসুক, আসতে দে। আমি “শুকতারা”য় পড়েছি
               ভূত বলে কিছু নেই।আলোতে ভূত থাকে না। টর্চ
             জ্বালবি না।
উদয় —- যদি গলায় ধরে ?
আমি —- তখন দেখবো ভূতের চেহারা।
আবার একটু দূরে সেই সাদা শাড়ি, মাথায় আলো, ঘুঙুরের শব্দ।বুকে তখন হাপরের শব্দ। আমরা প্রস্তুত।ভূত এলো বাঁধের সেই জায়গা টায়।নরম মাটি আস্তে আস্তে কাটতে লাগলো।জল দিয়ে সেচ করবে নিজের জমি।আমরা কোথা থেকে এত সাহস পেলাম কে জানে জয় মা শ্মশান কালী বলে উঠে দাঁড়িয়ে ভূতে মুখে টর্চের আলো ফেললাম। সে অঙ্গ ভঙ্গি করে ভয় দেখাবার চেষ্টা করলো।
মুখে সাদা কালো রং করে সাদা শাড়ি পরে সেই শাড়ির ভিতর থেকে লাইট জ্বালা,হাতে ঘুঙুর বাজিয়ে ভয় দেখানো।
আমি — কে ? মুখ খোল ।
উদয়—- নাহলে লাঠির বাড়ি  পড়বে মাথায়।
ভূতনী আস্তে আস্তে মুখের কাপড় সরালে দেখা গেল সে আসলে স্বপনের জ্ঞাতি সম্পর্কে কাকা।দিনের বেলা জল
নিতে গেলে লোকের সঙ্গে ঝগড়া ঝাঁটি করতে হয় ,জল ও বেশী পাওয়া যায় না।সে আমাদের রফার কথা শুনে ছিল । এক রাতে ই তার সমস্ত জমি সেচ হয়ে যাবে সে ধান্দা তেই তার এই ভূতনী সাজা।
       বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি ভূত বলে কিছু নেই।♦
◆এই সংখ্যাটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্য করুন নীচের কমেন্ট বক্সে।◆

Related posts

দৈনিক কবিতাঃ তোমার বিরহে

E Zero Point

নতুন বছরের শুরুতে পুরুলিয়ায় বৃত্তি প্রদান ও পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান

E Zero Point

পার্থিব দেহত্যাগ করলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক বেগম সুরাইয়া কামাল

E Zero Point

1 টি মন্তব্য

আব্দুল হিল শেখ June 21, 2020 at 8:05 am

অসাধারণ লাগলো। ভালো থাকবেন সকলে।

উত্তর

মতামত দিন